আকিদাহ – তাওহিদ, শিরক, ঈমান, কুফর, ইহসান ও রিসালাত
আকিদাহ – তাওহিদ, শিরক, ঈমান, কুফর, ইহসান ও রিসালাত
১. আকাইদ কাকে বলে?
আকাইদ শব্দটি আকিদা শব্দের বহুবচন। আকাইদ অর্থ বিশ্বাসমালা। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসকেই আকাইদ বলা হয়।
ইসলামের মূল বিষয় অর্থাৎ তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, আসমানী কিতাব, ফেরেশতা, নবী-রাসূল ইত্যাদির উপর মনে প্রাণে বিশ্বাস করাকে আকাইদ বলে।
আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহর সকল সৃষ্টিকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করাকে আকাইদ বলে।
২. আকাইদকে ইসলামের প্রধান ভিত্তি বলা হয় কেন?
মুসলিম হওয়ার জন্য আকাইদে বিশ্বাস আবশ্যক হওয়ায় একে ইসলামের প্রধান ভিত্তি বলা হয়। ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম মৌলিক কতগুলো বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়।
যেমন- আল্লাহ তায়ালা, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, আখিরাত ইত্যাদির উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। ইসলামের এরূপ বিষয়গুলোর ওপর বিশ্বাস করাই হলো আকাইদ। আর এ বিশ্বাস ছাড়া ইসলামে প্রবেশ করা বা মুসলমান হওয়া যায় না। আকাইদের বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস করতে হবে। এর কোনো একটিকে অবিশ্বাস করলে কেউ মুসলিম হতে পারে না। তাই একে ইসলামের প্রধান ভিত্তি বলা হয় ।
তাওহিদের পরিচয়:
৩.
তাওহিদ কাকে বলে ?
তাওহিদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে স্বীকার করে নেওয়াকে তাওহিদ বলা হয়।
তাওহিদের মূল কথা হলো- আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি তাঁর সত্তাব ও গুণাবলিতে অদ্বিতীয়। তিনি সকল প্রশংসা ও ইবাদতের একমাত্র মালিক। তাঁর তুলনীয় কেউ নেই।
আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা ও ইবাদতের যোগ্য এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাসের নামই তাওহিদ।
৪. তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?
তাওহীদ বা আল্লাহ্র একত্ববাদ তিন প্রকারঃ যথা-
১. ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র একত্ববাদঃ এর অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এমর্মে অকাট্য বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই এককভাবে ইবাদত পাওয়ার যোগ্য, এতে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَآ أُمِرُوٓاْ
إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ
“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে,
তারা খাঁটি বিশ্বাসের সহিত এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে”
(বাইয়্যেনাহ ৫)।
২. রুবুবিয়াত তথা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র একত্ববাদঃ অর্থাৎ আমাদেরকে এই অকাট্য বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে,
একমাত্র আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা এবং পরিচালক; এক্ষেত্রে তার কোনো অংশীদার নেই এবং নেই কোনো সহযোগীও। মহান আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি,
যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক্ব দান করে?
তিনি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কিভাবে (তাঁর তাওহীদ থেকে) ফিরে যাচ্ছ?” (ফাতির, আয়াত নং ৩)
তিনি আরো বলেন,
“নিশ্চয় মহান আল্লাহই একমাত্র রিযিক্বদাতা, মহাশক্তিমান এবং পরাক্রান্ত” (যারিয়াত,আয়াত
নং ৫৮)
তিনি আরো বলেন,
“তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সবকিছু পরিচালনা করেন” (সাজদাহ, আয়াত নং ৫)।
৩. আল্লাহ্র সুন্দরতম নামসমূহ এবং গুণাবলীর ক্ষেত্রে একত্ববাদঃ অর্থাৎ এই বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ্র সুন্দরতম নামসমূহ এবং পরিপূর্ণ গুণাবলী রয়েছে, যেগুলি কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلِلَّهِ
ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ
“আর আল্লাহ্র রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। অতএব, সেগুলির মাধ্যমেই তাঁকে ডাকো” (আ'রাফ ১৮০)। এই নামসমূহ এবং গুণাবলীতে কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এগুলির কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে না,
তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে সেগুলির কোনোরূপ সাদৃশ্য বিধানও করা চলবে না। আমাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে হবে যে,
মহান আল্লাহ্র মত আর কেউ নেই। আল্লাহ বলেন,
لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ
شَيۡءٞۖ
وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ
“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা” (শূরা, আয়াত নং ১১)।
৫. তাওহীদে রুবুবিয়্যা এবং তাওহীদে উলুহিয়্যার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: তাওহীদে রুবুবিয়্যা হল: আল্লাহর কাজ। যেমন: সৃষ্টি করা,
রিযিক দান করা,
জীবন মৃত্যু দান করা,
বৃষ্টি বর্ষণ করা,
তরুলতা ও বৃক্ষরাজি উৎপন্ন করা,
এবং যাবতীয় কাজ কর্ম পরিচালনা করা।
আর তাওহীদে উলুহিয়্যা হল: বান্দার কাজ। যেমন: দো‘আ,
ভয়-ভীতি, আশা আকাঙ্খা, ভরসা, প্রত্যাবর্তন, উৎসাহ প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন, মান্নত করা, সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদত।
৬.
