সঠিক আক্বীদাই পরকালীন জীবনে মুক্তির পাথেয়
সঠিক আক্বীদাই পরকালীন জীবনে মুক্তির পাথেয়
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলূকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ পেশ করে আক্বীদা বা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই। ইহা এমন এক ভিত্তি, যাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার সার্বিক জীবন পরিচালনার গতিপথ নির্ধারণ করে। আক্বীদা বা বিশ্বাস যার বিশুদ্ধ নয় তার সম্পূর্ণ জীবনটাই বৃথা। কারণ মানব জীবনের মূল চাবিকাঠি হল তার আক্বীদা বা বিশ্বাস; যার আলোকে মানুষ তার সকল কর্ম সম্পাদন করে থাকে। ইহা এমন এক অতুলনীয় শক্তি, যার উপর ভর করে নিজের জীবনটুকু বিলিয়ে দিতেও সে কুণ্ঠাবোধ করে না। ভিত্তি স্থাপন ব্যতীত কোন বিল্ডিং বানানো যেমন অসম্ভব; তেমনি বিশুদ্ধ আক্বীদা ব্যতীত নিজেকে মুসলিম দাবী করাও অসম্ভব। প্রতিটি কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদা বা বিশ্বাস থেকে নির্গত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। মানবজাতির যাবতীয় পথভ্রষ্টতার মূলে রয়েছে তার মৌলিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুত হওয়া। তাই সঠিক আক্বীদাই পরকালীন মুক্তির একমাত্র উপায়। অতএব বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে জানা অপরিহার্য।
আক্বীদার পরিচয়
শাব্দিক অর্থ : عقيدة (আক্বীদা)
শব্দটি আরবী عقدة (উক্বদাতুন)
শব্দ থেকে উদ্গত। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে-
গিরা বা বাঁধন। যেমন কুরআনে বর্ণিত হয়েছে عُقْدَةُ النِّكَاحِ অর্থাৎ ‘বিবাহের বাঁধন’ (বাক্বারাহ ২/২৩৭)।
পারিভাষিক অর্থ : সাধারণভাবে সেই সুদৃঢ় বিশ্বাসকেই আক্বীদাহ বলা হয়; যার উপর ভিত্তি করে মানুষ তার জীবন পরিচালনা করে। আর ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায়-
আল্লাহর রুবূবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত ও আসমা ওয়াছ ছিফাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। তাঁর ফেরেশতামন্ডলী, নবী-রাসূলগণ, তাঁদের উপর নাযিলকৃত কিতাব সমূহ, আখেরাত বা পরকাল এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর সন্দেহ মুক্ত দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।
সঠিক আক্বীদা পোষণের গুরুত্ব
ক > আক্বীদা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের প্রধান স্তম্ভ : আক্বীদা তথা আল্লাহর একত্বে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের প্রথম স্তম্ভ। ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ
شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ
وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। ১- আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২- ছালাত ক্বায়েম করা। ৩- যাকাত আদায় করা। ৪- হজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫- রামাযানের ছিয়াম পালন করা’।
বুখারী হা/৪, ‘ঈমান’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ বুখারী; মুসলিম হা/১৬; মিশকাত হা/৩।
অতএব ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রধান মাধ্যম হ’ল, ছহীহ আক্বীদা; যা পরকালীন মুক্তির সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হাতিয়ার।
খ > বিশুদ্ধ আক্বীদাই কুরআন মানার মাধ্যম : আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করে ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান অহী মারফত নাযিল করেছেন। মানুষ তার সার্বিক জীবন কিভাবে পরিচালনা করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সম্পর্কে কেমন আক্বীদা পোষণ করবে? এর সবকিছুই কুরআনে যথাযথভাবে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনের এমন কোন সূরা নেই যেখানে তাওহীদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। তাই বলা যায় যে, সম্পূর্ণ কুরআনই তাওহীদ। কেননা কুরআনের সর্বত্রই আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং আল্লাহর সাথে কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে শরীক করা থেকে বিরত থেকে এক আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। অথবা তাতে আল্লাহর একনিষ্ঠ তাওহীদপন্থী বান্দাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে উত্তম প্রতিদান দানের কথা বলা হয়েছে এবং তাঁর নাফরমান কাফির মুশরিকদের শাস্তির সংবাদ দেওয়া হয়েছে। অথবা তাতে পূর্ববর্তী নবীগণের একনিষ্ঠ অনুসারীদের উপর আল্লাহর সাহায্যের কথা বলা হয়েছে এবং নবীগণকে অস্বীকারকারীদের উপর আল্লাহর নাযিলকৃত গযবের কথা বলা হয়েছে। যেমন- পবিত্র কুরআনে নূহ আ., হুদ আ., ছালেহ আ., ইবরাহীম আ. এর কওমের উপর আনীত সাহায্য ও শাস্তির কথা বিবৃত হয়েছে। অথবা তাতে হালাল ও হারামের কথা বলা হয়েছে, যা তাওহীদের হক সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আল্লাহর তাওহীদপন্থী বান্দারা কুরআনে বর্ণিত হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম বলে বিশ্বাস করবে। হালাল উপার্জন করবে এবং হারাম উপর্জন থেকে যেকোন মূল্যে বিরত থাকবে। অতএব বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণের মাধ্যমেই পূর্ণরূপে কুরআন মানা সম্ভব।
