দেশীয় পীরদের ভ্রান্ত আকিদাহ-বিশ্বাস
দেশীয় পীরদের ভ্রান্ত আকিদাহ-বিশ্বাস
ভারত উপমহাদেশে পীরন্ত্র বা সূফীবাদ ধর্মের মধ্যে প্রবেশ করেছে মূলত হিন্দু ও খৃস্টানদের থেকে। পরবর্তীতে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জনসাধারণ এটাকে ধর্মের অংশ মনে করে নিয়েছে। এই সুযোগে একশ্রেণীর মানুষ জনগণের অর্থ ও ঈমান লুন্ঠন করে নিচ্ছে।
নিম্নে তাদের কয়েকজনের ঈমান বিধ্বংসী আকিদাহ-বিশ্বাস সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।
০১= সুরেশ্বরী পীর
‘সুরেশ্বর’ শরিয়তপুর জেলার অন্তর্গত নড়িয়া থানার একটি গ্রাম। পীরের নাম শাহ সূফী সৈয়দ আহম্মদ আলী ওরফে হযরত শাহ সূফী সৈয়দ জান শরীফ। তাদের মাসিক পত্রিকার নাম “সুরেশ্বর”
নিম্নে তাদের ভ্রান্ত আকিদাহ-বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
1. গান,বাজনা,সামা,হাতের তালি বাজানো ও নৃত্য সবই বৈধ।
3. তারা মাযারে গিলাফ,ফুল,আগরবাতি,মোমবাতি ও গোলাপ জল দেয়ার প্রবক্তা।
( নুরে হক গঞ্জে নুর-২৫ পৃ )
5. কামেল ওলীর কোন ইবাদত-বন্দেগীর প্রয়োজন হয় না। সুরেশ্বরী লিখেছে-
মালামতি দেখ যারে, রোযা নামায নাহি পড়ে, আওয়ারেকে দেখ বন্ধুগণ।
( নুরে হক গঞ্জে নুর-১৩৩ )
6. আহলুল্লাহ যারা পুরাপুরিভাবে মহান আল্লাহর একত্ববাদের সাথে মিশে গেছেন,তাদের নিকট তো ফরজ বলতে কিছু নেই।
( মাতলাউল উলুম গ্রন্থ
)
7. আহাদ ও আহমাদ এর মীমের মধ্যে পার্থক্য কেবল হামদ ও নাতের জন্য।
( মাসিক সুরেশ্বর-২৭, মার্চ-২০০৩ )
8. রাসুল সা তিনি এলমে গায়েবের অধিকারী।
( মাসিক সুরেশ্বর-০৮, জানুয়ারী-২০০৩ )
০২=আটরশি পীর
আটরশি পীরের খানকা ফরিদপুর শহরের নিকটস্থ আটরশি বিশ্বজাকের মঞ্জিল। প্রতিষ্ঠাতা শাহ সুফী হাশমত উল্লাহ। তিনি এনায়েতপুরের পীর শাহসুফী মুহাম্মাদ উইসুফ আলী এনায়েতপুরীর মুরিদ ও খলিফা।
তার ও তার অনুসারীদের আকীদাহ-বিশ্বাস সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।
1. ভাল-মন্দ পীরের হাতে।
আটরশির পীর বলেছে,এনায়েতপুরী ছাহেব তিরোধানের পূর্বে আমাকে বলিয়া গিয়াছেন,বাবা, তোর ভাল ও মন্দ উভয়টাই আমার হাতে রইল।তোর কোন চিন্তা নেই।
( শাহসুফী হযরত ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত,খন্ড-৩,পৃ-১১১ )
2. পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আবশ্যকতা নেই।
আটরশি পীর বলেছে, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খৃষ্টানগণ নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করতে পারে এবং তাহলেই কেবল বিশ্বে শান্তি আসতে পারে।
( আটরশির কাফেলা সংকলনে মাহফুযুল হক,পৃ-৮৯ )
3. পীর পরকালে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন।
( ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্তমতবাদ-৪৯৬ )
4. পীর দুনিয়াতে সব ধরণের বিপদ-আপদ
থেকে রক্ষা করতে পারেন।
( ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্তমতবাদ-৪৯৭ )
5. ওরস শরীফ কাজা করিলে পরবর্তী এক বছরের জন্য বহু দুর্ভোগ পোহাইতে হয়। যাবতীয় আয়-উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়।
