যে সকল গুরুতর অপরাধের কারণে মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতেপারবে না !

 




যে সকল গুরুতর অপরাধের কারণে  মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতেপারবে না !


নিম্নে এমন ২৩টি বিশেষ গুনাহ ও অপরাধের কথা উল্লেখ করা হল, যেগুলোর ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে যে, এ সকল গুনাহের কারণে মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না বা জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না অথবা বলা হয়েছে, জাহান্নামে প্রবেশ করবে। 
যথা:

১. ঈমান না আনা

  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
                             لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلا مُؤْمِنٌ      
              
ঈমানদার ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
                (বুখারী ও মুসলিম)

তিনি আরও বলেন,

           لا تَدْخُلُوا نَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا
তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না।”
(সহীহ্‌ মুসলিম, হা/৫৪)

২. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া:

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
“যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
(সহীহ মুসলিম/৪৬)

৩. অহংকার করা:

রসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ
“যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।
(মুসলিম, হা/৯১)

৪. চোগলখোরি ও পরনিন্দা করা:

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ
চুগলখোর বা পর নিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।
 (সহীহ মুসলিম, হা/১০৫)

তিনি আরও বলেছেন,

تَجِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللَّهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ
“কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ঐ ব্যক্তিকে দেখতে পাবে যে, যে ছিল দুমুখো- যে এক জনের কাছে এক কথা আরেক জনের কাছে আরেক কথা নিয়ে হাজির হত।
 (সহীহ মুসলিম, হা/২৫২৬)

৫. আত্মহত্যা করা:

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَهْوَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ، يَتَرَدَّى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ تَحَسَّى سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَسَمُّهُ فِى يَدِهِ ، يَتَحَسَّاهُ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ، فَحَدِيدَتُهُ فِى يَدِهِ ، يَجَأُ بِهَا فِى بَطْنِهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا
“যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।
 [সহীহ বুখারী : ৫৪৪২; মুসলিম : ১০৯]

৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:   
           
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ       
   আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
 (সহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৬)

৭. হারাম খাওয়া

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ
“হারাম অর্থের মাধ্যমে (যে শরীরে) মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তি হারাম অর্থ ও অবৈধ উপার্জন দ্বারা দেহ গঠন করেছে জাহান্নামের আগুনই তার প্রাপ্য।
 (তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবীহ,সহীহ, আলবানী, হাদীস নং ২৭০৩)

৮. উপকার করে খোটা দেয়া

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ
সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যে উপকার করে খোটা দেয়।
 সুনান নাসাঈ, হা/ ৫৬৮৮, সহীহ, আলবানী 

৯. তাক্বদীর (ভাগ্যের লিখন) অস্বীকার করা

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَاقٌّ ، وَلا مُدْمِنُ خَمْرٍ ، وَلا مُكَذِّبٌ بِقَدَرٍ
পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী এবং তাক্বদীর অস্বীকারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
 (সিলসিলা সহীহা, হাসান, ৬৭৫)

১০. যাদুতে বিশ্বাস করা

রাসুল সা বলেন

من أتى كاهنًا أو ساحرًا فصدقه بما يقول، فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم.
‘যে ব্যক্তি কোন ভবিষ্যত বক্তা কিংবা যাদুকরের কাছে গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে যেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করলো.
 (হাদীসটি সহীহ।    সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী-৮/১৩৬, আল মাজমা ‘উয যাওয়ায়েদ -৫/১১৮, কাশফ আল-আশতার ২/৪৪৩)

১১. মদ, গাঁজা ও নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা

আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَـلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا رَدْغَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ.
কেউ মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হলে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবে যদি সে তওবা করে নেয় তা হলে আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারও তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অবশ্য যদি সে তওবা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারও তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কিন্তু যদি সে তওবা করে নেয় তা হলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহর হক হয়ে যায়, কিয়ামতের দিন তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো।
সাহাবিগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ‘রাদগাতুল খাবাল’ কি?
তিনি বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজ।
(সহিহ ইবনে মাজা, হা/২৭৩৮, সহিহুল জামে লিশ শাইখ আলবানী, হা/৬৩১৩ নং হাদিস)

