বনী আদমের বিরুদ্ধে শয়তানের চক্রান্ত
বনী আদমের বিরুদ্ধে শয়তানের চক্রান্ত
আল্লাহ তায়ালা আদম আ কে সৃষ্টি করার পর ফেরেশ্তাগণকে বললেন,তোমরা আদম আ কে সিজদা কর, তখন ইবলিস ব্যতীত সবাই সিজদা করল। আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে সে চিরোদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়ে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়। তখন থেকেই সে মানব জাতীর চির শক্রতে পরিণত হয়ে যায়। মানব জাতীকে বিপথগামী করার জন্য ষড়যন্ত্রের সকল জাল সে বিস্তার করে। তবে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে শয়তানের সকল ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত করেন। নিম্নে শয়তানের কতিপয় ষড়যন্ত্রের নমুনা উল্লেখ করা হলো-
১. বিপথগামী করা :
আদম (আঃ)-কে সিজদা না করার কারণে ইবলীস যখন অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হ’ল তখন ঈমানদার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য সে প্রতিজ্ঞা করে।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ، قَالَ
رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ، قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ
الْمُنْظَرِينَ، إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ، قَالَ فَبِعِزَّتِكَ
لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْن-
আর তোমার প্রতি আমার অভিশাপ রইল বিচারদিবস পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তিনি বললেন, বেশ! তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’লে। নির্ধারিত সময়কাল উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার ইয্যতের কসম! আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করব।
(ছোয়াদ ৩৮/৭৮-৮২)
ইয়ায ইবনু হিমার আল-মুজাশী থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খুৎবায় বললেন,
أَلَا إِنَّ رَبِّيْ
أَمَرَنِيْ أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ، مِمَّا عَلَّمَنِيْ يَوْمِيْ
هَذَا، كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلَالٌ، وَإِنِّيْ خَلَقْتُ عِبَادِي
حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِيْنُ فَاجْتَالَتْهُمْ
عَنْ دِيْنِهِمْ، وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ-
‘জেনে রাখ আমার রব আমাকে নির্দেশ
দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের শিক্ষা দেই যা তোমরা জান না,
যা তিনি আমাকে আজকের এই দিনে শিক্ষা দিয়েছেন।
আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা হালাল। নিশ্চয়ই আমি আমার সকল বান্দাদেরকে শিরকমুক্ত
একনিষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত
করেছে। তাদের উপর যা হালাল করেছি তা তারা হারাম করেছে।
[মুসলিম হা/২৮৬৫।
মহান আল্লাহ বলেন
أَلَمْ تَرَ إِلَى
الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ آمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا
أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ
وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَكْفُرُوْا بِهِ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ
ضَلَالًا بَعِيْدًا-
তুমি কি তাদের দেখনি, যারা ধারণা
করে যে, তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে
তার উপর এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে তার উপর। তারা ত্বাগূতের নিকট ফায়ছালা পেশ
করতে চায়। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাকে অস্বীকার করার জন্য।বস্তুত শয়তান তাদেরকে দূরতম ভ্রষ্টতায় নিক্ষেপ করতে চায়’
(নিসা ৪/৬০)
২. পদস্খলন করা :
শয়তানের কৌশলের অন্যতম হল মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পদস্থলন করা।
মহান আল্লাহ বলেন
إِنَّ الَّذِيْنَ
تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ
الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا وَلَقَدْ عَفَا اللهُ عَنْهُمْ إِنَّ اللهَ
غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ
- ‘তোমাদের মধ্যে যারা (ওহোদের
যুদ্ধে) দু’দলের মুখোমুখি হবার দিন ঘাঁটি থেকে ফিরে গিয়েছিল, তাদের নিজেদের কিছু কৃতকর্মের দরুন শয়তান তাদের প্রতারিত করেছিল, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও সহনশীল’
(আলে ইমরান ৩/১৫৫ )
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ওহোদের যুদ্ধে প্রথম দিকে মুশরিকরা যখন চরমভাবে পরাজিত হয়ে পড়ল,
তখন ইবলীস চিৎকার করে (মুসলমানদের) বলল, হে আল্লাহর
বান্দাগণ! পিছনের দিকে লক্ষ্য কর। তখন অগ্রবর্তীদল পিছনে ফিরে (শত্রুমনে করে) নিজ দলের
উপর আক্রমণ করে একে অপরকে হত্যা করতে লাগল। এমন সময় হুযায়ফা (রাঃ) পিছনে তার পিতাকে
দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বললেন, এই যে আমার পিতা, আমার পিতা। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেলল।
বুখারী হা/৪০৬৫।
এটা ছিল শয়তানের পদস্খলনের পরিণাম। আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন।
কখনো কখনো আলেমদের মুখে গোমরাহী কথা বের করে দেয় এই ইবলীস।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
,وَأُحَذِّرُكُمْ
زَيْغَةَ الْحَكِيمِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ يَقُولُ كَلِمَةَ الضَّلَالَةِ
عَلَى لِسَانِ الْحَكِيم
আমি আলেমদের গুমরাহী সম্পর্কে অধিক শংকিত। কেননা
শয়তান কখনো কখনো আলেমদের মুখ থেকে গুমরাহী কথা বের করে দেয়’।
( আবু দাঊদ হা/৪৬১১ )
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إِنَّ أَهْلَ فَارِسَ لَمَّا مَاتَ نَبِيُّهُمْ كَتَبَ لَهُمْ
إِبْلِيسُ الْمَجُوسِيَّة
যখন পারসিকদের নবী মৃত্যু করেন, তখন ইবলীস
তাদের অগ্নিপূজায় লাগিয়ে দেয়। (অর্থাৎ গুমরাহ করে ফেলে)।
( আবু দাঊদ হা/৩০৪২ )
৩. প্রতিশ্রুতি :
শয়তান মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি
ও দিক নির্দেশনা দিয়ে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে।
আল্লাহ বলেন,
لَعَنَهُ اللهُ وَقَالَ
لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا، وَلَأُضِلَّنَّهُمْ
وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ
وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ
اللهِ وَمَنْ يَتَّخِذِ
الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِنْ دُونِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُبِينًا،
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَ يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا،
أُولَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَلَا يَجِدُونَ عَنْهَا مَحِيصًا-
আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেছেন। আর সে বলেছিল যে, অবশ্যই আমি
তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে একটা নির্দিষ্ট অংশকে আমার দলে টেনে নেব। আমি অবশ্যই তাদের
পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদেরকে আদেশ দেব যেন তারা পশুর কর্ণ ছেদন করে এবং তাদেরকে আদেশ করব যেন তারা
আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে। বস্তুত যে ব্যক্তি
আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে
পতিত হয়। সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় ও মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি
দেয়, তা প্রতারণা বৈ কিছু নয়। ওদের ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। সেখান
থেকে তারা অন্য কোন আশ্রয়স্থল পাবে না।
(নিসা ৪/১১৮-১২১)।
৪. শত্রুতা ও বিদ্বেষ:
শয়তান মানুষের মাঝে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করে।সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا يُرِيدُ
الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ
وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ
أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ-
‘শয়তান তো কেবল চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ
সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হ’তে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা নিবৃত্ত
হবে কি ?