গ > বিশুদ্ধ আক্বীদা ইসলামে প্রবেশের একমাত্র মাধ্যম :
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছেন। এতদভিন্ন কোন দ্বীন আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ
الْإِسْلاَمِ دِيْنًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِيْ الْآخِرَةِ مِنَ
الْخَاسِرِيْنَ- ‘
যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন অন্বেষণ করবে তার থেকে তা কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।
সুরা আলে-ইমরান ৩/৮৫
আর ইসলামে প্রবেশের একমাত্র মাধ্যম হ’ল আক্বীদা ছহীহ হওয়া। কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয় হ’ল আক্বীদাহ। ভ্রান্ত আক্বীদা বা বিশ্বাসই মানুষকে পথভ্রষ্ট করে; এমনকি ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
যেমন-
১ . আক্বীদাগত কারণে একজন মানুষ তার সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে নিজ হাতে বানানো মূর্তির পূজা করে, তাকেই পরকালে নাজাতের অসীলা মনে করে, তার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী নিজ সন্তান হ’লেও তাকে হত্যা করার মত ঘৃণিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইবরাহীম আ. মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাঁর পিতা কর্তৃক হত্যার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। আল্লাহর বিশেষ রহমতে আগুনের প্রচন্ড তাপ তাঁর জন্য শীতল ও আরামদায়ক হয়েছিল। অথচ ঐ সকল মূর্তি পরকালে তাদের কোনই উপকার করতে পারবে না; বরং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ
آلِهَةً لِيَكُوْنُوْا لَهُمْ عِزًّا، كَلاَّ سَيَكْفُرُوْنَ بِعِبَادَتِهِمْ
وَيَكُوْنُوْنَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا-
তারা আল্লাহ ব্যতীত বহু মা‘বূদ গ্রহণ করেছে, যাতে তারা তাদের সাহায্যকারী হ’তে পারে। কখনই নয়, তারা তাদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে এবং তাদের বিপক্ষে চলে যাবে’।
সুরা মারইয়াম ১৯/৮১-৮২
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا
ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ أَشْرَكُوْا مَكَانَكُمْ أَنْتُمْ وَشُرَكَاؤُكُمْ
فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ وَقَالَ شُرَكَاؤُهُمْ مَا كُنْتُمْ إِيَّانَا
تَعْبُدُوْنَ- فَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيْدًا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ إِنْ كُنَّا
عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِيْنَ-
‘আর যেদিন আমি তাদের সকলকে একত্রিত করব, অতঃপর যারা শিরক করেছে তাদেরকে বলব, তোমরা ও তোমাদের শরীকরা নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে যাও। অতঃপর আমি তাদেরকে আলাদা করে দিব। তখন তাদের শরীকরা বলবে, তোমরা তো আমাদের ইবাদত করতে না। সুতরাং আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের মাঝে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট। আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের ইবাদত সম্পর্কে গাফেল ছিলাম (জানতাম না।
ইউনুস ১০/২৮-২৯
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَقِيلَ ادْعُوْا شُرَكَاءَكُمْ
فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَهُمْ وَرَأَوُا الْعَذَابَ لَوْ أَنَّهُمْ
كَانُوْا يَهْتَدُوْنَ- ‘
আর বলা হবে, তোমরা তোমাদের দেবতাগুলোকে ডাক, অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, তখন তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর তারা আযাব প্রত্যক্ষ করবে। হায়! এরা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হ’ত’
(কাছাছ ২৮/৬৪)।
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَيَوْمَ يَقُوْلُ نَادُوْا
شُرَكَائِيَ الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيْبُوْا لَهُمْ
وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ مَوْبِقًا - وَرَأَى الْمُجْرِمُوْنَ النَّارَ فَظَنُّوْا
أَنَّهُمْ مُوَاقِعُوْهَا وَلَمْ يَجِدُوْا عَنْهَا مَصْرِفًا-