১২. গণক

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ خَمْسٌ ، مُدْمِنُ خَمْرٍ ، وَلا مُؤْمِنٌ بِسِحْرٍ ، وَلا قَاطِعُ رَحِمٍ ، وَلا مَنَّانٌ ، وَلا كَاهِنٌ 
পাঁচ শ্রেণীর মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (তারা হল,) মদ্যপায়ী, যাদুর বৈধতায় বিশ্বাসী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, চোগলখোর এবং গণক।
 (মুসনাদে আহমদ, হাসান, আলবানী)

১৩. ঋণ পরিশোধ না করা

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট কোন ঋণগ্রস্ত মৃতের লাশ (জানাযার জন্য) নিয়ে আসা হলে জিজ্ঞেস করতেন, “সে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে কি না?” যদি বলা হত করেছে, তবে জানাযা পড়তেন। অন্যথায় (সাহাবীদেরকে) বলতেন,
صَلُّوا عَلَى صَاحِبِكُمْ
“তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়ে নাও (কিন্তু তিনি নিজে তাতে অংশ গ্রহণ করতেন না)।
 (সহীহ মুসলিম, হা/১৬১৯)

অন্য হাদীসে রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

يُغْفَرُ لِلشَّهِيدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلَّا الدَّيْنَ
“শহীদের ঋণ ছাড়া সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
 (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৬)

১৪. পুরুষ বেশধারী নারী

ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আল্লাহর রসূল (সা:) নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন ।
 (বুখারী: ৫৮৮৫, ৫৮৮৬; তিরমিযী: ২৭৮৪; আবু দাউদ: ৪৯৩০)

১৫. দাইয়ুস

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلاثٌ لا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ : الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ ، وَالدَّيُّوثُ ، وَرَجُلَةُ النِّسَاءِ
“তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হল, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ূস এবং পুরুষ বেশধারী নারী।
 (সহীহুল জামে, আলবানী, হা/৩৬৩)

দাইয়ূস: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ
“ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ূস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়।
  (মুসনাদ আহমদ, নাসাঈ)

১৬. বৃদ্ধ ব্যভিচারী

রাসুল (সা.) বলেছেন, চার ব্যক্তিকে মহান মহীয়ান আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন—অধিক হারে শপথকারী বিক্রেতা, অহংকারী দরিদ্র, বৃদ্ধ ব্যভিচারী এবং অত্যাচারী শাসক।
 (নাসায়ি, হাদিস : ২৫৭৬ )

১৭. মিথ্যাবাদী শাসক

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ পরকালে কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা হলো ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।
 (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৭)

১৮. অহংকারী দরিদ্র

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ثَلاثَةٌ لا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ : شَيْخٌ زَانٍ ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ
“কিয়ামতের আল্লাহ দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে পীড়া দায়ক শাস্তি। তারা হল, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক, অহংকারী দরিদ্র।
(মুসলিম, হা/১০৭)

১৯. কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক এবং যে ব্যক্তি মানুষের কাছে এমন বিষয় নিয়ে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার নিকট নেই.

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ ، وَلَا الْجَعْظَرِيُّ
“কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং ঐ লোকও নয় যে এমন সব বিষয়ে মানুষের নিকট গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নাই।
 (আবু দাঊদ, হা/৪৮০১, সহীহ, আলবানী)

২০. মুসলিম সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে বসবাসকারী অমুসলিমকে হত্যা করা

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرِحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ ، وَإِنَّ رِيحَهَا تُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا
“যে ব্যক্তি কোন মুয়াহিদ তথা মুসলিম সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে বসবাসকারী কোন অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।
 (সহীহ বুখারী হা/৩১৬৬)

২১. বিশ্বাসঘাতক শাসক

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللَّهُ رَعِيَّةً ، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ
“যাকে আল্লাহ তায়ালা জনসাধারণের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, কিন্তু সে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং বিশ্বাসঘাতক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।
 (সহীহ মুসলিম, হা/১৪২)

