বিভিন্ন ভ্রান্ত ফিরকা ও তাদের আকিদাহ-বিশ্বাস পর্ব - ২
বিভিন্ন ভ্রান্ত ফিরকা ও তাদের আকিদাহ-বিশ্বাস
পর্ব - ২
06- কাদরিয়াদের আকিদাহ-বিশ্বাস
এরা তাকদীরকে অস্বীকার করে।নিজেদের সকল কর্মকাণ্ডের উৎস মনে করে থাকে নিজেদেরই।এসম্প্রদায়ের উৎপত্তি হয় সাহাবায়ে কেরামের শেষ যুগে এবং উমাইয়া শাসনামলের প্রথম দিকে।
প্রতিষ্ঠাতা-ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ এর মতে,বসরার অধিবাসী অগ্নিপূজক বংশদূত সীসওয়াহ নামক ব্যক্তি সর্বপ্রথম ইরাকে এই মতবাদ প্রচার করে।
আল্লামা আত-তুফী রহ বলেন,এমতবাদ উদ্ভাবকের নাম সুসান।
সিররুল উয়ুন গ্রন্থে বলা হয়েছে,এমতবাদের বিষয়ে সর্বপ্রথম কথা তোলে ইরাকের এক খৃষ্টান।তারপর সে ইসলাম গ্রহণ করে পুনরায় খৃষ্টান হয়ে যায়। বসরাতে এমতবাদ প্রচার চালায় মা’বাদ এবং দামেস্কে চালায় গায়লান আদ-দামেস্ক।
(ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ২৮৮)
তাদের আকিদাহ সমূহ
1. তারা আল্লাহ তা’য়ালার অনাদি গুণাবলী যথা,ইলম,কুদরাত,হায়াত,শ্রবন,দর্শন ইত্যাদিকে অস্বীকার করে।
2.মানুষের চোখে আল্লাহ তায়ালাকে দেখা অসম্ভব।তাদের মতে আল্লাহ নিজেও দেখবে না এবং তাকেও কেউ দেখতে পারবে না।
3. আল্লাহ তা’য়ালার কালাম মাখলুক। তাঁর আদেশ নিষেধও মাখলুক।
4.মানুষ যেসব কাজ কর্ম করে আল্লাহ সেসব কিছুর সৃষ্টিকর্তা নন।
5.মানুষ ও প্রাণী জগতের কর্মের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালার কোন হাত ও পরিকল্পনা নেই।
6. এউম্মতের মধ্যে যারা ফাসেক তাদের অবস্থা হল তারা মমিন নয় আবার কাফেরও নয় ।
7.কোন মুমিন গোনাহ করলে সে ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়।
8.বান্দার যেসব কর্মচিন্তা সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা কোন আদেশ-নিষেধ করেননি,সেসব বিষয়ে আল্লাহ তা’য়ালার কোন ইচ্ছা এবং ইরাদার সংশ্লিষ্টতাও নেই।
9.তারা মেরাজকে অস্বীকার করে।
10.রুহের জগতে আল্লাহ তা’য়ালার সাথে কৃতওয়াদাকে অস্বীকার করে।
11.তারা জানাযার নামাজের আবশ্যকতাকে অস্বীকার করে।
(ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ২৯২-২৯৪)
07- মুরজিয়াদের আকিদাশ-বিশ্বাস
কবিরাহ গোনাহকারী মুমিন কি মুমিন না- এবিষয়ে বিতর্ক নিয়ে মূলত তাদের উদ্ভব।তাদের মতে কবিরাহ গোনাহকারী মুমিন নয় বরং মুসলিম।
সম্প্রদায়ের প্রবক্তা তাবিয়ী হাসান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব।যার পিতা মুহাম্মাদ ইবনে হানাফী নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
তাদের আকিদাহ-বিশ্বাস হল
1.নাজাতের জন্য ঈমানই যথেস্ট।ইবাদতের কোন উপকারিতা নেই,পাপেও কোনো ক্ষতি নেই।
2.আরশ আল্লাহর থাকার স্থান।
3. নারীগণ বাগানের ফুলের ন্যায়।যে ইচ্ছা সে ভোগ করতে পারে-বিবাহ ইত্যাদির প্রয়োজন নেই।
4.আল্লাহ তায়ালা আদম আ কে তাঁর নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।
(ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ৩০৫)
5.ইমানদার ঈমান গ্রহণের পরে কোন গুনাহ করলে,কোন ক্ষতি হবে না বা তার জন্য আযাব প্রাপ্ত হবে না।
( আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত কি ও কেন ২২ )
০8- জাহমিয়াদের আকিদাহ-বিশ্বাস