আল্লাহ তায়ালা কোথায় আছেন ?
উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআ’লা যে উপরে সমুন্নত, এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট দলীলগুলো গণনা করে শেষ করা যাবে না। দলীলগুলো অনুধাবন করলে বিষয়টি খুব সহজেই বোধগম্য হবে। ইনশা আল্লাহ
কুরআনুল কারীম থেকে দলীল-
কুরআন মজীদে সাতটি আয়াত রয়েছে।
(১) আললাহ তা’আলা বলেনঃ
الرَّحْمَنُ عَلَى
الْعَرْشِ اسْتَوَى
‘‘দয়াময় আল্লাহ্ আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা তোহাঃ ৫)
(২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি আসমান-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। (সূরা আ’রাফঃ ৫৪)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি আসমান-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা ইউনূসঃ ৩)
(৩) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘‘আল্লাহই ঊর্ধবদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন বিনা স্তম্ভে। তোমরা এটা দেখছো। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা রা’দঃ ২)
(৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘‘অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। তিনি পরম দয়াময়। (সূরা ফুরকানঃ ৫৯)
(৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘‘আল্লাহই আকাশ-যমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সকল বস্ত্ত ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা সাজদাহঃ ৫৪)
৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘‘আল্লাহই আকাশ-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন।
(সূরা হাদীদঃ ৪)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘‘তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়ে গেছো যে,
আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দিবেন না?।
(সূরা মুলক: ১৬)
আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ ‘‘তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে,
যিনি তাদের উপরে আছেন’’। (সূরা নাহল: ৫০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
‘‘তাঁরই দিকে পবিত্র বাক্যসমূহ আরোহণ করে এবং সৎকর্ম তাকে উন্নীত করে’’। (সূরা ফাতিরঃ ১০)
আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ ‘‘ফেরেশতা এবং রূহ (জিবরীল) তাঁর দিকে উর্ধ্বগামী হয়’’। (সূরা মাআরেজঃ ৪)
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন’’। (সূরা সিজদাহঃ ৫) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
‘‘যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মৃত্যু দান করব। অতঃপর তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নিবো’’।
(সূরা আল-ইমরানঃ ৫৫)
নাবী সা. এর হাদিস থেকে দলীল –
১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা জনৈক দাসীকে বললেনঃ আল্লাহ্ কোথায়? দাসী বললঃ আকাশে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দাসীর মালিককে বললেনঃ তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে মু’মিন’’।
২) সা’দ বিন মুআয যখন বনী কুরায়যার ব্যাপারে ফয়সালা দান করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তুমি তাদের ব্যাপারে সেই ফয়সালা করেছ, যা সাত আসমানের উপর থেকে আল্লাহ্ তা’আলা করেছেন’’।
শিরক এর পরিচয়:
৭. শিরক কাকে বলে ?
শিরক শব্দের অর্থ অংশীদার সাব্যস্ত করা, একাধিক স্রষ্টা বা উপাস্যে বিশ্বাস করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় – মহান আল্লাহর সাথে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে শরিক করা কিংবা তাঁর সমতুল্য মনে করাকে শিরক বলা হয়।
আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক চার ধরনের হতে পারে। যথা-
১, আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও অস্তিত্বে শিরক করা। যেমন- ঈসা আ. কে আল্লাহর পুত্র মনে করা।
২, আল্লাহ তায়ালার গুণাবলীতে শিরক করা। যেমন- আল্লাহ তায়ালার পাশাপাশি অন্য কাউকে সৃষ্টিকর্তা বা রিজিকদাতা মনে করা।
৩, সৃষ্টি জগতের পরিচালনায় কাউকে আল্লাহর অংশীদার বানানো। যেমন- ফেরেশ্তাদের জগৎ পরিচালনাকারী হিসেবে মনে করা।
৪, ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরিক করা। যেমন- আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সিজদাহ করা, কারও নামে পশু জবাই
করা, মানত করা, দান-সাদকা করা ইত্যাদি।
৮. শির্ক কত প্রকার
ও কী কী ?
