মুসলিম জীবনে মাহে রমজানের উপলব্ধি

 

                   



  মুসলিম জীবনে মাহে রমজানের উপলব্ধি  


 রমজান শুরু হলে আমাদের মধ্যে ইবাদতের আমেজ তৈরি হয়। কিন্তু রমজান শেষ হয়ে যায় চোখের পলকেই। কেননা জীবন ও সময় খুব দ্রুত শেষ হয়। আজকে রমজানের ব্যাপারে আমরা এমন কিছু কথা আলোচনা করব, যা রমজানের বিদায়ের পরও আমাদের 'জীবনের উপদেশ' হয়ে থাকবে।

রমজান আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় মহান আল্লাহর দাসত্ব করার যে সৌন্দর্য, তার সাথে। তার ইবাদতের সুমিষ্টতা ও সৌন্দর্যের পরিচয় করিয়ে দেয়। রমজানের শেষের দিকে আমরা শারিরীকভাবে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ি। রমজানে আমরা নিজেদের ঘুম, শক্তি, খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি কুরবানী করেছি। দৈনন্দিন জীবনের পূর্বেকার রুটিনও পরিবর্তন করতে হয়েছে রমজান আসার পর। আমরা জীবিকার্জনে কাজ করেছি ক্লান্ত-শ্রান্ত, ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায়। কাজ হতে ফিরে এসে ইফতারের জন্য সামান্য সময়, এরপরই মাগরিব পড়তে ছুটে যেতে হয় মসজিদে। এভাবে রমজানের ত্রিশ/উনত্রিশ দিনের দিকে নজর দিলে এটিই দেখবেন-  আমরা নিজেদের শরীরের সাথে লড়াই করেছি। কিন্তু আমাদের হৃদয় পুরোটা সময় জুড়ে থেকেছে পরিপুষ্ট। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, রমজানে আধ্যাত্মিকভাবে আপনি কেমন থাকেন? আপনার ঈমানের অবস্থা কেমন এখন?

আপনি বলবেন, রমজানে যতটা পবিত্র ও নিষ্কলুষ অনুভব করি, বছরের অন্য কোনো সময় তা অনুভব করি না। ঈমানের পরিমাণ, আধ্যাত্মিকতা, ঈমান ও ইখলাস, আল্লাহর নৈকট্য ইত্যাদির যে অনুভূতি, এসবের সমন্বয়ে মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকার যে আনন্দ, তা বছরের অন্য সময়গুলোতে অনুভব করি নি। আর রমজানের উদ্দেশ্যও এটাই-  আপনার মাঝে দ্বীনি অনুভূতি জাগ্রত করা। ঈমানের থেকে সর্বাধিক সুমিষ্ট বিষয় আর নেই। আল্লাহর ইবাদতের চেয়ে সন্তুষ্টিজনক কিছু নেই। রমজানে আমরা এই সুমিষ্টতা ও সন্তুষ্টির বিষয়টি অনুভব করি। আমরা খাদ্য ও পানীয় বর্জন করি এই সুমিষ্টতা অনুভব করতে।

রমজানের আরেকটি উপহার হল 'সামাজিক বন্ধন'। রমজানের প্রতিটি রাতে আমাদের মসজিদগুলো পূর্ণ থাকে। সমস্ত নেতিবাচক বিষয়কে ছাপিয়ে এমন অধিক সংখ্যক মুসলিম মসজিদে উপস্থিত হয়। আমরা অনুভব করি, শত দুর্দশার মধ্যে থেকেও এই উম্মাহ জীবিত আছে। আলহামদুলিল্লাহ! এই উম্মাহের 'পালস' এখনো শক্তিশালী আছে। যে দেশে ইসলামের যাত্রা শুরু, সে দেশ হতে হাজার হাজার মাইল দূরে, আমেরিকা-ইউরোপ, এশিয়াসহ সমগ্র পৃথিবী জুড়ে মুসলিমরা মসজিদে ছুটে আসে। এমন দেশেও আমরা মুসলিমদের মসজিদে আসতে দেখি, যেখানে রয়েছে পুজিবাদ, ভোগবাদসহ নানাবিধ দুনিয়াবি মতবাদের চরম প্রভাব। এরপরেও মসজিদগুলো আল্লাহর ইবাদতের স্বাদ নিতে আসা মানুষে পরিপূর্ণ। রমজানেই আমরা বুঝতে পারি, শত নেতিবাচকতা সত্ত্বেও এই উম্মাহ একটুখানি হলেও জেগে আছে, সুস্থ আছে।