(মায়েদাহ ৫/৯১)।
পরস্পরে ভাল আচরণ করতে হবে এবং সকল প্রকার হারাম খেলা বর্জন করতে হবে। অন্যথা এই সুযোগে শয়তান মানুষের মাঝে সংঘর্ষ বাধিয়ে চরম শত্রুতা সৃষ্টি করবে।
মহান আল্লাহ বলেন
,وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا-
(হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের বল, তারা যেন (পরস্পরে)
উত্তম কথা বলে। (কেননা) শয়তান সর্বদা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। নিশ্চয়ই
শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’
(বনী ইসরাঈল ১৭/৫৩)
এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ
خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
‘যে আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালের প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন করে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।
( বুখারী হা/৬০১৮ )
এজন্য আমাদের উচিত কম কথা বলা এবংস কথা বলার ভেবে চিন্তে বলা। তাহলে সমাজে অনেক ফেতনা কমে যাবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন ।
৫. সুসজ্জিত করা :
শয়তান মানুষের সামনে পাপ, অশালীন ও অশ্লীল
কাজকর্মকে সুন্দর ও সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করে। ফলে তাকে ভালকাজ মনে করে মানুষ আমল
করে জাহান্নামী হয়ে যায়।
শয়তানের এই ভাষাকে মহান আল্লাহ উল্লেখ করে বলেন,
,قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ، إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ-
‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা। যেহেতু তুমি আমাকে বিপথগামী করলে, সেহেতু আমিও পৃথিবীতে তাদের নিকট পাপকর্মকে শোভনীয় করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্য থেকে তোমার নির্বাচিত
বান্দারা ব্যতীত।
(হিজর ১৫/৩৯-৪০)।
অন্যত্র এসেছে,
وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ
الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ
وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ
وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ
اللهَ وَاللهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ-
যখন শয়তান (বদরের দিন) কাফেরদের নিকট তাদের কাজগুলিকে শোভনীয় করে দেখিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ তোমাদের উপর বিজয়ী হবার মত কোন লোক নেই। আর আমি তোমাদের সাথী আছি। কিন্তু যখন দু’দল মুখোমুখী হ’ল, তখন সে পিঠ ফিরে পালালো এবং বলল, আমি তোমাদের থেকে মুক্ত। আমি যা দেখেছি তোমরা তা দেখনি। আমি আল্লাহকে ভয় করি। আর আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’
(আনফাল ৮/৪৮)।
আয়াতের প্রেক্ষাপট হ’ল, বদর যুদ্ধের সময় শয়তান মুশরিকদেরকে বিজয়ের আশ্বাস দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের কার্যাবলীকে শোভনীয় করে দেখায়। কিন্তু যখন শয়তান ফেরেশতাদের দল তাদের বিপক্ষে দেখতে পায় তখন পলায়ন করে পিছু হটে যায়।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
تَاللهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا
إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ
الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْم
‘আল্লাহর কসম! আমরা তোমার পূর্বে
বহু জাতির নিকটে রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর শয়তান তাদের মন্দ কর্মসমূহকে শোভনীয় করে
দেখিয়েছিল। সে আজ তাদের অভিভাবক। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’
(নাহল ১৬/৬৩)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
فَلَوۡلَاۤ اِذۡ
جَآءَهُمۡ بَاۡسُنَا تَضَرَّعُوۡا وَ لٰکِنۡ قَسَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ زَیَّنَ
لَهُمُ الشَّیۡطٰنُ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ
সুতরাং আমার শাস্তি যখন
তাদের উপর আপতিত হল, তখন তারা বিনীত হল না কেন? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল এবং তারা যা করছিল, শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করল। [1]
( সূরা আন‘আম ৪৩
)
[1] জাতি যখন চারিত্রিক অবনতি এবং অনুচিত কর্ম-কান্ডের শিকার হয়ে নিজেদের অন্তঃকরণে জং লাগিয়ে নেয়, তখন আল্লাহর আযাবও তাদেরকে উদাসীনতার নিদ্রা থেকে জাগাতে এবং তাদের মনে পরিবর্তন আনতে অসফল হয়। তাদের হাত ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্লাহর সামনে ওঠে না, তাদের অন্তর তাঁর কাছে বিনয়ী হয় না এবং সংশোধন হওয়ার প্রতি তাদের কোন আগ্রহও জাগে না। বরং নিজেদের মন্দ আমলগুলোর উপর অপব্যাখ্যা ও অজুহাতের সুন্দর চাদর চাপিয়ে নিজেদের মনকে সন্তুষ্ট করে নেয়। এই আয়াতে এমন জাতিরই সেই কর্ম-কান্ডসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলোকে শয়তান তাদের জন্য সুন্দর আকারে পেশ করে।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَجَدۡتُّهَا وَ
قَوۡمَهَا یَسۡجُدُوۡنَ لِلشَّمۡسِ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ زَیَّنَ لَهُمُ
الشَّیۡطٰنُ اَعۡمَالَهُمۡ فَصَدَّهُمۡ عَنِ السَّبِیۡلِ فَهُمۡ لَا یَهۡتَدُوۡنَ
আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম, তারা
আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদাহ করছে। শয়তান ওদের নিকট ওদের কার্যাবলীকে সুশোভন
করেছে এবং ওদেরকে সৎপথ হতে বিরত রেখেছে,[1] ফলে ওরা সৎপথ পায়
না।’
( সুরা নামল, আয়াত- ২৪ )