উমাইয়া শাসনামলের শেষ দিকে তৎকালীন খোরাসানের অন্তর্গত সমরকন্দের অধিবাসী জাহম ইবনে সাফওয়ান কর্তৃক দলটা প্রতিষ্ঠিত হয়। জাহম ইবনে সাফওয়ান তার গুরু প্রসিদ্ধ যিন্দিক জাদ ইবনে দিরহাম থেকে এমতাদর্শ গ্রহণ করে।
তাদের আকিদাহ-বিশ্বাস হল
1.আল্লাহর কালাম মাখলুক।
2.যেসকল গুণে মাখলুক গুণান্বিত হতে পারে এমন গুণে আল্লাহকে গুণান্বিত করা জায়েয নেই।এজন্য তারা আল্লাহর জীবিত হওয়া,জ্ঞানী হওয়া,ইচ্ছা পোষণকারী হওয়া প্রভৃতি গুণকে অস্বীকার করে।
3. মানুষ নিতান্তই মাযবুর অর্থাৎ কোনো শক্তি,কোনো ইরাদা কোনো এখতিয়ার তার নেই।
4.জান্নাত জাহান্নাম চিরস্থায়ী নয়।জান্নাতে জান্নাতিদের উপভোগ সম্পন্ন হওয়ার পর এবং জাহান্নামে জাহান্নামীদের দুর্ভোগ পোহানো সম্পন্ন হওয়ার পর জান্নাত জাহান্নাম ধ্বংস হয়ে যাবে।
5.ঈমান হল অন্তরের বিষয়,মুখের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
6. ইমানদারের ঈমানের মাঝে কোন মানগত উচু-নিচু পার্থক্য নেই। নবীদের ঈমান ও উম্মতের ঈমান একই মানের।
7. ঈমানের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। অর্থাৎ অন্তরের বিশ্বাস,মুখের স্বীকৃতি ও আমল এই তিন ভাগে ঈমান বিভক্ত নয়।
8. পরকালে আল্লাহর দিদার পাওয়া সম্ভব নয়।
9. মালাকুল মাউত জান কবজ করে না,বরং রুহ সরাসরি আল্লাহ কবজ করেন। মালাকুল মাউতের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
10. আলমে বরযাখ,কবরে মুনকার নাকিরের সওয়াল ও হাউজে কাউসার বলতে কিছুই নেই।বরং এগুলো কল্পিত বিষয়।
(ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ৩০৭-৩০৮)
11. কুরআন মাকলুক।
(গুনইয়াতুত্তালেবীন ২৩৯ )
09- কাররামিয়্যাহদের আকিদাহ-বিশ্বাস
প্রতিষ্ঠাতা আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে কাররাম সিজিস্তানী। জন্ম ১৯০হিজরী,মৃত্যু ২৫৫ হিজরী।
তাদের আকিদাহ সমূহ
1. মুনকার নাকীর ফেরেশ্তাদ্বয় ও কিরামান কাতিবীন আলাদা ফেরেশ্তা,এক নয়।
2. আল্লাহর আকৃতি মানুষের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।
3. আল্লাহর ভারত্ব আছে। (আল্লাহর বানী-যখন আসমান ফেটে যাবে) এর ব্যাখ্যায় ইবনে কাররাম বলে যে,আসমান আল্লাহর ভারে ফেটে যাবে।
4. আল্লাহর বাণী (দয়াময় আরশে সমাসীন) এর ব্যাখ্যায় ইবনে কাররাম বলে,আরশের সাথে আল্লাহর শারীরিক ছোঁয়ার সম্পর্ক বিদ্যমান,আরশ হল আল্লাহর অবস্থানের স্থান।
5. আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি এমন প্রাণ বিশিষ্ট কোন শরীরী সত্তা হওয়া উচিত,যা উপদেশ গ্রহণ করতে সক্ষম।এর বিপরীত কোন জড়বস্তুকে প্রথমে সৃষ্টি করা হেকমত পরিপন্থি।
6. যে শিশুদের ব্যাপারে আল্লাহর জানা আছে যে,বড় হলে তারা ঈমান আনবে,তাদের মৃত্যু ঘটানো আল্লাহর হেকমত অনুসারে সম্ভব নয়।
7. যেসব গুনাহের কারণে সততা রহিত হয়ে যায় বা হদ্দ জারী হয় এমন পাপ থেকে নবীগণ মাসুম বা নিষ্পাপ ছিলেন।এর চেয়ে নীচু পর্যায়ের পাপ থেকে তারা নিষ্পাপ ছিলেন না।
8. ইমান হল শুধু মূখের স্বীকৃতি প্রদানের নাম। অন্তরের বিশ্বাস না থাকলেও চলে,আমল না থাকলেও চলে।
(ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ৩০৯-১০)
সংকলনে
এইচ এম হুজ্জাতুল্লাহ
hmhuzzatullah2019@gmail.com
প্রথম পর্বের লিংক
https://alorbhuban.blogspot.com/2021/05/01-1.html
No comments
Post a Comment