রমজানে আমরা পবিত্র কুরআনের মূল্যায়ন করি। প্রতি রাতে পবিত্র কুরআনের মধুময় বাণী আমরা শুনি। আল্লাহর কালাম তিলাওয়াতের আওয়াজ আমাদের হৃদয় কুঠুরিতে প্রতিধ্বনিত হয়। প্রতিধ্বনিত হয় বাতাসে। কুরআনকে আমরা অনুভব করতে পারি। কুরআনের আওয়াজমাখা বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারি। মহান আল্লাহর শক্তিশালী কথামালা হওয়ায় এই কুরআন আমাদের চালিত করে। আমাদের নাড়া দেয়। এমন নাড়া কেবল মহান আল্লাহর কালামই দিতে পারে। এভাবেই আমরা পবিত্র কুরআনের সৌন্দর্য ও সুমিষ্টতার সাথে প্রতিটি রমজানে পরিচিত হই বার বার।

তবে, ইবাদতে পরিপূর্ণ এই রমজান খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। চোখের পলকেই যেন এর বিদায় ঘটে। এজন্য রমজান শেষে আমাদের ভাবতে হবে, এ মাসে আসলে কি অর্জন করলাম আমি ? ঈদুল ফিতরের পর আমাদের অবস্থা কেমন হবে? রমজানে তো আমি ঈমান, সামাজিক বন্ধন, মসজিদ, কুরআন, সাদাকাহ ইত্যাদির সুমিষ্টতা অনুভব করেছি। এসবের স্বাদ নিয়েছি। আমরা কি এই সুমিষ্টতা, রমজানের এই উপহারগুলো পরবর্তীতে কাজে লাগাতে পারব? আল্লাহর ঘর এই মসজিদ কি খালি হয়ে যাবে আমাদের অনুপস্থিতিতে? এটি তো রমজান জুড়ে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। আমরা কি আবারও সেই পঙ্কিল জীবনে ফিরে যাবো এবং আগামী রমজান পর্যন্ত পঙ্কিলতা জারি রাখব? আমাদের দান-সাদাকাহর হাত সংকুচিত হবে, আমাদের বৃহৎ হৃদয় কি ছোট হয়ে যাবে? প্রিয় ভাই-বোন, রমজানের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, আপনি কেবল রমজানেই আল্লাহর কাছাকাছি থাকবেন। আল্লাহর ইবাদতের স্বাদ পাওয়ার পরও আমরা এটি কিভাবে হারাতে পারি?

হ্যা, এটা সত্য যে আমরা রমজানের মত অধিক ইবাদতগুজার বছরের বাকি সময়ে হতে পারব না। রমজানে আমরা ইতিবাচক জীবনের অনেক উর্ধ্বে উঠে যাই। কিন্তু রমজান শেষ হবার পর যেন আমরা একদম নিকৃষ্ট জীবনে ফিরে না যাই। রমজানের পূর্বে যেমন জীবনে ছিলাম, রমজানের পরের জীবনটা যেন তার থেকে উত্তম হয়।

আমরা রমজানে মসজিদে যতটা সময় দেই, রমজানের পরে ততটা দেয়া হয়ত সম্ভব নয়। রমজানে আমাদের ঈমানের স্তর যতটা উন্নত, রমজানের পর কমে যাবে- এটা স্বাভাবিক ও বোধগম্য। তবে অবশ্যই আমাদের ঈমানের স্তর এতটা নিচে যাওয়া উচিত নয়, যেমনটা রমজানের পূর্বে ছিল। রমজানকে উপলক্ষ্য করে অন্তত দুটো ইবাদত যোগ করে নিন, যা আপনার জীবনে ছিল না আগে। অন্তত দুটো গুনাহ ছেড়ে দিন, যা আপনি আগে করতেন। এভাবে আপনি প্রতিটি রমজানে নিজেকে আল্লাহর নিকটে নিয়ে যান, এটাই রমজানের উদ্দেশ্য। এজন্য প্রতিটি রমজান হল নিবিড় উন্নয়ন কেন্দ্রের মত। ট্রেনিং ক্যাম্পের মত। আপনি এখানে থাকবেন এবং বের হয়ে আসবেন উত্তম ও সুশোভিত হয়ে। পবিত্র হয়ে আসবেন বছরের বাকি দিনগুলো সঠিকভাবে চলতে। অধিক ঈমান নিয়ে চলতে।

