যে পাপে শাস্তি অবধারিত !
যে পাপে শাস্তি অবধারিত -
গীবত একটি কবিরাহ
গোনাহ
গীবত-এর সংজ্ঞা -
গীবত আরবি শব্দ যার অর্থ, পরনিন্দা, পরচর্চা
অসাক্ষাতে দুর্নাম করা, সমালোচনা করা, অপরের দোষ প্রকাশ করা, কুৎসা রটনা করা ইত্যাদি।
ইসলামি পরিভাষায় কারো অনুপস্থিতিতে অন্যের নিকট এমন
কোনো কথা বলা যা শুনলে সে মনে কষ্ট পায় তাকে গিবত বলে।
প্রচলিত অর্থে, অসাক্ষাতে কারো দোষ বলাকে গিবত বলে।
ইবনুল
আছীর রহ. বলেন, গীবত হল কোন মানুষের এমন কিছু বিষয় যা তার অনুপস্থিতিতে উল্লেখ করা,
যা সে অপছন্দ করে, যদিও তা তার মধ্যে
বিদ্যমান থাকে”।
রাসূলুল্লাহ্ সা. গীবতের পরিচয় দিয়ে বলেন:
গীবত হল তোমার ভাইয়ের এমন আচরণ বর্ণনা করা, যা সে অপছন্দ করে।
গীবত
করার পরিণাম -
আল্লাহ্
তা’আলা বলেনঃ ‘তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের
গোশত ভক্ষণ করবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করে থাকো’।
( সূরা হুজুরাত –
১২ )
অত্র আয়াত প্রমাণ করে যে, গীবত করা মৃত ব্যক্তির গোশত ভক্ষণ করার শামিল।
গীবত জাহান্নামে শাস্তি ভোগের
কারণ –
রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেনঃ “মিরাজ কালে আমি এমন
কিছু লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের
নখগুলি পিতলের তৈরি, তারা তা দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও
বক্ষগুলিকে ছিঁড়ছিল। আমি জিজ্ঞাস করলাম, এরা কারা হে
জিবরীল? তিনি বললেন, এরা
তারাই যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইজ্জত-আবরু বিনষ্ট করত”।
আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ .রা. বলেনঃ- (একদা) আমরা
নাবী কারীম সা. এর নিকটে ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তি উঠে চলে গেল। তার
প্রস্থানের পর একজন তার সমালোচনা করল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সা. তাকে বললেন,তোমার দাঁত খিলাল কর। লোকটি বলল, কি কারণে
দাঁত খিলাল করব? আমিতো কোন গোশত ভক্ষণ করিনি। তখন তিনি
বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছ
অর্থাৎ ‘গীবত’ করেছ।
গীবত করলে কবরে শাস্তি হয় :-
একদা রাসূলুল্লাহ্ সা. দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে তেমন বড় কোন অপরাধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছেনা (যা থেকে বেঁচে থাকা তাদের জন্য সহজ ছিল )। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, চুগলখোরী করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাবের ব্যাপারে অসতর্কতার কারনে। (পেশাবের ছিটা থেকে বাচত না )
অপর হাদিসে চুগলখোরীর পরিবর্তে গীবত করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
গীবতের ক্ষতি সমূহ:
(১) গীবতকারীর দোয়া কবুল হয় না।
(২) আমলনামা হতে নেকি বা সোয়াব কমে যায়।
(৩) আমলনামায় পাপ বৃদ্ধি পায়
(৪) নেক আমল কবুল হয়না।
(৫) বিশ্বস্থতা বিনষ্ট হয়।
(৬) গীবত শুনলে মনে ক্রোধ বা ক্ষোভ জমা হয়।
(৭) আল্লাহ এবং আল্লাহর
রাসুলের সাথে বিদ্রোহ করা হয়।
(৮) মুসলমানদের প্রতি জুলুম করা হয়।
(৯) মানুষ অত্যধিক গীবত করলে মুনাফেকে পরিণত হয়।
(১০) কবরে অত্যধিক আযাব হয়।
(১১) পরকালের হিসাব কঠিন হয়ে যাবে।
( ১২ ) ভ্রাতৃত্ববন্ধন নষ্ট হয়।
গীবত প্রতিহতকরণ -
ইমাম নববী রহঃ বলেন,
কেউ যদি কোনো মুসলিমের নামে গীবত শুনতে পায়, তার উচিত তার মোকাবেলা করা এবং গীবতকারীকে তিরস্কার করা ৷ যদি মুখ
দিয়ে তা করতে না পারে, তবে কাজের দ্বারা তাকে থামাতে হবে
( এমন কিছু করা উচিত যেন তার দ্বিমত প্রকাশ পায়) আর সে
যদি কথা বা কাজ কোনোটার দ্বারাই কিছু করতে না পারে, তবে
তার উচিত সেখান থেকে চলে যাওয়া ৷
বাস্তবতা -
আমরা যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করি , ইসলামী বিধান মেনে চলার চেষ্টা করি ৷ আফসোসের বিষয় হলো, আমরা যে পাপ টা করতে খুব বেশি আনন্দ পায় তা হলো গীবত!
ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অপর ভাইয়ের গীবত করছি ৷ তার সম্মান হানি করছি ৷ এটা পারস্পারিক সম্পর্ক নষ্ট করছে। যা আলেম থেকে নিয়ে শুরু করে সাধারণ জনগণের মাঝে বিদ্যমান ৷ অথচ এটা হারাম ৷ এর কারণে পরিবার, সমাজ তথা সর্বত্র বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে গীবতের মত জঘণ্য পাপ
থেকে বিরত থাকার তাওফীক দিন ৷
আমীন
No comments
Post a Comment