যে আমলে রিজিক বৃদ্ধি হয়!

যে  আমলে রিজিক বৃদ্ধি  হয়!

মুসলিম মাত্রেই বিশ্বাস করেন যে তার আয় উপার্জন, জীবন মৃত্যু, এবং সৌভাগ্য দুর্ভাগ্য ইত্যাদি মহান আল্লাহ মানব সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়- উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে বসে না থেকে 'এর জন্য বৈধপন্থায় নিজের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প- চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু। এজন্য একজন মুসলিম তার বরাদ্ধকৃত রিজিক অন্বেষণ করবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে। আর সেসব উপায় নিয়েই আজকে আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

هُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَكُمُ الۡاَرۡضَ ذَلُوۡلًا فَامۡشُوۡا فِیۡ مَنَاكِبِهَا وَ كُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِهٖ ؕ وَ اِلَیۡهِ النُّشُوۡرُ 

তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিযক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর, নিকটই পুনরুত্থান।

     [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১৫)

১. তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা।

তাকওয়া আরবি শব্দ এর অর্থ ভয় করা, বেঁচে থাকা, রক্ষা করা ইত্যাদি তাকওয়া এর পরিচয়   বিশিষ্ট সাহাবী উবাই ইবনে কাব রা. দিয়েছেন-

একবার উমর রা. উবাই ইবনে কাব রা. -কে জিজ্ঞেস করলেন, তাকওয়া কী?  উবাই ইবনে কাব রা. বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন?  উমর রা. বলেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব রা. বলেন, (কাঁটা বিছানো পথে) আপনি কিভাবে হেঁটেছেন? উমর রা. বলেন, খুব সাবধানে কষ্ট সহ্য করে হেঁটেছি, যাতে আমার শরীরে কাঁটা বিঁধে না যায়। উবাই ইবনে কাব রা. বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া।

     (তাফসিরে কুরতুবি, ইবনে কাসির)

তাওয়াক্কুল আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো- আল্লাহর উপর ভরসা করা। ইসলামে তাওয়াক্কুল হল, মানুষ কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবে আর ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করবে এবং তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখবে।

আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

  مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّهٗ مَخۡرَجًا

  • জবর৬وَّ یَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَحۡتَسِبُ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَكَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖ ؕ قَدۡ جَعَلَ اللّٰهُ لِكُلِّ شَیۡءٍ قَدۡرًا 

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

 (সূরা আত- তালাক, আয়াত: ২-৩) 

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহকে সত্যিকার অর্থে ভয় করবে এবং তাঁর উপর ভরসা করবে তিনি বান্দাকে তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। বান্দার কাজ হলো হালাল সন্দেহমুক্ত পন্থায় রিজিক অন্বেষণ করা।

তাওয়াক্কুল সম্পর্কে হাদীসে এসেছে

عَن عمر بن الْخطاب قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُونَ عَلَى اللَّهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ تَغْدُو خِمَاصًا وَتَرُوحُ بِطَانًا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ

উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, [রাসূল (সা.) বলেছেন] যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থ ভরসা কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিযক দান করবেন, যেরূপ পাখিকে রিযক দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে (বাসায়) ফিরে আসে।

(তিরমিযী ইবনু মাজাহ)

তাকওয়া চারটি বিষয়ের সমন্বয়ে হয়এক: আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা, দুই: অল্পে তুষ্ট থাকা, তিন: কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা, চার: পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

২. তাওবা ও ইস্তেগফার করা:

অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিযিক বাড়ে। তাওবা ইস্তেগফার এর মাধ্যমে আল্লাহ ক্রোধ দূর হয় এবং বান্দা আল্লাহ নৈকট্য লাভ করে। আল্লাহ নিকট অধিক পছন্দ করেন বান্দা ভুল করে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুক। 

আল্লাহ তা'আলা তাঁর অন্যতম নবী রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,

فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّكُمۡ ؕ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا

یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡكُمۡ مِّدۡرَارًا 

وَّ یُمۡدِدۡكُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّكُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّكُمۡ اَنۡهٰرًا 

আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন আর তোমাদেরকে ধন- সম্পদ সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ- বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী- নালা।

 (সুরা নূহ, আয়াত: ১০-১২)

 রাসূলুল্লাল্লাহ্ সা. বলেন,

من أكثر الاستغفار جعل الله له من كل هُم فَرَجًا وَمِنْ كُلِّ ضيق مخرجًا ورزقه من حيث لا يحتسب له

যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।

[বাইহাকী। ৬০৬। হাকেম, মুস্তাদরাক: ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।)

 ৩. আত্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা:

আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিযিক বাড়ে। যেমন: আনাস ইবন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন,

من سره أن يبسط له في رزقه أو يتسأله في أثره فليصل رحمة

যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।

(বুখারী। ৫৯৮৫, মুসলিম ৪৬৩৯)

আফসোসের বিষয় হলো- স্বার্থের কারণে বর্তমানে আত্মীয়তার সম্পর্কে টিকে রাখা অত্যান্ত কঠিন হয়ে পড়েছে এটা হয়ে পরকালের চেয়ে দুনিয়াকে অধিক প্রাধান্য দেয়ার কারণে।  

৪. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা

আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বৃদ্ধি পায় দান করার মাধ্যমে দাতার রিজিক আল্লাহ তায়ালা বৃদ্ধি করে দেন।

 আল্লাহ তা'আলা বলেন,

قُلۡ اِنَّ رَبِّیۡ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ وَ یَقۡدِرُ لَهٗ ؕ وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ وَ هُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ 

বল, নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশ্ত করেন এবং সংকুচিত করেন আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা

 (সূরা আস-সাবা, আয়াত: ৩৯)

৫. হজ্জ ও উমরাহ পরপর আদায় করা:

কোন ব্যক্তি  তার উপার্জিত বৈধ অর্থ দ্বারা হজে গমন করলো এবং সেখানে যেয়ে কোন প্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করলো না সে ব্যক্তি ঠিক তেমন নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসলো যেমন নিষ্পাপ অবস্থায় মায়ের পেট থেকে সে পৃথিবীতে আগমন করেছিলো  হজ ও উমরা পাপ মোচনের সাথে সাথে আদায়কারীর অভাব অনটন দূর করে দেয় এবং সম্পদ বাড়িয়ে দেয়।

 সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,

تابعوا بين الحج والعمرة فانهما ينفيان الفقر و الذنوب كما ينفي الكير خبث الحديد و الذهب و الفضة وليس للحجة المبرورة ثواب الا الجنة .

তোমরা হাজ্জ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।

 (তিরমিযী। ৮১৫ , নাসাঈ। ২৬৩১)

 ৬. দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা।

মুস'আব ইবন সা'দ রাদিআল্লাহু আনহ যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সা. বললেন,

من تنصرون وترزقون إلا يضعفاتكم

তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিযিক প্রদান করা হয়।

  [বুখারী: ২৮৯৬]

. ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হওয়া:

কোন বান্দা যখন একাগ্রচিত্ত আল্লাহর ইবাদতের জন্য মনোনিবেশন করে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে রিজিকের টেনশন থেকে মুক্ত করেন।

যেমন হাদীসে এসেছে -

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلاَّ تَفْعَلْ مَلأْتُ يَدَيْكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ ‏"‏ ‏.