আমাদের প্রতিটি রমজানকেই শেষ রমজান হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। নিঃসন্দেহে এক রমজানে মসজিদে আগত মুসল্লীদের সাথে আগামী রমজানে আগত মুসল্লীদের পার্থক্য থাকবে। এ বিষয়টা একটু ভাবুন। কে গ্যারান্টি দিতে পারে আমরা দ্বিতীয় রমজান পাবো? মসজিদের ইমাম কিংবা মুসল্লীদের যে কেউ দুনিয়া হতে বিদায় নিতে পারেন। আমাদের পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব,সহকর্মীদের অনেকেই হয়ত দ্বিতীয় রমজান পাবেন না। এটাই আল্লাহর সুন্নাহ হয়ত !

আপনি মসজিদে আসতে পারবেন আগামী রমজানে, কিন্তু আপনার সাথে আসা ছেলে নাও আসতে পারে। আমার পরিবার, বন্ধুদের মধ্যে অনেকেরই ভাগ্যে হবে না আমার সাথে মসজিদে আসতে। এমন কি আমারও!

আমরা জানি না, আমরা আগামী রমজান পর্যন্ত জীবন পাবো কিনা। ফলে জীবনের যে রমজান আপনি পাবেন, চেষ্টা করুন যেন সেখান থেকে কিছু একটা অর্জন করতে পারেন।

এজন্য আমরা প্রতিটি রমজান হতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে যাব। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, মহান আল্লাহর সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা, মহান আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্কের থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। আলহামদুলিল্লাহ, রমজানে আমরা এই সম্পর্ক উপলদ্ধি করতে পারি। মধুময় এই সম্পর্কের স্বাদ অনুভব করি। সত্যি বলতে স্রষ্টা ও দাসের এই সম্পর্ক আমরা ভালোবাসি। এটাই এ মাসের সৌন্দর্য। শারিরীকভাবে আমরা যতই কষ্ট করি না কেন বা যতই ক্লান্ত হই না কেন, আধ্যাত্মিকভাবে আমরা অনেক উঁচুতে উঠি। যেন আকাশের মেঘমালা ছুয়ে ফেলি আমরা। আমরা এই অনুভূতিকে ভালোবাসি খুব।

সুতরাং, মহান আল্লাহর শোকর এজন্য যে, আমাদেরকে মহান আল্লাহ ঈমানের সৌন্দর্যমণ্ডিত এক উপহার দিয়েছেন। আল্লাহর অনুগ্রহ না থাকলে ঈমান এতটা সহজ হতো না, বরং কঠিন হত। আল্লাহ চাইলে ঈমানী কর্মকাণ্ডে কাঠিন্যতা থাকত, আনন্দ থাকত না। এটা কেবলই ঘরের কাজের মত বিরক্তিকর মনে হত। কিন্তু মহান আল্লাহ এমনটি চান নি। তাঁর সুন্নাহ নয় এমনটি করা। মহান আল্লাহ আমাদের বলেছেন,

নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা থাকবে অতি অনন্দে।” 

[সূরা ইনফিতার:১৩ ]

যারা মুমিন, যারা নেক কাজ করেন তারা সর্বদাই মহান আল্লাহর নিয়ামত উপভোগ করবেন। জীবনের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত। সৎকর্মশীল মানুষ, মুমিন, আবরার ব্যক্তিরা জীবনের সুমিষ্টতা অনুভব করবে। মৃত্যুর সুমিষ্টতা অনুভব করবে। আর তারা মৃত্যুর পরের জীবনের সুমিষ্টতাও অনুভব করবে। এভাবে একজন মুমিন সর্বদাই সন্তুষ্টিজনক অবস্থায় থাকেন। তার জীবন শান্তি ও আনন্দে ভরপুর। এভাবে মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব আমরা রমজান মাসে উপলদ্ধি করি।

