বিভিন্ন ভ্রান্ত ফিরকা ও তাদের আকিদাহ-বিশ্বাস পর্ব - ০১

 

বিভিন্ন ভ্রান্ত ফিরকা ও তাদের আকিদাহ-বিশ্বাস

 

পর্ব-১

 

 কুরআনের আয়াত ও হাদিসকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা ও বুঝার   কারণেই মূলত ইসলামে বিভিন্ন ভ্রান্ত ফিরকার উৎপত্তি হয়েছে। তাদের কিছু কাজ ভালো মনে হলেও ঈমান-আকিদাহ ভ্রান্ত হওয়ার কারণে তাদেরকে ভ্রান্ত বলা হয়। তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে নিজের ঈমান রক্ষার্থে। তাই তাদের ভ্রান্ত আকিদাহ-বিশ্বাস সম্পর্কে জানা আবশ্যক ।

                01- মো’তাজেলাদের আকিদাহ-বিশ্বাস 

হিজরী দ্বিতীয় শতকে আব্বাসীয় খলীফা আবু জাফর মনসুরের যামানায় মো’তাজেলাদের উদ্ভব হয়।প্রতিষ্ঠাতা ওয়াছেল বিন আতা।এসম্প্রদায়ের অনুসারী বিদ্যমান।অনেকে আবার না জেনে তাদের মতবাদ গ্রহণ করেছে।নিজের অজান্তেই মো’তাজেলী হয়েছে। তাই নিম্নে তাদের আকিদাহ-বিশ্বাস আলোচনা করা হল।

1.  যে ব্যক্তি গোনাহ কাবিরাহ করে,সে ব্যক্তি ইমানদার নহে এবং কাফেরও নহে,বরং এই দুয়ের মধ্যবর্তী।

2. মানুষ নিজ ক্ষমতায় নেকী-বদী সমস্তই করিয়া থাকে।

( আল মেলাল ওয়ান নেহাল ১/৫৮-৬০,গুনইয়াতুত্তালেবীন ২৩১-২৩২ )

3. কুরআন মাজীদ মাখলুক(স্রিস্টবস্তু)।

4.  স্বেচ্ছায় নামাজ ত্যাগ করিলে,উহার ক্বাযা করতে হবে না।

5.কাবিরাহ গোনাকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী।

6. কবরের আযাব বলতে কিছু নেই।

 ( আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত কি ও কেন- ২০-২১ )

7. পুলসিরাত বলতে কিছু নেই।

8. কেউ কারো জন্য শাফায়াত করতে পারবে না।

9. নেকী-বদি ওজন করা সম্ভব নয়।

10.   কারামত বলতে কিছু নেই।

11. না,মুমিনগণ আল্লাহ তায়ালার দীদার পাইবে না।

    ( আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত কি ও কেন- ১০১ )

                  02- রাফেজিদের আকিদাহ-বিশ্বাস

তাদের আকিদাহ নিম্নে আলোচনা করা হল

1. আবু বকর রা,উমার রা সহ প্রমুখ সাহাবাগণের নিন্দা করা ও অন্যান্য প্রাণ হত্যা করা হালাল মনে করা।

2. ছাগলের মলমূত্র ও মদ পাক।

3.  নয়টি স্ত্রী একসঙ্গে নিকাহ করা জায়েজ।

    ( আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত কি ও কেন ২৫ )

03- শিয়াদের আকিদাহ-বিশ্বাস

1. প্রথম তিন খলিফা (আবু বকর রা,ওমার রা ও উসমান রা) কাফের ও ধর্মত্যাগী।

(ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ২৬৮)

2.  আলী রা মহানবী সা এর ওহী বা ক্ষমতা প্রাপ্ত উত্তরাধিকারী।

3. আল কুরআনের বিশুদ্ধতা সন্দেহমুক্ত নয়।

4. ইমামগ্ণ নিষ্পাপ এবং তারা গায়েব জানেন। ( তাদের বারোজন ইমাম)

5. দুনিয়াতে যেমন স্রষ্টা দর্শন সম্ভব নয়, তেমনি আখেরাতেও দর্শন অসম্ভব।

6. ইমামগণ ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে। (তাদের যে বারো জন ইমাম আছে,তারা।)

7.  প্রকৃত কামেল বা স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে ঈমামদের মাধ্যম ব্যতীত তা সম্ভব নয়।

8. ইমামদের প্রতি মহব্বত ব্যতীত কেউ নাজাত পাবে না।

9.তারা যেমন আল্লাহকে ডাকে তেমনি ডাকে হে আলী,হে হাসান,হে হুসাইন ইত্যাদি বলে।

10. তারা মৃতের নামে,ইমামের নামে মানত করে এবং কুরবানী ও করে।

 (প্রফেসর এ এইচ এম শামসুর রহমান,শিয়া কারা-১১ )