[1] এর অর্থ এই যে, পাখীদের এই অনুভব শক্তি রয়েছে যে, গায়বের খবর নবীরা জানতেন না। যেমন, হুদহুদ পাখী নবী সুলাইমান (আঃ)-কে বলল, আমি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এনেছি, যা আপনার জানা নেই। অনুরূপ পাখীরা আল্লাহর একত্ববাদের বুঝশক্তিও রাখে। সেই জন্যই এখানে হুদহুদ বিস্ময়ের সাথে বলেছিল, এই রাণী ও তার প্রজারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যের পূজা করে এবং তারা শয়তানের অনুসরণ করে; যে তাদের জন্য সূর্য-পূজাকে সুশোভন করেছে।
৬. কুমন্ত্রণা :
শয়তান মানুষের মনের মাঝে কুমন্ত্রণা, প্ররোচনা, সংশয়-সংন্দেহ, অবিশ্বাস প্রবেশ করিয়ে পথভ্রষ্ট করার প্রচেষ্টা চালায়। মিথ্যা প্ররোচনার মাধ্যমে আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে জান্নাত থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনা পবিত্র কুরআনে সবিস্তার বর্ণিত হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন,
فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا
وُورِيَ عَنْهُمَا مِنْ سَوْآتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ
هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ
الْخَالِدِيْنَ-
অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান যা পরস্পর থেকে গোপন ছিল
তা প্রকাশ করে দেবার জন্য শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, তোমাদের প্রতিপালক
এই বৃক্ষ থেকে তোমাদের নিষেধ করেছেন কেবল এজন্যে যে, তাহলে তোমরা
দু’জন ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা এখানে চিরস্থায়ী বসবাসকারী হয়ে যাবে’
(আ‘রাফ ৭/২০)।
অন্যত্র এসেছে,
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ
الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ
لَا يَبْلَى، فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا
يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ وَعَصَى آدَمُ رَبَّهُ فَغَوَى-
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি
কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবনদায়িনী বৃক্ষের কথা এবং এমন রাজত্বের কথা যা ক্ষয় হয় না?
অতঃপর তারা উভয়ে উক্ত (নিষিদ্ধ) বৃক্ষ হ’তে (ফল) ভক্ষণ করল। ফলে তাদের
সামনে তাদের গুপ্তাঙ্গ প্রকাশিত হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে
আবৃত করতে শুরু করল। এভাবে আদম তার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করল এবং পথ হারাল।
(ত্ব-হা ২০/১২০-১২১)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
يَأْتِي الشَّيْطَانُ
أَحَدَكُمْ فَيَقُوْلُ: مَنْ خَلَقَ كَذَا، مَنْ خَلَقَ كَذَا، حَتَّى يَقُولَ:
مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَهُ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ وَلْيَنْتَهِ-
তোমাদের কারো নিকট শয়তান আসতে পারে এবং বলতে পারে, এ বস্তু কে
সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্তু কে সৃষ্ট করেছে ? এমনকি শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে?
যখন ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর নিকট
আশ্রয় চায় এবং সে যেন এমন চিন্তা থেকে বিরত হয়ে যায়’।
( বুখারী হা/৩২৭৬; মুসলিম হা/১৩৪ )
স্বলাতে ওয়াসওয়াসা :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْتِي أَحَدَكُمْ فِي صَلَاتِهِ
فَيَلْبِسُ عَلَيْهِ، حَتَّى لَا يَدْرِيَ كَمْ صَلَّى، فَإِذَا وَجَدَ ذَلِكَ
أَحَدُكُمْ فَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ-
তোমাদের কারো কারো ছালাত আদায়কালে শয়তান আসে এবং ছালাতের বিষয়ে সন্দেহে ফেলে
দেয়। ফলে সে বুঝতে পারে না কত রাক‘আত আদায় করল। তোমাদের কারো যদি এই রকম কিছু হয় তবে
(শেষ বৈঠকে) বসা অবস্থায় সে যেন দু’টি সিজদাহ করে দেয়।
( তিরমিযী হা-৩৯৭; বুখারী, মুসলিম )
৭. আল্লাহর যিকির ভুলে যাওয়া :
শয়তানের কাজ হল বান্দাকে আল্লাহর স্মরণ বা যিকির
থেকে ভুলিয়ে দিয়ে বিপথগামী করা।
যেমন-
মূসা (আঃ) এক যুবককে নিয়ে খিজির (আঃ)-এর সাক্ষাতে
বের হ’লেন। একটি মাছ ছিল তাদের গন্তব্যের চিহ্ন। মাছটি যেখানে জীবিত হয়ে সমুদ্রে চলে
যাবে সেখানে সে সাক্ষাৎ পাবে বলে নির্দেশনা দেয়া ছিল। কিন্তু যুবক তা বলতে ভুলে যায়। মাছের বিষয়ে মূসা (আঃ) যুবককে
জিজ্ঞেস করলে সে
উত্তর দিল
قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ
أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّيْ نَسِيْتُ الْحُوْتَ وَمَا أَنْسَانِيْهُ
إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَه
ُ وَاتَّخَذَ
سَبِيْلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا-
‘যুবক বলল, আপনি কি খেয়াল করে দেখেছেন যখন
আমরা একটি প্রস্তর খন্ডে বিশ্রাম নিয়েছিলাম, সেখানে আমি মাছের
কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই আমাকে ওর কথা স্মরণ রাখতে ভুলিয়ে দিয়েছিল। সে বিস্ময়করভাবে
নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল ।
(কাহাফ ১৮/৬৩; বুখারী হা/৭৪ )
৮. প্ররোচনা দেওয়া :
শয়তান মানুষের মাঝে বিভিন্ন কৌশলে প্ররোচনা দেয়। কখনো ভালো মানুষের রুপ ধারণ করে সাধারণ মানুষকে প্ররোচনা দেয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَقُلْ لِعِبَادِيْ
يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ
الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِيْنًا-
(হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের
বল, তারা যেন (পরস্পরে) উত্তম কথা বলে। (কেননা) শয়তান সর্বদা
তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’
(বনী ইসরাঈল ১৭/৫৩)।