( শাহসুফী হযরত ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত,খন্ড-২১,পৃ-৪৯ )
৩=চন্দ্রপূরী পীর
ফরীদপুর জেলা শহরের অদূরে চন্দ্রপাড়া গ্রামের অধিবাসী মৌঃ সায়িদ আবুল ফযল সুলতান আহমাদ চন্দ্রপাড়া পীর নামে খ্যাত। তিনি শাহ সূফী উইনুস আলী এনায়েতপূরীর শিস্য এবং দেওয়ানবাগী পীর মাহবূব-এ খোদার পীর ও শ্বশুর।
নিম্নে তার ভ্রান্ত আকীদা সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
1. কোন লোক যখন মাকামে ছূদূর,নশওড়,শামসী,নূরী,কূরবে মাকিনের মোকাম অতিক্রম করিয়া নফসির মোকামে গিয়ে পৌছে,তখন তাহার কোন ইবাদত থাকে না।
( হাক্কূল ইয়াকিন,প-২৯ )
2. ফানার শেষ দরজায় গিয়ে পৌছলে তখন ইবাদত করা কুফরি।
( হাক্কুল ইয়াকিন,পৃ-২৯ )
৪=এনায়েতপুরী পীর
সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরের পীর মাওলানা শাহ ছুফী মোহাম্মাদ উইনুছ আলী এনায়েতপুরী পীর। ১৩০০ হিজরি জন্ম এবং ১৩৭১ হিজরিতে মারা যায়।
নিম্নে তার ও তার অনুসারীদের ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
1. পীর সাহেব মারা যাওয়ার কয়েকদিন পূর্বে বলেছে, আমার বংশের তেফেল শিশু বাচ্চাকেও যদি তোমরা পাও,তাহাকে মাদারজাত ওলি মনে করিও।
( খাজা উইনুসিয়া নকসেবন্দিয়া তরিকার অজিফা , ২য় সংস্করণ ,অক্টোবর ২০০২,পৃ-২৫ )
2. তাদের মতে, আল্লাহ ও রাসুলের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ হলেন আহাদ আর রাসুল হলেন আহমাদ। উভয়ের মাঝে কেবল একটি মীম হরফ ।
তাদের রচিত কবিতা নিম্নরূপ-
বানাইয়া নূর নবী দেখাইলেন আপনা ছবি
সেই নবীজীর চরণ বিনে নাইগো পরিত্রাণ।
আহাদে আহম্মদ বানাইয়ে,মিমকা পদ মাঝে দিয়ে
খেলতিয়াছেন পাক বারি হইয়া বে-নিশান।
( পুষ্পহার,মৌঃ মোঃ আব্দুর রহমান মোজাদ্দেদী-পৃ-৩৬
)
3. এনায়েতপুরী বলে, পীর ধরা সবার জন্য ফরয।
( তরিকতের অজিফা শিক্ষা,পৃ-২৬ )
4. হযরত মোহাম্মদ (ছ) এর ৪ কুরছি জানা ৪ ফরয ।,৪মাজহাব মানা ৪ ফরয,
( শরিয়তের আলো,পৃ-৩৮-৩৯ )
5. তাদের মতে,পীর মানুষের সব আশা পূরণ করে। যেমন তাদের কবিতায় এসেছে –
খাজা তোমার দরবারে কেউ ফিরে না খালী হাতে
খাজা তোমার পাক রওজায় এসে যদি কেউ কিছু চায়
চাইতে জানলে রয়না কাঙ্গাল অফুরন্ত ভান্ডারে।
( পুষ্পাদ্যান-পৃ ৭৬ )
6. তাদের মতে, যে এনায়েতপুরীর সাক্ষাত পেয়েছে,সে জান্নাতি।
( গাঞ্জে আছরার বা মারেফতের তত্ব,পৃ-৯৮ )
৫= দেওয়ানবাগী পীর
তার নাম মাহবুবে খোদা। জন্ম ১৪ ডিসেম্বর ১৯৪৯ সালে। দেওয়ানবাগ ও আরামবাগে দুটি দরবার শরীফ স্থাপন করে। তার ভক্তরা তাকে সুফী সম্রাট বলে।তার প্রতিষ্ঠিত সুফী ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ,যেখান থেকে কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘মাসিক আত্মার বানী’ ও ’সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ’ নামে পত্রিকা রয়েছে।
এসব প্রকাশিত পুস্তক থেকে তাদের আকিদাহ-বিশ্বাস সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।
1. মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ জরুরী নয়।
( আল্লাহ কোন পথে ?