২২. মানুষকে প্রহার করা বা কষ্ট দেয়া 

হাদিসে এসেছে- 

َعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ الله عَنهُمَا، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ
 المُسْلِمُ منْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ
 مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রকৃত মুসলিম সেই, যার জিভ ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির (দ্বীনের খাতিরে স্বদেশ ত্যাগকারী) সেই, যে আল্লাহ যে সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তা ত্যাগ করে।
 [বুখারি১০, ৬৪৮৪, মুসলিম ৪০, নাসায়ি ৪৯৯৬, আবু দাউদ ২৪৮১, আহমদ ৬৪৫১, ৬৪৭৮, ৬৭১৪, ৬৭৫৩, ৬৭৬৭, ৬৭৭৪, ৬৭৯৬, দারেমি ২৭১৬]

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদ থাকে না।
                             (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬)

২৩. মহিলাদের পর্দা হীনতা

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ ، لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا ، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا
“দু শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামে যাবে- যাদের আমি এখনো দেখি নি। (অর্থাৎ নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে তাদের আত্মপ্রকাশ হয় নি)
ক) এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মত লাঠি। এরা তা দিয়ে জনগণকে প্রহার করবে।
খ) এবং ঐ সকল উলঙ্গ-অর্ধ উলঙ্গ নারী যারা (নিজেদের চলাফেরা ও বেশ-ভূষায়) মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথায় উটের মত উঁচু এবং একপাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো কেশ রাশি শোভা পাবে। এসমস্ত নারী জান্নাতে তো যাবেই না বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ এত এত দূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।
 (সহীহ মুসলিম, হা/২১২৮)

এমন গুনাহ আরও আছে কিন্তু ব্যাপক প্রচলিত কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরা হল।
আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে যে সব গুনাহ আমাদের জন্য জান্নাতের পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যায় সে সব গুনাহ থেকে হেফাজত করেন।
 আমিন।
              ================================

গুরুত্বপূর্ণ টিকা:
উপরোক্ত কাজগুলো কবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। কবীরা গুনাাহে লিপ্ত ব্যক্তিরা যদি তওবা করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করে এবং আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে তাদের পরিণতি জাহান্নাম। তবে আল্লাহ তায়ালা নিজ দয়া ও ইনসাফের ভিত্তিতে এদের মধ্যে যাকে খুশি ক্ষমা করে দিবেন যদি সে শিরক থেকে দূরে থাকে। 
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন:

إِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।
 (সূরা নিসা: ৪৮)

তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

( من مات وهو يعلم أنه لا إله إلا الله دخل الجنة (رواه مسلم
“যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেল যে, (জীবিত অবস্থায়) সে ভালো করে জানত, ‘আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ও সত্যিকার মা‘বুদ নেই, সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
 (সহীহ মুসলিম)

আর যাদেরকে তিনি ক্ষমা করবেন না তাদেরকে তিনি জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। পাপের শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অর্থাৎ তাওহীদপন্থী কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তিরা প্রথম পর্যায়ে জান্নাতে প্রবেশকারীদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে না বরং জাহান্নামে গিয়ে শাস্তি ভোগ করার পর পরিশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কোন তওহীদপন্থীই অন্যান্য কাফেরদের মত চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে না। এটাই হল, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদাহ। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
 -অনুবাদক
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
المانعات من دخول الجنَّات من كتاب (100 كبيرة من كبائر الذُّنوب)
للدكتور/ صالح بن عبد الله الصّياح
জান্নাতের পথে বাধা সৃষ্টি করে যে সব কাজ:
একশটি কবীরা গুনাহ বই থেকে
মূল: ডক্টর সালিহ বিন আবদুল্লাহ সাইয়াহ

সংকলনে
এইচ.এম.হুজ্জাতুল্লাহ 
hmhuzzatullah2019@gmail.com


No comments

Powered by Blogger.