শয়তান ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইদের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি
করেছিল তা সকলেরই জানা। মহান আল্লাহ সূরা ইউসুফের ১০০নং আয়াতে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
আর এমন পরিস্থিতির মোকাবেলায় মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ
مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ-
শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর
আশ্রয় গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
(আ‘রাফ ৭/২০০; ফুছছিলাত বা হা-মীম-সাজদাহ ৪১/৩৬)
৯. শয়তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয় যে কাজে :
শয়তান তার কুকর্মের মাঝে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় কাজ বা খুশির বিষয় হল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে দেয়।কারণ এতে একটা সংসার ভেঙ্গে যায় এবং দু’টা পরিবারের মাঝে চরম শত্রুতা তৈরী হয়ে যায়।
জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ إِبْلِيْسَ
يَضَعُ عَرْشَهُ عَلَى الْمَاءِ، ثُمَّ يَبْعَثُ سَرَايَاهُ، فَأَدْنَاهُمْ مِنْهُ
مَنْزِلَةً أَعْظَمُهُمْ فِتْنَةً، يَجِيْءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُوْلُ: فَعَلْتُ
كَذَا وَكَذَا، فَيَقُوْلُ: مَا صَنَعْتَ شَيْئًا، قَالَ ثُمَّ يَجِيْءُ
أَحَدُهُمْ فَيَقُوْلُ: مَا تَرَكْتُهُ حَتَّى فَرَّقْتُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ
امْرَأَتِهِ، قَالَ: فَيُدْنِيْهِ مِنْهُ وَيَقُوْلُ: نِعْمَ أَنْتَ قَالَ
الْأَعْمَشُ: أُرَاهُ قَالَ: فَيَلْتَزِمُهُ-
ইবলীস পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করতঃ তার
বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্য প্রাপ্ত সেই, যে সর্বাধিক
ফেতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক অমুক কাজ করেছি।
সে বলে তুমি কিছুই করনি। অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সাথে আমি
সকল প্রকার ধোঁকার আচরণই করেছি। অবশেষে তার ও তার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি।
অতঃপর শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে হ্যাঁ, তুমি
একটি বড় কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আ‘মাশ (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়,
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের
সাথে জড়িয়ে নেয়’।
মুসলিম হা/২৮১৩।
কবরবাসীরা কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে না।
তাই কবরবাসীদের নিকট কোন কিছু কামনা করা জায়েয নয় বরং শিরক। যদিও কোন কোন কবর থেকে
অলৌকিক কিছু প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন- কবর থেকে আলো বের হওয়া, সুঘ্রান বের
হওয়া ইত্যাদি।
( ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান অধ্যায়, পর্ব-৭৯ )
আমরা অনেক সময় শুনে থাকি কারো কবরের উপর ঐ মৃত
ব্যক্তিকেই দাঁড়ানো অবস্থায় বা বসা অবস্থায় অথবা অন্য কোন অচেনা মৃত ব্যক্তিকে দেখেছে।
আবার ভাঙ্গা কবরে সাপ পেঁচানো লাশ দেখেছে। এগুলো সবই শয়তানের ধোঁকা মাত্র। মনে রাখতে
হবে কবরের কোন শাস্তি নবী ব্যতীত দুনিয়ার মানুষ ও জিনকে দেখানো হবে না।
অতএব কেউ যদি অনুরূপ দেখে তবে বুঝতে হবে এটা শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই নয়।
১০. কু-কর্ম, অশ্লীলতা ও নিন্দনীয় কর্মের আদেশ দেয় :
মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا
الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ
خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَى مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ
أَبَدًا وَلَكِنَّ اللهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ-
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের
পদাংক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের অনুসরণ করে, সে তো তাকে
নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত
তাহলে তোমাদের কেউ কখনো পবিত্র হতে পারতে না। তবে আল্লাহ যাকে চান তাকে পবিত্র করেন
এবং আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।
(নূর ২৪/২১)
তিনি আরো বলেন,
‘সে তো তোমাদের কেবল মন্দ ও অশ্লীল
কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জানো না এমনসব বিষয় তোমাদের বলার নির্দেশ দেয়।
(বাক্বারাহ ২/১৬৯)।
শয়তানের নির্দেশে কখনো অশ্লীল কাজে জড়িত হওয়া যাবে না।
মহান আল্লাহ বলেন,
,قُلْ إِنَّمَا
حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ
وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ
بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ-
তুমি বল, নিশ্চয়ই আমার প্রভু প্রকাশ্য
ও গোপন সকল প্রকার অশ্লীলতা হারাম করেছেন এবং হারাম করেছেন সকল প্রকার পাপ ও অন্যায়
বাড়াবাড়ি। আর তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না যে বিষয়ে তিনি কোন প্রমাণ নাযিল
করেননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বল না যে বিষয়ে তোমরা কিছু জান না।
(আ‘রাফ ৭/৩৩)।
একবার হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে
ফযল ইবনে আববাস (রাসূলের চাচাত ভাই) উটে আরোহী অবস্থায় ছিলেন। এক যুবতী মহিলা বৃদ্ধ
পিতার বদলী হজ্জের ফৎওয়া তলব করতে আসলে তিনি ফযলের ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য দিকে করে দিলেন।
আববাস (রাঃ) বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনার চাচাত ভাইয়ের ঘাড় ঘুরিয়ে দিলেন কেন?