‘আর যেদিন তিনি বলবেন, তোমরা ডাক আমার শরীকদের, যাদেরকে তোমরা (শরীক) মনে করতে। অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আমি তাদের মাঝে রেখে দিব ধ্বংসস্থল। আর অপরাধীরা আগুন দেখবে। অতঃপর তারা নিশ্চিতরূপে জানতে পারবে যে, নিশ্চয়ই তারা তাতে নিপতিত হবে এবং তারা তা থেকে বাঁচার কোন পথ খুঁজে পাবে না।
’কাহাফ ১৮/৫২------,
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَلَقَدْ جِئْتُمُوْنَا فُرَادَى
كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُمْ مَا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ
ظُهُوْرِكُمْ وَمَا نَرَى مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ
فِيْكُمْ شُرَكَاءُ لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَا كُنْتُمْ
تَزْعُمُوْنَ-
‘আর নিশ্চয়ই তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছ, যেরূপ আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম এবং আমি তোমাদেরকে যা দান করেছিলাম, তা তোমরা ছেড়ে এসেছ তোমাদের পিঠের পেছনে। আর আমি তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না, যাদেরকে তোমরা মনে করেছিলে যে, নিশ্চয়ই তারা তোমাদের মধ্যে
(আল্লাহর)
অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের পরষ্পরের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে, তা তোমাদের হ’তে হারিয়ে গেছে’।
আন‘আম ৬/৯৪
তিনি অন্যত্র বলেন,
إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُوْنَ
مِنْ دُوْنِ اللهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنْتُمْ لَهَا وَارِدُوْنَ، لَوْ كَانَ
هَؤُلاَءِ آلِهَةً مَا وَرَدُوْهَا وَكُلٌّ فِيْهَا خَالِدُوْنَ
‘তোমরা এবং আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন, তোমরা সকলেই এতে প্রবেশ করবে। যদি এরা ইলাহ হ’ত তাহ’লে এরা জাহান্নামে প্রবেশ করত না, তাদের সকলেই এতে স্থায়ী হবে’।
আম্বিয়া ২১/৯৮,-৯৯
২ . আক্বীদাগত কারণেই পিতা-মাতা অথবা সন্তান-সন্ততির মৃত্যুর পরে তাকে কবরস্থ করার পরিবর্তে আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে তাকে অস্তিত্বহীন করার চেষ্টা করা হয়। তারা মনে করে এরূপ করলে সৃষ্টিকর্তা তাকে কখনো পাকড়াও করতে পারবে না। অথচ আল্লাহর নিকটে সকলকেই একত্রিত হ’তে হবে। কেউ পালাতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ
فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى قَالَ
رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِيْ أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا، قَالَ كَذَلِكَ
أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى–
‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। অনুরূপভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে’।
ত্বহা ২০/১২৪- , ১২৬
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ عَلَى وُجُوْهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ
كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيْرًا-
আমি ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা, অন্ধ, বোবা ও বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বৃদ্ধি করে দিব’
সুরা ইসরা ১৭/৯৭
৩ . আক্বীদাগত কারণেই এক শ্রেণীর মানুষ ‘ওয়াহদাতুল উজূদ’ তথা স্রষ্টা ও সৃষ্টির অস্তিত্ব এক বলে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই; সৃষ্টি কেবল আল্লাহর বহিঃপ্রকাশ বা রূপ মাত্র।
দেওবন্দী বূযুর্গানে দ্বীনের আধ্যাত্মিক গুরু হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজির মাক্কী ‘ওয়াহদাতুল উজূদ’-এর ব্যাখ্যায় একটি উদাহরণ পেশ করেছেন যে, ‘বীজ হচ্ছে আল্লাহ এবং সৃষ্টি হচ্ছে কান্ড, মূল, ডাল-পালা, পাতা ইত্যাদি। শুরুতে শুধু বীজই বিদ্যমান ছিল এবং ডাল-পালা বিশিষ্ট বৃক্ষটি বীজের মধ্যে লুক্কায়িত ছিল। যখন চারাগাছটি বড় বৃক্ষে পরিণত হ’ল, তখন বীজ অন্তর্ধান হয়ে গেল। বীজ এখন বিশাল বৃক্ষে বিকশিত এবং এর বাইরে এর কোন অস্তিত্ব নেই’। অতএব আমরা সকলেই আল্লাহরই অংশ। আমরা সৃষ্টিজগতের মধ্যে যারই ইবাদত করি না কেন সেটাই আল্লাহর ইবাদত। নাউযুবিল্লাহ! হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজের মাক্কী বলেন যে, মানুষ বাহ্যতঃ কৃতদাস এবং অন্তর্গতভাবে হক্ব বা আল্লাহ; নাউযুবিল্লাহ।
ইমদাদুল মুশতাক ইলা আশরাফুল আখলাক (উর্দূ), ৭৪ নং বায়ান, ৬২ পৃঃ।
তিনি আরো বলেন, আবেদ ও মা‘বূদের মধ্যে পার্থক্য করাই শিরক’।
শামায়েলে মুহাম্মাদী, পৃঃ ৩৬।
আশরাফ আলী থানভী ‘ওয়াহদাতুল উজূদ’-এ বিশ্বাসকে ঈমানের পূর্ণাঙ্গতা বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু মুহাম্মাদ আহসান আরো এগিয়ে বলেন, ‘ওয়াহদাতুল উজুদ’-এ বিশ্বাসের উপর ঈমান নির্ভরশীল।