আবূ হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদাতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুইহাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করবো না।

 [তিরমিযী: ২৬৫৪। মুসনাদ আহমদ: ৮৬৮১: ইবন মাজা ৪১০৭]

৮. বিয়ে করা:

 বিবাহ মানব বিস্তার ও সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনের বৈধ মাধ্যম। বিবাহের মধ্যে বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে।  বিবাহের মাধ্যমেই আল্লাহর একজন বান্দা বা বান্দী দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করতে পারে। বর্তমানে দুনিয়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিবাহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে যিনা-ব্যভিচার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা হলো বিবাহ করলে বরকত বৃদ্ধি পায়। 

 আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ اَنۡكِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡكُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَ اِمَآئِكُمۡ ؕ اِنۡ یَّكُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِهِمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۳۲﴾

আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় মহাজ্ঞানী। 

(সূরা নূর, আয়াত নং ৩২)

 আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা হলোকেউ ঈমান-আমল রক্ষার্থে বিবাহ করবেন আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে তার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন এজন্য  অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থা করা

বিবাহ সম্পর্কে হাদীস

. আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা মহান আল্লাহর কর্তব্য। প্রথমজন হলেন আল্লাহর পথে জিহাদ পালনকারী। অতঃপর মুক্তিপণ আদায়ে কাজ করা চুক্তিবদ্ধ দাস এবং পবিত্র জীবনের লক্ষ্যে বিবাহকারী।

 (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৫৫)

. সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আদমসন্তানের সাফল্যের কারণ তিনটি : সতীসাধ্বী নারী, উপযুক্ত বাসস্থান উপযুক্ত বাহন। আদমসন্তানের দুর্ভাগ্যের কারণও  তিনটি : মন্দ নারী, অনুপযুক্ত বাসস্থান অনুপযুক্ত বাহন।

(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : /১৬৮)

. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুআনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যে ব্যক্তির দ্বীনদারী নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ; তোমাদের কাছে সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও। তা যদি না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

 (তিরমিজি)

সুতরাং অত্র বিবরণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিবাহের মাধ্যমে বরকত লাভ হয়।    

একটা বিষয় উল্লেখ্য তা হলো- হাদীসে রাসূল সা. বিবাহের ক্ষেত্রে দ্বীনকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা ছেলে অর্থকে আর মেয়ে হলে তার সৌন্দর্যতা প্রাধান্য দিচ্ছি । যদি তার মধ্যে দ্বীন থাকুক বা না থাকুক। ফলে আমাদের পারিবারিক অশান্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তালাক তো এখন আমাদের নিকট অতি সাধারণ একটি বিষয় হয়ে গেছে।

রাসূল সা. এর হাদীসের ভাষ্যমতে, দ্বীনদার পাত্র কোন দ্বীনদার পাত্রীকে বিবাহের প্রস্তাব দিল, কিন্তু পাত্রী পক্ষ সেটাকে এড়িয়ে গেল অর্থাৎ দ্বীনদার পাত্র গরিব হওয়ার কারণে প্রত্যাখ্যান করলো তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।   বর্তমানে হচ্ছেও তাই। পাত্রের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হলো তার অর্থ বা উপার্জন চাই সেটা বৈধ বা অবৈধ হোক। আর পাত্রীর যোগ্যতা হলো তার চেহারা বা রুপ।  আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।

. রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা

فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡكُرُوا اللّٰهَ كَثِیۡرًا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰﴾

আল্লাহতাআলা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।

  ( সূরা জুমা, আয়াত নং ১০)

   রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।

(বুখারি, হাদিস: ,৪৮০; মুসলিম, হাদিস: ,০৪২)

 তাই আসুন, রিজিকের জন্য ব্যস্ত না হয়ে বরং সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যস্ত হোন, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করুন তিনি আপনার রিজিকের ব্যবস্ত করে দিবেন রিজিকের ফায়সালা উপর থেকে হয় আর আমাদের কাজ হলো নিজেদের সাধ্যমত বৈধপন্থায় তা অর্জনের চেষ্টা করা

 আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন

   আমিন

 

সংকলনে,

       এইচ. এম. হুজ্জাতুল্লাহ

  (বি.এ - অনার্স  , এম.এ - মাস্টার্স 

 আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


No comments

Powered by Blogger.