তিনি বললেন, আমি দেখলাম, এরা দু’জন হল যুবক-যুবতী। আমি তাদেরকে শয়তান থেকে নিরাপদ মনে করিনি।
( তিরমিযী হা/৮৮৫ )
এতে বুঝা যায় অশ্লীল ও অপসন্দনীয় কিছু ঘটার সন্দেহপূর্ণ অবস্থাতেই শতর্ক হতে হবে। অন্যথায় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
১১. বিপদগ্রস্তকে একা ফেলে চলে যাওয়া, বিপদ কালে ধোঁকা দেয়া, পথভ্রষ্ট করা, নিরাশ করা :
যারা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে রাসূল (ছাঃ)-এর পথের সাথে অন্য পথ অবলম্বন করে চলে, তারা হাশরের মাঠে নিজেদের হাত কামড়িয়ে আফসোস করবে এবং বলবে
لَقَدْ أَضَلَّنِيْ
عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِيْ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ
خَذُولًا
আমার কাছে উপদেশ (কুরআন) আসার পর সে আমাকে
পথভ্রষ্ট করেছিল। বস্তুত শয়তান মানুষের জন্য পথভ্রষ্টকারী।
(ফুরক্বান ২৫/২৯ )
বদরের যুদ্ধের পূর্বে কাফেরদেরকে শয়তান খুব সহযোগিতার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু যখন বিপদ ঘনীভূত হয়ে আসল তখন সে তার দলবল নিয়ে কাফের কুরাইশদেরকে
মাঠে ফেলে পলায়ন করল।
কখনো কখনো শয়তান অনেককে কুফুরী করতে আদেশ দিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
মহান আল্লাহ বলেন
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ
إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّيْ بَرِيْءٌ مِنْكَ
إِنِّي أَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ-
তাদের দৃষ্টান্ত শয়তানের মত, যে মানুষকে
বলে কুফরী কর। অতঃপর যখন সে কুফরী করে, তখন বলে আমি তোমার থেকে
মুক্ত। আমি বিশ্ব চরাচরের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।
(হাশর ৫৯/১৬)।
১২. ভাল ও কল্যাণমূলক কাজে বাধা প্রদান করা :
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا يُرِيْدُ
الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ
وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ
مُنْتَهُوْنَ-
শয়তান তো কেবল চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ
সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হতে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব এক্ষণে তোমরা
নিবৃত্ত হবে কি ? ।
(মায়েদাহ ৫/৯১)
এমনিভাবে শয়তান সাবা বাসীদেরকে আল্লাহর ইবাদত থেকে সূর্যের ইবাদতে মত্ত রাখে।
মহান আল্লাহ বলেন, (হুদহুদ পাখির
ভাষায় )
وَجَدْتُهَا وَقَوْمَهَا
يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ
فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ-
আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহকে
ছেড়ে সূর্যের পূজা করছে। শয়তান তাদের কর্মসমূহকে তাদের নিকট শোভনীয় করে দিয়েছে এবং
তাদেরকে (আল্লাহর) পথ থেকে বিরত রেখেছে। ফলে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয় না ।
(নমল ২৭/২৪)
আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করে দিয়ে বলেন,
,وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ
الشَّيْطَانُ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ-
আর শয়তান যেন তোমাদেরকে (আমার অনুসরণ থেকে) বিরত না রাখে। সে তোমাদের প্রকাশ্য
শত্রু ।
(যুখরুফ ৪৩/৬২ )
যারা আল্লাহর রাস্তায় তথা কল্যাণের পথে বাধা প্রদান করে তাদের অশুভ পরিণতির কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন,
الَّذِيْنَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللهِ زِدْنَاهُمْ
عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يُفْسِدُوْنَ-
যারা কুফরী করেছিল এবং আল্লাহর পথে বাধা দান করেছিল, আমরা তাদের
শাস্তির উপর শাস্তি বাড়িয়ে দেব। কারণ তারা (পৃথিবীতে) অশান্তি সৃষ্টি করত।
(নাহল ১৬/৮৮)
১৩. মানুষকেপরাভূত করা:
যারা সত্যিকার মিথ্যাবাদী শয়তান তাদেরকে পরাভূত করে নিজেদের দলভুক্ত করে নিয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন,
يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ
اللهُ جَمِيْعًا فَيَحْلِفُوْنَ لَهُ كَمَا يَحْلِفُوْنَ لَكُمْ وَيَحْسَبُوْنَ
أَنَّهُمْ عَلَى شَيْءٍ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُونَ، اسْتَحْوَذَ
عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ أُولَئِكَ حِزْبُ
الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ-
যে দিন আল্লাহ তাদের সবাইকে পুনরুত্থিত করবেন তখন তারা আল্লাহর সামনে শপথ করবে।
যেমন তারা তোমাদের সামনে শপথ করে এবং তারা ধারণা করে যে, তারা
যথেষ্ট হেদায়াতের উপর রয়েছে। সাবধান! ওরাই হল মিথ্যাবাদী। শয়তান তাদের উপর বিজয়ী হয়েছে
…’
(মুজাদালা ৫৮/১৮-১৯)।
আবুদ দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,
مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِيْ قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ
فِيهِمُ الصَّلَاةُ إِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ،
فَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ؛ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ-
‘যখন কোন গ্রামে বা বন-জঙ্গলে তিন
জন লোক একত্রিত হয় এবং জামা‘আতে ছালাত আদায় না করে তখন শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার
করে। অতএব তোমরা জমা‘আতে ছালাত আদায় কর। কেননা দলচ্যুত বকরীকে নেকড়ে বাঘে ভক্ষণ করে
থাকে’।
(নাসাঈ হা/৮৪৭; মিশকাত হা/১০৬৭; ইবনে কাছীর ৪/৪২১ )
হুযায়ফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে আহার করতে বসলে তিনি খাবারে হাত না রাখা পর্যন্ত আমরা হাত দিতাম না। একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে খাবার খেতে উপস্থিত হলাম।
فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ
كَأَنَّهَا تُدْفَعُ، فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ، فَأَخَذَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهَا، ثُمَّ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ
كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَأَخَذَ بِيَدِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا
يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ، وَإِنَّهُ جَاءَ بِهَذِهِ الْجَارِيَةِ
لِيَسْتَحِلَّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا، فَجَاءَ بِهَذَا الْأَعْرَابِيِّ لِيَسْتَحِلَّ
بِهِ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ يَدَهُ فِي يَدِي
مَعَ يَدِهَا وَزَادَ فِي آخِرِ الْحَدِيثِ: ثُمَّ ذَكَرَ اسْمَ اللهِ وَأَكَلَ-
হঠাৎ একটি বালিকা এমনভাবে এল, যেন তাকে পিছন
থেকে ধাক্কা দেওয়া হচ্ছিল। সে নিজ হাতে খাবার গ্রহণ করতে উদ্যত হয়েছিল, এমন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার হাত ধরে নিলেন। তারপর এক বেদুঈনও অনুরূপভাবে
এসে খাবারে হাত দিতে উদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার হাত ধরে নিলেন এবং বললেন,
যে খাবারে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি শয়তান সে খাদ্যকে হালাল মনে করে। এই
মেয়েটিকে এবং বেদুঈনটিকে শয়তানই নিয়ে এসেছে যেন তার দ্বারা নিজের জন্য খাদ্য হালাল
করে নিতে পারে। কিন্তু আমি ওদের হাত ধরে ফেললাম। সেই মহান সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার
প্রাণ আছে, শয়তানের হাত ঐ দু’জনের হাতের সঙ্গে আমার হাতে ধরা
পড়েছিল। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহ বলে আহার করলেন।
( বুখারী হা/৩২৮০; মুসলিম হা/২০১৭; আবূদাঊদ হা/৩৭৬৬ )
উল্লেখিত হাদীছ থেকে বুঝা যায়, শয়তান তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে পরাভূত করে ফেলেছিল কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে টিকতে পারেনি।
ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিইয়া (রঃ) বলেন, সাবধান! জেনে
রেখ! ইবলীসের প্রথম প্ররোচনা হল মানুষকে ইলম অর্জনে বাধা প্রদান করা। কারণ ইলম হল হেদায়াতের
আলো। যদি এই আলো নিভিয়ে দিতে পারে তাহলে মানুষকে জাহিলিয়াতের অন্ধকারে যেমন খুশি তেমন
ডুবিয়ে দিতে পারে। এমনকি তাদের ভক্তদের বিবাহের মত সুন্নাত পরিত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করে। সংসার বিরাগী করে
ছূফী মতবাদের দিকে ঠেলে দেয়। গ্রহণ করে বৈরাগ্য সাধন, ইবাদত করে
পাহাড়ে বসে, ত্যাগ করে জুম‘আ ও জামা‘আত।
( সার সংক্ষেপ : ইগাছাতুল লাহফান ফি মাছায়িদিশ শায়ত্বান ১/১৬ )
১৪. প্ররোচনা দেওয়া, বার্তা পাঠানো :
শয়তান তার সমর্থকদের মাঝে প্ররোচনা দেয়, অবহিত করে। ফলে ঝগড়া-বিবাদ ও ফিৎনা-ফাসাদ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ
لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ-
আর শয়তানরা তাদের বন্ধুদের প্ররোচনা দেয় যেন তারা
তোমাদের সাথে বিতন্ডা করে। তবে যদি তোমরা তাদের (শিরকী যুক্তির) আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা
অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে।
(আন‘আম ৬/১২১)
তিনি আরো বলেন,
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا
لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ
إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا
‘এভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিনের
মধ্য থেকে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে নিযুক্ত করেছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে
চাকচিক্যপূর্ণ কথা দ্বারা প্ররোচনা দেয়’
(আন‘আম ৬/১১২)।
ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
যখন নূহ (আঃ)-এর কওমের ভাল লোকগুলো মৃত্যুবরণ করল তখন শয়তান তাদের নিকট
বার্তা পাঠাল যে
,أَنِ انْصِبُوا إِلَى
مَجَالِسِهِمُ الَّتِي كَانُوا يَجْلِسُونَ أَنْصَابًا وَسَمُّوهَا
بِأَسْمَائِهِمْ، فَفَعَلُوا، فَلَمْ تُعْبَدْ، حَتَّى إِذَا هَلَكَ أُولَئِكَ
وَتَنَسَّخَ العِلْمُ عُبِدَتْ
তারা যেখানে বসে মজলিস করত, সেখানে তোমরা
কতিপয় মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সমস্ত পুন্যবান লোকের নামেই এগুলোর নামকরণ কর। কাজেই
তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি
স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলোর ব্যাপারে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে
লোকজন তাদের পূজা আরম্ভ করে দেয়’।
বুখারী হা/৪৯২০।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ আসমানে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা জারী করলে
ফেরেশতারা বিনয়াবনত হয়ে পাখা ঝাপটাতে থাকে। … ফেরেশতাদের পারস্পরিক আলোচনা শয়তান ওঁৎ
পেতে শোনে এবং ভূপৃষ্ঠে অবস্থানকারী তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে তা পৌঁছে দেয়। কখনো তা
নিম্নে অবস্থানকারীদের কাছে পৌঁছানোর পূর্বে তাদের প্রতি উল্কাপিন্ড নিক্ষেপ করা হয়।
শ্রুত কথা তারা পৃথিবীতে এসে গণক অথবা যাদুকরের সামনে পেশ করে। আবার কখনো তারা কিছুই
শুনতে পায় না বরং নিজেদের পক্ষ থেকে তা গণক ও যাদুকরের মুখে তাদের কথার সাথে সত্য মিথ্যা
যোগ করে পেশ করে। তাই কেবল সত্য সেটিই হয় যা তারা আসমান থেকে শোনে’।
( বুখারী হা/৪৭০১; ইবনে মাজাহ হা/১৯৪; তিরমিযী হা/৩২২৩ )
১৫. অপচয় করা :