মাকতুবাত ওয়াল মালফূযাত (আশরাফ আলী থানভীর বায়ান ও লিখনী) তার একজন খলীফা মুহাম্মাদ শরীফ কর্তৃক রচিত জীবনী, ১৮৫-১৮৬ পৃঃ।
অথচ আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। মহান আল্লাহ বলেন,
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَا
إِلٰهَ إِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ
وَكِيْلٌ- ‘
তিনিই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তারই ইবাদত কর; তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক’।
আন‘আম ৬/১০২
তিনি অন্যত্র বলেন,
اَلَّذِي خَلَقَ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ
اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ الرَّحْمَنُ فَاسْأَلْ بِهِ خَبِيْرًا-
‘তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমন্বিত হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ’।
ফুরক্বান ২৫/৫৯
তিনি অন্যত্র বলেন,
قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ قُلِ اللهُ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُمْ مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَاءَ لَا
يَمْلِكُوْنَ لِأَنْفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَى
وَالْبَصِيْرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّوْرُ أَمْ جَعَلُوا
لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوْا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ قُلِ
اللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ-
‘বল, কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক? বল, আল্লাহ। বল, তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করেছ, যারা নিজেদের লাভ বা ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়? বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান অথবা অন্ধকার ও আলো কি এক? তবে কি তারা আল্লাহর সাথে এমন কাউকে শরীক করেছে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে, যে কারণে সৃষ্টি তাদের নিকট সদৃশ মনে হয়েছে? বল, আল্লাহ সকল বস্ত্তর স্রষ্টা; তিনি এক, পরাক্রমশালী’।
রা‘দ ১৩/১৬
৪ . আক্বীদাগত কারণেই মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার নিকট সাহায্য না চেয়ে কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চায়। এটাকেই তারা প্রকৃত দ্বীন মনে করে এবং ইহা অমান্যকারীকে কাফের বলতেও দ্বিধাবোধ করে না। আটরশি, চরমোনাই, শাহজালালের মাযারে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ ভিড় জমায় এবং লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা দান করে। যখনি যে সরকার, এমপি, মন্ত্রী জয়লাভ করে, তখনি সে প্রথমে ঐ সকল মাযারে গিয়ে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা ঢালে। ভাবখানা এমন যেন সারা বছর পাপের মধ্যে ডুবে থেকে বছরে একদিন ঐ সমস্ত মাযারে গিয়ে টাকা-পয়সা দিলেই সব পাপ ধুয়ে ছাফ হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র তাঁর নিকটেই সাহায্য চাওয়ার ও ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন,
ادْعُوْنِيْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ
‘তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’।
সুরা গাফের ৪০/৬০
তিনি অন্যত্র বলেন
,وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي
عَنِّي فَإِنِّي قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ-
‘আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার উপর ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে’।
সুরা বাকারাহ ২/১৮৬
তিনি অন্যত্র বলেন
, وَلَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ
مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ
الظَّالِمِيْنَ– ‘
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডেক না, যে তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। আর এটি করলে তুমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’।
সৃরা ইউনুস ১০/১০৬
তিনি বলেন,
إِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا
يَسْمَعُوْا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَيَوْمَ
الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ-
‘তোমরা তাদেরকে
(মৃত ব্যক্তিকে)
আহবান করলে তারা তোমাদের আহবান শুনবে না এবং শুনলেও তোমাদের আহবানে সাড়া দিবে না। তোমরা তাদেরকে যে শরীক করেছ ক্বিয়ামতের দিন এরা তা অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞের ন্যায় কেহই তোমাকে অবহিত করতে পারে না’