,ডিসেম্বর -১৯৯৭ খৃ, পৃ-১১৩-১১৪ )
2. জান্নাত,জাহান্নাম, হাশর,মিযান,পুলসিরাত, মীযান, কিরামান কাতেবীন, ফেরেশতা ইত্যাদি যাবতীয় ঈমান সম্পর্কিত বিষয়কে অস্বীকার করে।
( ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্তমতবাদ-৫০৭ )
6. আদম আ ও হাওয়া আ এর নিষিদ্ধ ফল খাওয়া সম্বন্ধে তার কথা হল- এই ফল দ্বারা যদি গন্দম ফল ধরা হয়, তাহলে অর্থ হবে গমের আকৃতির ন্যায় নারীদের গোপন অঙ্গ এবং আঞ্জির ফল ধরা হলে তার অর্থ হবে সদ্য যৌবনপ্রাপ্তা নারীর বক্ষ যুগল। অতএব, আদম আ ও হাওয়া আ এর নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ অর্থ তাঁদের যৌন মিলন।
( আল্লাহ কোন পথে ?
, ডিসেম্বর-১৯৯৭ খৃ, পৃ-৯৮)
7. আল্লাহ ও রাসূলকে স্বচক্ষে না দেখে কালীমা পড়ে সাক্ষ্য দেয়ার ও বিশ্বাস করার কোনো অর্থ হয় না।
8. কুরান,কিতাব,হাদীস,তাফসীর পড়ে আল্লাহকে পাওয়া যায় না। একমাত্র মুরশিদদের সাহায্য নিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনা করেই আল্লাহকে পাওয়া সম্ভব, এমনকি দুনিয়াতেই স্বচক্ষে দেখা যায়।
9. আল্লাহর সাথে যোগাযোগ সবই কালবেই (অন্তরেই ) হয়ে থাকে। অন্যভাবে হাজার ইবাদত করেও আল্লাহকে পাওয়া যায় না।
10. আদমের জীরেকদম ( পায়ের নিচে ) কালব। এই কালবে আল্লাহ ও রাসুল থাকেন।
11. মীলাদ সম্পর্কে তাদের শ্লোগান হল, ঘরে ঘরে মীলাদ দাও রাসুলের শাফায়াত নাও।
1. তিনি আসল ইসলামের প্রচারক। তার মতবাদের নাম, মোহাম্মাদী ইসলাম। তার বক্তব্য হল – তার মতবাদের বাইরে সারা বিশ্বে যে ইসলাম চালু রয়েছে এটা আসল ইসলাম নয়, এজিদী ইসলাম,এজিদী চক্রান্তের ফসল।
2. সে রাসুল সা এর জামাতা ও ফাতেমা রা এর স্বামী এবং হাসান ও হুসাইন রা এর পিতা।
3. আল্লাহ তাকে গোটা বিশ্বে খাটি মোহাম্মাদী ইসলাম প্রচারের দায়িক্ত দিয়ে নুরে মোহাম্মাদীর ধারক ও বাহক রুপে পাঠিয়েছেন।
4. তিনি বর্তমান জামানার মোজাদ্দেদ, মহান সংস্কারক, শ্রেষ্ঠতম ওলী-আল্লাহ।
(ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্তমতবাদ-৫০৮-৯ )
এদেশের মাটিতে ধর্মের নামে হাজারো পীর খানকা খুলে বসে আছে। কেউ আবার নিজেকে হক মনে করে অপরকে বাতিল বা কাফের ফতোয়া দেয়। কয়েকদিন আগে চরমোনাইয়ের এক মুরিদ বলছে যে, তার পীরের কবর নাকি অলৌকিকভাবে বড় হয়ে যাচ্ছে। হয়ত বা কিছুদিন পর এটাকে মুজেযা দাবি করে ধর্ম ব্যবসাকে আরো বড় আকার ধারণ করবে। এসব ফেতনা থেকে সাবধান থাকতে হবে নিজেদের ঈমান রক্ষার্থে এবং অন্যদেরও বিরত রাখতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন।
সংকলনে,
এইচ এম হুজ্জাতুল্লাহ
hmhuzzatullah2019@gmail.com
No comments
Post a Comment