মহান আল্লাহ অপচয় করতে নিষেধ করে বলেন
,وَلَا تُبَذِّرْ
تَبْذِيرًا، إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ
الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا-
আর তুমি মোটেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা
শয়তানের ভাই। আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
(বনী ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭)
অপচয়রোধে হাদীছে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে,
عَنِ المُغِيرَةِ بْنِ
شُعْبَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ
اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ: عُقُوقَ الأُمَّهَاتِ، وَوَأْدَ البَنَاتِ،
وَمَنَعَ وَهَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ،
وَإِضَاعَةَ المَالِ
মুগীরা বিন শু‘বাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম
(ছাঃ) বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন,
মায়েদের অবাধ্যাচরণ করা, অধিকার প্রদানে বিরত থাকা
ও অনধিকার কিছু প্রার্থনা করা এবং জীবন্ত কন্যা প্রোথিত করা। আর তোমাদের জন্য অপসন্দ
করেছেন, ভিত্তিহীন বাজে কথা বলা, অধিক প্রশ্ন
করা, ধন-সম্পদ অপচয় করা’।
( বুখারী হা/৫৯৭৫; মুসলিম হা/৫৯৩ )
দয়াময় আল্লাহর বান্দাদের গুণাবলী উল্লেখ করতে
গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
,وَالَّذِيْنَ إِذَا
أَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا-
তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে
না। বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে’
(ফুরক্বান ২৫/৬৭)।
তাহলে বুঝা গেল অপচয়কারী শয়তানের ভাই, আর অপচয় না করা হচ্ছে দয়াময় (রহমান) আল্লাহর খাঁটি বান্দা হিসাবে নিজেকে পরিগণিত করা।
১৬. যাদু করা :
যাদু করা শয়তানের কাজ। এটা কবীরা গোনাহ। মহান আল্লাহ বলেন,
,وَاتَّبَعُوْا مَا
تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ
وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ
আর তারা ঐসবের অনুসরণ করল, যা আবৃত্তি
করত শয়তানেরা সুলায়মানের রাজত্বকালে। আর সুলায়মান কুফরী করেনি বরং শয়তানেরাই কুফরী
করেছিল। যারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত’।
(বাক্বারাহ ২/১০২)
এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাদুকে ধ্বংসাত্মক সাত বস্ত্তর অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন
اجْتَنِبُوا السَّبْعَ
المُوبِقَاتِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللهِ،
وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالحَقِّ،
وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ،
وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلاَتِ-
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্ত্ত
থেকে সাবধান থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী হে আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, ১. আল্লাহর সাথে শিরক করা ২. যাদু করা।’
৩. কোন ব্যক্তিকে হত্য করা, যার হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন,
তবে হকভাবে হত্যা করা যাবে। ৪. সূদ খাওয়া। ৫. ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করা।
৬. যুদ্ধের দিন ময়দান হতে পালিয়ে যাওয়া। ৭. সতী-সাধ্বী স্ত্রীলোকদের উপর যেনার মিথ্যা
অপবাদ দেওয়া যে সম্পর্কে তারা অনবহিত থাকে’।
( বুখারী হা/২৭৬৬; মুসলিম হা/৮৯; আবূ দাঊদ হা/২৮৭৪ )
শয়তান আসমান থেকে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের আলাপ গোপনে
শ্রবণ করে এসে যাদুকরদের কাছে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে প্রকাশ করে।
( বুখারী হা/৪৭০১ )
এরপর গণক, যাদুকররা তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে। সুতরাং যাদু করা শয়তানের কাজ, যা সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য।
১৭. لو (লাও) শব্দের ব্যবহার :
লাও (لو) অর্থ ‘যদি’। ‘যদি’ বলে কোন কথায় সন্দেহ সৃষ্টি অথবা কোন কর্মে ভুল সংশোধন করার জন্য এমন বাক্য ব্যবহার করে যার মধ্যে শির্কী নমুনা পাওয়া যায়। এটা শয়তানের কাজ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন
,فَإِنْ أَصَابَكَ
شَيْءٌ، فَلَا تَقُلْ: لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا، وَلَكِنْ قُلْ:
قَدَّرَ اللهُ، وَمَا شَاءَ فَعَلَ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ-
তোমার কোন ক্ষতি হলে এভাবে বল না, যদি আমি এরূপ
এরূপ করতাম, বরং বল আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চান
তাই করেন। কারণ ‘লাও’ (لو) বা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কর্মকান্ডের দ্বার খুলে দেয়’।
( মুসলিম হা/২৬৬৪; ইবনে মাজাহ হা/৭৯ )
১৮. শয়তানের খোঁচা :
বিভিন্ন সময় শয়তান মানুষকে খোঁচা মারে। যেমন-
যয়নব বিনতে জাহাশের বোন হামনা বিনতে জাহাশ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি চরম ইস্তিহাযায় (মাসিক সংক্রান্ত রোগ) আক্রান্ত ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর নিকটে এসে এ বিষয়ে ফৎওয়া জানতে চাইলে তিনি (এক পর্যায়ে) বললেন,
إِنَّمَا هِيَ رَكْضَةٌ مِنَ الشَّيْطَانِ
নিশ্চয়ই এটা হল শয়তানের খোঁচা’।
তিরমিযী হা/১২৮।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ لِلشَّيْطَانِ
لَمَّةً بِابْنِ آدَمَ وَلِلْمَلَكِ لَمَّةً فَأَمَّا لَمَّةُ الشَّيْطَانِ
فَإِيعَادٌ بِالشَّرِّ وَتَكْذِيبٌ بِالحَقِّ، وَأَمَّا لَمَّةُ المَلَكِ