শির্ক দুই প্রকার। যথাঃ
১. বড় শির্কঃ যেমন: মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বাস্তবায়নে অক্ষম- এমন কোনো বিষয়ে অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা,
আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপর ভরসা করা,
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে যবেহ করা ইত্যাদি। শির্কের গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন না।
আল্লাহ বলেন,“নিশ্চয়ই আল্লাহ শির্কের গোনাহ ক্ষমা করেন না” (নিসা ১১৬)।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শির্ক করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে” (মুসলিম)।
২. ছোট শির্কঃ যেমন: লোক দেখানো ইবাদত।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ
الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ " قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ
اللهِ ؟ قَالَ: " الرِّيَاءُ»
“যে বিষয়ে আমি তোমাদের উপরে সবচেয়ে বেশি ভয় করি,
তা হল ছোট শির্ক”। ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! ছোট শির্ক কি?
তিনি বললেন, “ছোট শির্ক হচ্ছে লোক দেখানো ইবাদত” (মুসলিম)। অনুরূপভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করাও ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করে,
সে কুফরী করে অথবা শির্ক করে” (তিরমিযী)।
৯. মৃত ব্যক্তিরা কি শ্রবণ করে এবং আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেয়?
মৃত ব্যক্তিরা শ্রবণ করে না এবং আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়াও দেয় না।
আল্লাহ বলেন,“আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন” (ফাতির ২২)।
তিনি আরো বলেন, “আপনি মৃতদেরকে আহ্বান শোনাতে পারবেন না” (নামল ৮০)।
তিনি অন্যত্র বলেন,
“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর বীচির আবরণেরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শির্ক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্র ন্যায় কেউ তোমাকে অবহিত করতে পারবে না” (ফাতির ১৩-১৪)।
১০. কুফর অর্থ কি এবং তা কত প্রকার?
উত্তর: কুফর শব্দের অর্থ অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, ঢেকে নাখা, গোপন করা, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি।
কুফর দু’প্রকার
ক- এমন কুফর যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়,
ইহা পাঁচ প্রকার:
১: মিথ্যারোপের কুফরি, আল্লাহ বলেন:
অর্থাৎ: যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে অস্বীকার করে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? জাহান্নামই কি কাফেরদের আবাস নয়? [সূরা আনকাবূত ৬৮]
২: সত্য বলে জানার পরও অহংকার করার কুফরি।
আল্লাহ বলেন: এবং যখন আমি ফেরেশ্তাগণকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সিজদা কর তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল; সে অগ্রাহ্য করল ও অহঙ্কার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল। [সূরা বাকারা ৩৪]
৩: সন্দেহের কুফরি, আর এটি হচ্ছে খারাপ ধারণা করা।
আল্লাহ বলেন:
এ ভাবে নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল: আমি মনে করি না যে এটা কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে। এবং এটাও মনে করি না যে, কিয়ামত হবে,
আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই তবে অবশ্যই আমি ইহা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব। তদুত্তরে তার বন্ধু তাকে বলল: তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ?
যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা ও পরে শুক্র হতে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মানুষ্য আকৃতিতে? [সূরা কাহফ ৩৫-৩৭]
৪: প্রত্যাখ্যান করার কুফরি।
আল্লাহ বলেন: আর যারা কাফের তাদেরকে যা থেকে সতর্ক করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
[সূরা আহকাফ ৩]
৫: নেফাকী কুফরি।
আল্লাহ বলেন: এটা এ জন্যে যে,
তারা ঈমান আনার পর কুফরি করেছে ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে, পরিণামে তারা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। [সূরা মুনাফিকূন ৩]
খ- ছোট কুফরি, এর দ্বারা ইসলাম থেকে বের হবে না। আর এটি হচ্ছে নেয়ামতের অস্বীকার বা কুফরি।
আল্লাহ বলেন: আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এক জনপদের; যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিত, যেখানে সর্বদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ আসতো; অতঃপর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল ফলে তারা যা করত তজ্জন্যে তাদেরকে আল্লাহ ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের স্বাদ গ্রহন করালেন। [সূরা নাহল ১১২]
তিনি আরও বলেন: নিশ্চয়ই মানুষ অতি মাত্রায় যালিম অকৃতজ্ঞ। [সূরা ইব্রাহীম ৩৪]
১১. ঈমান কাকে বলা হয়?
ইমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস করা,
নিরাপত্তা দান করা ইত্যাদি। শরীয়তের পরিভাষায়, হযরত মুহাম্মদ সা. আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সহ তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা কে ঈমান বলে।
ঈমান হল: আপনি আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করবেন, তার ফেরেশ্তামণ্ডলী, তার কিতাবসমূহ, রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনবেন, শেষ দিবসের উপর ঈমান আনবেন এবং তাকদীরের ভাল মন্দের প্রতি ঈমান আনবেন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: রাসূল তার রব্বের পক্ষ হতে তার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার উপর ঈমান রাখেন এবং মুমিনগণও, তারা সকলেই আল্লাহকে, তার ফেরেশ্তাগণকে, তার কিতাবসমূহকে এবং তার রাসূলগণকে সত্য বলে ঈমান পোষণ করেন। আমরা ঈমানের ক্ষেত্রে তার রাসূলগণের মধ্যে কাউকে পার্থক্য করি না। [সূরা বাকারা ২৮৫]
১২. কয়টি বিষয়ের উপর ঈমান আনা ফরজ? এবং কি কি?
উত্তর: সাতটি বিষয়ের উপর ঈমান আনা ফরজ। যথাঃ
ক) আল্লাহর উপর ঈমান।
খ) ফেরেশতাদের উপর ঈমান।
গ) কিতাবসমূহের উপর ঈমান।
ঘ) রাসুলগণের উপর ঈমান।
ঙ) আখিরাতের প্রতি ঈমান।
চ) তাকদীরের প্রতি ঈমান।
ছ) মৃত্যুর পর পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান।
১৩. ইহসান কাকে বলা হয়?
উত্তর: ইহ্সান হচ্ছে: আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাকে দেখছেন, আপনি যদি তাকে নাও দেখেন তাহলে (মনে করবেন যে) নিশ্চয়ই তিনি আপনাকে দেখছেন।
আল্লাহর বাণী: নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে আছেন এবং যারা ভাল তাদের সাথে। [সূরা নাহল ১২৮]
রিসালাত এর পরিাচয়:
১৪.
রিসালাত কাকে বলে ?
রিসালাত শব্দের অর্থ বার্তা, চিঠি পৌছানো, পয়গাম, সংবাদ বা কোনো ভালো কাজের দায়িক্ত বহন করা। ইসলামী পরিভাষায় মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী মানুষের নিকট পৌছে দেওয়ার দায়িক্তকে রিসালাত বলা হয়। আর যিনি এদায়িক্ত পালন করেন তাকে বলা হয় রাসূল। রাসূল শব্দের বহুবচন রুসুল।
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) এর নবুওয়াতের প্রমাণ কি?
উত্তর: তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণ হল আল্লাহর বাণী:
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ
أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّۧنَۗ
অর্থাৎ: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) তোমাদের মধ্যে কারো পিতা নন বরং আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।
[সূরা আহযাব ৪০]
এ সব আয়াত প্রমাণ করে যে,
তিনি একজন নবী এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ নবী।
১৫. যে ব্যক্তি পূনরুত্থানকে অবিশ্বাস করবে তার হুকুম কি?
উত্তর: সে কাফের হয়ে যাবে, দলীল হল আল্লাহর বাণী:
زَعَمَ ٱلَّذِينَ
كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ
لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ
অর্থাৎ: কাফিররা ধারণা করে যে,
তারা কখনো পুনরুত্থিত হবে না। বলুন: নিশ্চয়ই হবে,
আমার প্রতিপালকের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে সে সম্পর্কে অবশ্যই তোমাদেরকে অবহিত করা হবে। এবং এটি আল্লাহর পক্ষে অত্যন্ত সহজ। [সূরা তাগাবূন ৭]
আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে সঠিক আকিদাহ বোঝার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
No comments
Post a Comment