সুরা ফাতির ৩৫/১৪
তিনি অন্যত্র বলেন
, إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى
وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِيْنَ- ‘
মৃতকে তো তুমি কথা শুনাতে পারবে না, বধিরকেও পারবে না আহবান শুনাতে, যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়’ ।
সুরা নামল ২৭/৮০
তিনি আরও বলেন,
وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَاءُ
وَلَا الْأَمْوَاتُ إِنَّ اللهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ
مَنْ فِيْ الْقُبُوْرِ–
‘জীবিত ও মৃত সমান নয়। আল্লাহই যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান; তুমি শুনাতে সমর্থ হবে না যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে’
সুরা ফাতির ৩৫/২২
ঘ > ছহীহ আক্বীদাই ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত :
ইসলামী শরী‘আত দুই ভাগে বিভক্ত।
১. আক্বীদা বা বিশ্বাসগত
: অর্থাৎ ঈমানের ছয়টি বিষয়ের উপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা এবং একমাত্র তারই ইবাদতে বিশ্বাস করা। আর ইহাই ইসলামের মৌলিক বিষয়।
২. আমলগত
: অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত করার যাবতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং তদনুযায়ী আমল করা।
অতএব আক্বীদাই ইসলামের মৌলিক বিষয়; যার শুদ্ধতার উপর আমল নির্ভরশীল।
যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন
, فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَاءَ
رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ
أَحَدًا- ‘
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’
সুরা কাহফ ১৮/১১০
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَلَقَدْ أُوْحِيَ إِلَيْكَ
وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ
وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ-
‘তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই অহী হয়েছে যে, তুমি যদি আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির কর, তবে তোমার আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ ।
সুরা যুমার ৩৯/৬৫
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَحَبِطَ
عَنْهُمْ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ‘
যদি তারা শিরক করত তবে তাদের আমল বরবাদ হয়ে যেত’
সুরা আন‘আম ৬/৮৮
উল্লিখিত আয়াত সমূহ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, শিরক মুক্ত বিশুদ্ধ আক্বীদা ব্যতীত আল্লাহর নিকটে কোন আমল কবুল হবে না। অতএব আমল করার পূর্বে আক্বীদা সংশোধন করা অপরিহার্য।
ঙ > মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তির মূলেই আক্বীদাগত পার্থক্য:
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির সার্বিক জীবন পরিচালনার যাবতীয় বিধি-বিধান নাযিল করে একমাত্র তারই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর তা অনুসরণের ক্ষেত্রে পরস্পরে দলাদলী বা বিচ্ছিন্ন হ’তে নিষেধ করেছেন। আর এই নির্দেশ আক্বীদাগত ঐক্যের নির্দেশ। এই নির্দেশ পালনের মাধ্যমে মানুষ মুসলিম হয় এবং পরকালে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে প্ররিত্রাণ লাভ করে ও জান্নাতের অফুরন্ত নে‘আমত লাভের পথ সুগম করে। পক্ষান্তরে উক্ত নিষেধ অমান্য করে ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী হওয়ার মাধ্যমে মানুষ ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, রাফেযী, খারেজী, শী‘আ, মু‘তাযিলা বিভিন্ন ভ্রান্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মত থেকে বঞ্চিত হয় এবং জাহান্নামের কঠিন আযাব গ্রহণের পথ সুগম করে। আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করি, একই কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে ছালাত আদায় করি, তারাও আজ শতধাবিভক্ত। নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করেও ‘ওয়াহদাতুল উজূদ’-এর মত ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী হওয়ার মাধ্যমে নিজেরাই আল্লাহ বনে যাই; নাউযুবিল্লাহ। কেউবা মুহাম্মাদ
(ছাঃ)-কে আল্লাহ বলি, আবার কেউ আলী (রাঃ)-কে আল্লাহ বলি। এ সমস্ত ভ্রান্ত আক্বীদা তাদের মৌখিক স্বীকৃতির অসারতা প্রমাণ করে। তদানীন্তনকালের কাফির মুশরিকরা তাওহীদে রুবূবিয়্যাত তথা আল্লাহকে একক সৃষ্টিকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করলেও ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক বলে বিশ্বাস করেনি। তারা মূর্তিপূজার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের চেষ্টা করত। অনুরূপভাবে অধিকাংশ মুসলিম তাওহীদে রবূবিয়্যাতকে বিশ্বাস করলেও তাওহীদে ইবাদত ও আসমা ওয়াছ ছিফাতকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারেনি। কবর পূজা ও পীরপূজার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করতে চায়। আর এই আক্বীদাগত বিভক্তির কারণেই মুসলমানরা
