সুশিক্ষার অভাবই মুসলিম জাতীর অধপতনের কারণ!

 

                        সুশিক্ষার অভাবই মুসলিম জাতীর অধপতনের কারণ!

                                                                    এইচ, এম, হুজ্জাতুল্লাহ 

মুসলিম জাতী পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে ছিল, সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে ছিল যতদিন তারা দ্বীনকে আকড়ে ধরে ছিল এবং  জ্ঞানের চর্চা অব্যহত রেখেছিল। অতপর,,,,,,,,

একজন মুসলিম প্রথমত যে বিষয়ে পড়া শুরু করবে।

اقرأ باسم ربك الذي  خلق  خلق الانسان من علق    اقرأ  وربك الاكرم  الذي علم بالقلم  علم الانسان  مالم يعلم

তুমি পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিন্ড হতে। তুমি পড়। আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।  তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।

 সূরা আলাক্ব, আয়াত নং -

 শিক্ষার আবশ্যকীয়তা : 

রাসূল সা. বলেন, 

طلب العلم فريضة علي كل مسلم

দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

فاعلم انه لا اله الا الله  واستغفر لذنبك  وللمؤمنين والمؤمنات  والله يعلم متقلبكم ومثواكم .

অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। 

সঠিক জ্ঞান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ

আল্লাহ যার কল্যাণ চান তার অন্তরকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করেন। মহান আল্লাহ বলেন,

فَمَنْ يُرِدِ اللهُ أَنْ يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا،

অতএব আল্লাহ যাকে সুপথ প্রদর্শন করতে চান, তিনি তার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ ও সংকুচিত করে দেন’    (আন‘আম ৬/১২৫)

আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন

مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ وَإِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللهِ يُعْطِي

আল্লাহ তা‘আলা যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন। আল্লাহই দানকারী আর আমি বণ্টনকারী’

সঠিক জ্ঞান ছাড়া সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।

 সঠিক জ্ঞান আবার দু’প্রকার ।

   যথা:               

                   এক,  কল্যাণকর     

                   দুই,  অকল্যাণকর

কল্যাণকর জ্ঞানার্জনে করণীয়:

আল্লাহর কাছে চাইতে হবে যেমন: রাসূল সা. বলতেন

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিজিক এবং কবুল হওয়ার যোগ্য কর্মতৎপরতা প্রার্থনা করি। (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

অকল্যাণকর জ্ঞানের ভয়াবহতা:

১। উগ্রতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।

২। সম্মানিতদের অসম্মান করা

৩। পারস্পারিক হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা

 ৪। আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়

৫। দ্বীনের মাঝে মতানৈক্য তৈরী করা।

 আল্লামা ইকবাল বলেন,

دين كافر تدير جهاد   ودين ملا في سبيل الله فساد

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন,

বিশ্ব যখন এগিয়ে চলছে                     আমরা তখনো বসে।

বিবি তালাকের ফতওয়া খুজছি                        ফেকাহ ও হাদীস চষে!!

হানাফী-শাফেয়ী-মালেকী-হাম্বলীর                       তখনো মেটেনি গোল,

এমন সময় আজরাইল আসিয়া                             হাকিল তলপি তোল।

বাহিরের দিকে মরিয়াছি যত                                ভিতরের দিকে তত।

গুণিতিতে মোরা বাড়িয়া চলেছি                             গরু ছাগলের মত। 

সঠিক জ্ঞান না থাকলে সমাজের অবস্থা কেমন হবে?

রাসূল সা. বলেন,

إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا

‘‘আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইল্মকে টেনে বের করে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইল্ম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবেনা তখন লোকেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বিনা ইলমেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরকেও গোমরাহ করবে’’

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ

‘‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে’’ এখানে ইল্ম বলতে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান উদ্দেশ্য।

বর্তমানে শিক্ষার আড়ালে গভীর ষড়যন্ত্র!  

মুসলিমদের ইমান যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে

 ১। মানুষের উৎপত্তি বানর থেকে !

২। ইসলাম শিক্ষা বইয়ের মলাটে দেবীর ছবি

৩। পাঠ্য বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কে উৎসাহ প্রদান

ট্রান্সজেন্ডার কী?

Transgender, ট্রান্সজেন্ডার) হল সেসব ব্যক্তি যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে ভিন্ন। 

ট্রান্সজেন্ডারবাদ বলে, ‘কোন নারীর নিজেকে যদি পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ। যদিও তার মাসিক হয়, সে গর্ভবতী হয়, শারীরিকভাবে সে হয় ১০০% সুস্থ। নিজেকে পুরুষ মনে করা নারী যদি সন্তানের জন্ম দেয়, তাহলে সেটা ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের ভ্রান্তির প্রমাণ না। বরং ট্র্যান্সজেন্ডারবাদের চোখে এটাই প্রমাণ করে যে, 'পুরুষও সন্তান জন্ম দিতে পারে!