فَإِيعَادٌ بِالخَيْرِ وَتَصْدِيقٌ بِالحَقِّ، فَمَنْ وَجَدَ ذَلِكَ فَلْيَعْلَمْ
أَنَّهُ مِنَ اللهِ فَلْيَحْمَدِ اللهَ وَمَنْ وَجَدَ الأُخْرَى فَلْيَتَعَوَّذْ
بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، ثُمَّ قَرَأَ {الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ
الفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالفَحْشَاءِ}
আদম সন্তানের প্রতি ফেরেশতাদের ১টি স্পর্শ রয়েছে
এবং শয়তানের ১টি স্পর্শ রয়েছে। ফেরেশতার স্পর্শ হল কল্যাণ কাজে উৎসাহিত করা এবং সত্যকে
স্বীকার করা। শয়তানের স্পর্শ হল মন্দ কাজের প্ররোচনা দেওয়া ও সত্যকে অস্বীকার করা।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন, শয়তান তোমাদের দারিদ্রের ভয়
দেখায় এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি
দেন’।
( বাক্বারাহ ২/২৬৮; তিরমিযী হা/২৯৮৮ )
অন্যত্র তিনি বলেন
,مَا مِنْ بَنِي آدَمَ
مَوْلُودٌ إِلَّا يَمَسُّهُ الشَّيْطَانُ حِيْنَ يُولَدُ، فَيَسْتَهِلُّ صَارِخًا
مِنْ مَسِّ الشَّيْطَانِ، غَيْرَ مَرْيَمَ وَابْنِهَا-
এমন কোন আদম সন্তান নেই, যাকে জন্মের
সময় শয়তান স্পর্শ করে না। আর শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে উঠে। তবে মারইয়াম
(আঃ) এবং তার ছেলে ঈসা (আঃ) ব্যতীত’।
( বুখারী হা/৩৪৩১; বঙ্গানুবাদ বুখারী (ইফাবা) হা/৩০৫৬ )
তিনি আর বলেন
,إِنَّ اللهَ مَعَ
القَاضِي مَا لَمْ يَجُرْ، فَإِذَا جَارَ تَخَلَّى عَنْهُ وَلَزِمَهُ
الشَّيْطَانُ، ‘
বিচারক যতক্ষণ যুলুমে লিপ্ত না হবে ততক্ষণ আল্লাহ
তা‘আলা তার সঙ্গে থাকেন। যখন সে যুলুমে লিপ্ত হয় তখন তিনি তাকে ছেড়ে চলে যান আর শয়তান
তাকে আকড়ে ধরে।
( তিরমিযী হা/১৩৩০ )
১৯. শয়তানের পেশাব :
স্বলাত আদায় না করে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকলে শয়তান ঐ ব্যক্তির কানে পেশাব করে দেয়।
আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন
,ذُكِرَ عِنْدَ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ نَامَ لَيْلَهُ حَتَّى
أَصْبَحَ، قَالَ: ذَاكَ رَجُلٌ بَالَ الشَّيْطَانُ فِي أُذُنَيْهِ، أَوْ قَالَ:
فِي أُذُنِهِ ‘
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এমন এক লোকের ব্যাপারে
উল্লেখ করা হল,
যে সারারাত এমনকি ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়েছিল। তখন তিনি বললেন, সে এমন লোক যার উভয় কানে অথবা তিনি বলেছেন, তার কানে
শয়তান পেশাব করেছে।
( বুখারী হা/৩২৭০ )
ফলে সে শয়তানের তাবেদার হয়ে যায়।
২০. শয়তানের গিঁট :
ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘাড়ে শয়তান মন্ত্র পড়ে গিঁট দেয়, যাতে সে স্বলাতের জন্য না উঠতে পারে।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন
, يَعْقِدُ
الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ
يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ، فَارْقُدْ فَإِنِ اسْتَيْقَظَ
فَذَكَرَ اللَّهَ، انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ،
فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ
وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ-
তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের
পশ্চাদংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এই মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে
রয়েছে দীর্ঘ রাত। অতএব তুমি ঘুমাও’। অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহ’লে একটি
গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযূ করে তবে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি ছালাত আদায়
করে, তাহ’লে সমস্ত গিঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় আনন্দ ফুর্তি
ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে উঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে’।
( বুখারী হা/১১৪২; মুসলিম হা/৭৭৬ )
২১. শয়তানের ছোঁ :
স্বলাতে মুছল্লীর মনোযোগ বিঘ্ন করার জন্য শয়তান
ছোঁ মারে। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে স্বলাতে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম।
তিনি বলেন
,هُوَ اخْتِلاَسٌ
يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلاَةِ العَبْد
এ হল এক ধরনের ছোঁ মারা। এতে শয়তান কারো স্বলাত
থেকে ছোঁ মেরে কিছু অংশ
নিয়ে যায়।
( বুখারী হা/৭৫১;
তিরমিযী হা/৫৯০ )
অর্থাৎ স্বলাতে মুসল্লির পরিপূর্ণ মনোযোগ থাকার কথা ছিল কিন্তু এদিক সেদিক তাকানোর কারণে শয়তান কিছু অংশ নিয়ে যায়।
২২. দুঃস্বপ্ন :
শয়তানের পক্ষ থেকে দুঃস্বপ্ন দেখানো হয়ে থাকে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন
,الرُّؤْيَا
الصَّالِحَةُ مِنَ اللهِ، وَالحُلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَإِذَا حَلَمَ
فَلْيَتَعَوَّذْ مِنْهُ، وَلْيَبْصُقْ عَنْ شِمَالِهِ، فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ
‘ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে
(অন্য বর্ণনায় সুন্দর স্বপ্ন হ’ল আল্লাহর পক্ষ থেকে) এবং দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে
দেখানো হয়। সুতরাং যে অপ্রীতিকর কিছু দেখবে, সে যেন তার বাম দিকে
তিনবার হাল্কাভাবে থুক মারে ও শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে তা তাকে কোন ক্ষতি
করতে পারবে না।
( বুখারী হা/৬৯৮৬; মুসলিম হা/২২৬১; তিরমিযী হা/২২৭৭ )
শয়তানের কাজ হল মানুষকে কষ্ট দেয়া। দুঃস্বপ্ন দেখানোর মাধ্যমে সে মানুষকে কষ্ট দেয়।
সংকলনে,
এইচ.এম.হুজ্জাতুল্লাহ
Hmhuzzatullah2019@gmail.com
No comments
Post a Comment