(উম্মতে মুহাম্মাদী)
৭৩ দলে বিভক্ত হবে, যার মধ্যে একটি মাত্র দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِيْ
مَا أَتَى عَلَى بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ
مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِيْ أُمَّتِيْ مَنْ يَصْنَعُ
ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ
مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ
فِيْ النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوْا وَمَنْ هِىَ يَا رَسُوْلَ اللهِ
قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ-
‘বানী ইসরাঈলের উপর যেমন অবস্থার আগমন ঘটেছিল আমার উম্মতের উপরেও তেমন অবস্থার আগমন ঘটবে; এক জোড়া জুতা পরস্পর সমান হওয়ার ন্যায়। এমনকি যদি বানী ইসরাঈলদের মধ্যে এমন লোক থাকে, যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল, তাহ’লে আমার উম্মতের মধ্যেও এমন লোক পাওয়া যাবে যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। বানী ইসরাঈলরা বিভক্ত হয়েছিল ৭২টি দলে; আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩টি দলে। সব দলই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, একটি দল ব্যতীত। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ)!
সে দল কোনটি ? তিনি বললেন, আমি এবং আমার অনুসারীগণ যার উপরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছি, এর উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে
(তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল।
তিরমিযী হা/২৬৪১; মিশকাত হা/১৭১; আলবানী, সনদ হাসান, ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৪৩
অতএব বিশুদ্ধ আক্বীদাই ইহকালে মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্যের একমাত্র পথ এবং পরকালে মুক্তির একমাত্র উপায়। একে অপরের আক্বীদা সংশোধনের মাধ্যমেই মুসলিম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নবী-রাসূলগণের সকলেই সর্বপ্রথম মানুষের আক্বীদা সংশোধনের দাওয়াত দিয়েছেন। আক্বীদা সংশোধনের পরেই কেবল তাকে ছালাত, ছিয়াম সহ ইসলামের অন্যান্য বিধান মানার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সা. মু‘আয রা. -কে ইয়ামানে প্রেরণকালে বলেছিলেন,
ادْعُهُمْ إِلَى
شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا
لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ
فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ
أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِيْ أَمْوَالِهِمْ، تُؤْخَذُ مِنْ
أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ-
‘সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদে ছাদাক্বাহ
(যাকাত)
ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর দরিদ্রের মাঝে বণ্টন করা হবে’।
বুখারী হা/১৩৯৫, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘যাকাত ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/১৯
আলোচ্য হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, সর্বপ্রথম মানুষের আক্বীদা সংশোধনের দাওয়াত দিতে হবে। কেননা আক্বীদাই হ’ল ইসলামের মৌলিক বিষয়। আক্বীদা সংশোধনের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশের পরেই ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত সহ ইসলামের যাবতীয় বিধান মেনে চলতে হবে। অন্যথা তার ইবাদত আল্লাহর নিকট কবুল হবে না।
আল্লাহ বলেন,
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوْا
مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُوْرًا- ‘
আমি তাদের (কাফিরদের) কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব’।
সুরা ফুরক্বান ২৫/২৩
অন্যত্র তিনি বলেন
وَ مَا مَنَعَهُمۡ اَنۡ تُقۡبَلَ مِنۡهُمۡ
نَفَقٰتُهُمۡ اِلَّاۤ اَنَّهُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَ بِرَسُوۡلِهٖ وَ لَا
یَاۡتُوۡنَ الصَّلٰوۃَ اِلَّا وَ هُمۡ کُسَالٰی وَ لَا یُنۡفِقُوۡنَ اِلَّا وَ
هُمۡ کٰرِهُوۡنَ
-
তাদের (কাফিরদের) দান গ্রহণ করা নিষেধ করা হয়েছে এজন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করে, ছালাতে শৈথিল্যের সাথে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে দান করে’
সুরা তওবা ৯/৫৪
No comments
Post a Comment