জাতীয় শিক্ষাক্রম  পাঠ্যপুস্তক বোর্ড NCTB প্রণীত  সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস  সামাজিক বিজ্ঞান  বইয়ে ৩৯-৪৪ পৃষ্ঠায় শরীফার গল্প শিরোনামের লেখায় সরাসরি যৌন  মানসিক বিকৃতির সবক দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

 গল্পে শরীফা নামে একজন ব্যক্তি বলছেছোটবেলায় সে ছেলে ছিল। তার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আস্তে আস্তে সে যখন বড় হলো নিজেকে সে তখন মেয়ে ভাবতে শুরু করলো। মেয়েদের মতো আচরণ করতে লাগলো। এটাই নাকি তার ভালো লাগে। বইয়ের ৪০  নং পৃষ্ঠায় বলা হচ্ছে-

আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে..."

৪২ এবং ৪৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,

আমরা যে মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখেই কাউকে ছেলে বা মেয়ে বলছিসেটা হয়তো সবার ক্ষেত্রে সত্যি নয়।

ট্র্যান্সজেন্ডার নামক বিকৃত মতবাদের প্রধান দাবিগুলো হল-

ক।   মানুষের পরিচয় নির্ভর করে তার অনুভূতি আর মনের চাওয়ার উপর। নিজেকে সে যা মনে করে সেটাই তার পরিচয়।  জন্মগত দেহ যা- হোক না কেননিজেকে যে নারী দাবি করবে তাকে নারী বলে মেনে নিতে হবে। যদিও তার মাসিক হয়সে গর্ভবতী হয়শারীরিকভাবে সে থাকে শতভাগ সুস্থ। নিজেকে যে পুরুষ দাবি করবে তাকে আইনী  সামাজিকভাবে মেনে নিতে হবে পুরুষ হিসেবে।

খ।   মানুষ ইচ্ছেমতো নারী বা পুরুষের পোশাক পরবেইচ্ছেমতো ওষুধ আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিজের দেহকে বদলে নেবে। কেউ যদি অস্ত্রোপচার না করেই নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করেতাও সবাইকে মেনে নিতে হবে।

গ।    সকল উদ্ভট দাবীর ব্যাপারে রাষ্ট্র  সমাজ কোনো বাঁধা দিতে পারবে না। বরং  মানবাধিকারের নামে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবে  ধরনের মানুষকে দিতে হবে আপনার ট্যাক্সের টাকায় বিশেষ সুবিধা। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদম ছোটবেলা থেকে সবাইকে শেখাতে হবে যেমানুষের মনটাই গুরুত্বপূর্ণদেহ না। 

ঘ।   মতবাদের অবধারিত ফলাফল হলো  সমকামিতা  বিকৃত যৌনতা। এগুলোকেও অধিকারের নামে মেনে নিতে হবেস্বীকৃতি দিতে হবে।

 মতবাদের স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ রাস্তার একজন লম্পট ছেলে নিজেকে মেয়ে দাবী  করে আপনার মেয়ের পাশাপাশি বসে ক্লাস করতে পারবে। একই টয়লেটএকই কমনরুম ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। হোস্টেলে বা হলে থাকতে পারবে একই রুমে। কোন সুস্থ সমাজ কি এমন অবস্থা মেনে নিতে পারে?

দৈনিক ইত্তেফাকে ৫ই ডিসেম্বর২০২৩ তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একজন সরকারী কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়েছে,

ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার  সুরক্ষা আইন ২০২৩ শীর্ষক আইন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই পাস করা হবে বলে জানান সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ। তিনি বলেননতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাস করারা জন্য আমরা কাজ করছি।

(সম্পত্তিতে অধিকার পাবেন ট্রান্সজেন্ডার সন্তানরা, দৈনিক ইত্তেফাক,.১২.২০২৩)

দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে শারমিন আক্তার ঝিনুক ওরফে জিবরান সওদাগর নামে এক নারীর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এই নারী নিজেকে ট্র্যান্সজেন্ডার বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তার বক্তব্য

আমি ছিলাম নারী। মাসিক হওয়াসহ সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল কিন্তু যত বড়          হচ্ছিলামবুঝতে পারছিলাম আমি পুরুষদের চেয়ে নারীর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছি।  একটা সময় একজন মেয়ের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক হয়। চার বছর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই মেয়ে চলে যাওয়ার পর মনে হয়আমি পুরুষ হলে তো  এভাবে চলে যেতো না।…” 

বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের করুণ অবস্থা:

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লাঞ্চিত ও অত্যাচারিত জাতী হলো মুসলিম জাতী!

এর থেকে ফিরে আসার জন্য করণীয় তিনটি।

যথা:

এক, স্বীয় দ্বীনের পথে ফিরে আসা – ইসলামের আদেশ-নিষেধকে জীবনের সকল স্তরে বাস্তাবায়ন করা।

দুই, মতানৈক্য না করা বরং ঐক্যবদ্ধ জীবন তথা তাওহিদ ভিত্তিক জাতী গঠন করা।

তিন, জ্ঞান সাধনা করা – দ্বীন ও দুনিয়াবী জ্ঞানে নিজেকে সমৃদ্ধ করা।

No comments

Powered by Blogger.