                 04- খারেজীদের আকিদাহ-বিশ্বাস

নামকরণ- খারিজ এটা আরবী শব্দ যার ধাতুমূলগত অর্থ হল অবাধ্য হয়া,বিদ্রোহ করা। ফিফফীন যুদ্ধের সময় সালিস নির্ধারণের দিন আলী রা এর বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করেছিল। এজন্য তাদের খারেজী বলা হয়।কেউ হক শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাকে খারেজী বলা হয়।    উৎপত্তি- আলী রা ও মুয়াবিয়া রা এর মাঝে সংঘটিত সিফফীন নামক যুদ্ধ ও পরবর্তী সালিসী বৈঠকের ফয়সালাকে কেন্দ্র করে এদের উৎপত্তি। প্রতিষ্ঠাতা- আলী রা এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যারা অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম আশআছ ইবনে কায়স আল-কিন্দী,মিসআর ইবনে ফাদাক আত-তাইমী,যায়েদ ইবনে হুসাইন আত-তাঈ।

আকিদাহ-বিশবাস

    1.   খলিফা যদি সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পরে তাহলে তাকে অপসারণ করা বা হত্যা করা ওয়াজিব।

    2.   ইমাম বা নেতা নির্বাচন করা ওয়াজিব নয় বরং জায়েয।

     3.   পাপীব্যক্তি কাফের।

     4.   ছোট-বড় পাপের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

      5.   সালিসী বৈঠক আহবানকারী ও সালিসী ফয়সালা মান্যকারী উভয়ে কাফের।

      6.   সিফফীনের যুদ্ধে সালিসী বৈঠকের ফায়সালা মানার কারণে আলী রা কাফের!

      7.   তারা আলী রা এর প্রতি লা’নত ও অভিসম্পাত করে।

      8.   তারা নামাজ ও জামায়াতের সুন্নাতকে অস্বীকার করে।

       9.   আলী রা,উসমান রা ও জঙ্গে জামালে অংশগ্রহণকারী সকল মুসলমানকে কাফের মনে করে।

(ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ২৩৭-২৪৩)  

10.  কবিরাহ গোনাহকারী কাফের 

(ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ৩০৩) 

11. আলী রা,উসমান রা,তালহা রা,জোবায়ের রা,আয়েশা রাসহ ও অন্যান্য সাহাবাগণকে কাফির মনে করে। 

12.বেনামাযী ও কবিরাহ গোনাহকারী কাফির। 

13. তাদের মাযহাবধারী ব্যতীত অন্য সমস্ত মাযহাবধারীরা কাফির। 

14. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে হাকেম স্থির করে,সে কাফির। 

15. মুসলিমদের রক্তপাত ও অর্থ লুন্ডন করা হালাল।

        (গুনইয়াতুত্তালেবীন ২৩১-২৩২ ) 

16. আল্লাহ ছাড়া অন্যের হুকুম মান্য করা শিরক ও বাতিল।

        ( আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত কি ও কেন ২১ )

17. যে কোন ব্যাপারে মানুষকে রায়দাতা মনোনীত করা কুফরী।

18. কবিরাহ গুনাহের কারণে মুনিন কাফের হয়ে যায়।

19.গুনাহগার তাওবাহ না করিলে তাহাকে কতল করা জায়েয।

 ( আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত কি ও কেন ৯১ )

 

    05- জাবরিয়াদের আকিদাহ-বিশ্বাস 

 

জাবরিয়া বা (অদৃষ্টবাদ)কাদরিয়াদের সম্পূর্ণ বিপ্রিত।জাবরিয়াদের দুটি শ্রেণী রয়েছে। এক,খালেস জাবরিয়া এরা কট্ররপন্থী হিসেবে পরিচিত। তাদের মতে মানুষ ও জড় বস্তুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।দুই,মধ্যম পন্থী জাবরিয়া ।তাদের মতে মানুষের কাজ করার শক্তি-সামর্থ আছে কিন্তু এটা তার কর্মের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না।

তাদের আকিদাহ সমূহ

1.   মানুষ পাথর ও জড়পদার্থের মত নিষ্ক্রিয় বা বাধ্যবাধকতার আওতাধিন।যাদের নিজ কর্মের কোন ইচ্ছা বা স্বাধীন ক্ষমতা নেই।ফলে তাদের ছওয়াব বা শাস্তি কোন কিছুই হবে না।

2.   সম্পদ আল্লাহর প্রিয় বস্তু।

3.   আল্লাহ কর্তৃক তাওফীক বান্দার ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার পর হয়ে থাকে।

4.   রাসুল সা এর শারীরিক মেরাজকে অস্বীকার করে।

5.    রুহানী জগতে আল্লাহ কর্তৃক অঙ্গীকার গ্রহণের বিষয়কে অস্বীকার করে।

(মাও মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন,ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ ২৮৫-২৮৬ )

সংকলনে

এইচ এম হুজ্জাতুল্লাহ

hmhuzzatullah2019@gmail.com 

দ্বিতীয় পর্বের লিংক 

https://alorbhuban.blogspot.com/2021/05/blog-post_6.html