রমজান শেষে আমাদের ভাবনায় কিছু বিষয় আসা উচিত। আমি চাই আমাদের সকলেই, সবার প্রথমে আমি নিজে, আমাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে আমার জীবনে কি কি খুত বা কমতি রয়েছে, যেগুলো নিয়ে আমার কাজ করা উচিত। সালাত, কুরআন, যিকর, সাদাকাহ, দুআ, মানুষের সাথে সদাচরণ, ক্ষমা করা ইত্যাদি। আপনিই ভালো বলতে পারবেন, কোথায় আপনার কমতি আছে।

অতএব, রমজান শেষে আপনি এসবের অন্তত দুটি বা তিনটি বিষয়ে মনোযোগ দিন। এগুলোর উন্নত করার চেষ্টা করুন। একই সাথে আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমরা কি কি গুনাহে জড়িয়ে পড়ি। কুটিল হৃদয়, ছুড়ির মত ধারালো জিহবা, মানুষকে ঠাট্টা করা, মানুষকে ছোট করা, পাপাচার, অন্যায় পথে খরচ ইত্যাদি। এসব হতে কোন কোন নেতিবাচক বিষয় আমার মধ্যে আছে তা আমি জানি। নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে আপনিও জানেন। এগুলো সম্পর্কে চিন্তা করুন।

রমজানে আমরা যাবতীয় পাপাচার হতে দূরে থাকি। আমাদের তাকওয়ার স্তর উন্নত হয়েছে। তবে রমজান শেষে আমাদের তাকওয়ার স্তর রমজানের পূর্বের সময় থেকে অধিক উন্নত থাকা চাই। রমজানের শতভাগ ধরে রাখা সম্ভব নয় ঠিক তবে যতটা সম্ভব ধরে রাখুন। এভাবে একটু করে নিজের স্তর বাড়িয়ে রাখুন। এভাবে প্রতিটি রমজানে আপনার স্তর বাড়তে থাকবে। এভাবে প্রতি রমজানে স্তর বৃদ্ধির হিকমাহ হল, যাতে আপনার জীবনের শেষ রমজানটা সবচেয়ে উত্তম রমজান হবে। এটা কতই না ভালো বিষয়!  আমরা মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাই ঈমানের উঁচু স্তর নিয়ে।

আমাদের দ্বীনের সৌন্দর্য হল, আমাদের জীবনযাত্রার শুরুটা মহান আল্লাহ দেখবেন না, বরঞ্চ দেখবেন আমাদের সমাপ্তি কেমন হয়েছিল তবে আমরা জানি না, জীবনের সমাপ্তি কখন হবে। এজন্য প্রতিটি দিন আমরা নিজেদের উন্নত করতে থাকব। এভাবে প্রতিটি মাসে এবং বছরে নিজেদের ঈমান ও আমলের স্তর উন্নত করব। আর এক্ষেত্রে রমজান হল ঈমান 'বুস্টার', যা মহান আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। রমজান নামক বুস্টার আমাদের প্রয়োজন যাতে আমরা নিজেদের ঈমান ও আমলের ব্যাটারি ১০০%  চার্জ করে নিতে পারি। আর রমজান শেষ হলে চেষ্টা করব, যতটা সম্ভব এই চার্জ ধরে রাখা যায়। কেননা আল্লাহই ভালো জানেন, আমাদের মধ্যে কে পরবর্তী রমজান পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে আর কে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে। তিনিই জানেন, আমাদের আর কয়টা রমজান বাকি আছে।

মহান আল্লাহর কাছে আমাদের দুআ, তিনি যেন আমাদের নাম তালিকাতে রাখেন, যে তালিকার মানুষেরা জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত থাকবে। ঈমান ও তাকওয়াপূর্ণ অনেক রমজান আমরা তার কাছে চাই। আমাদের যেন তিনি জান্নাতের ইল্লিইয়্যিনে রাখেন। যাদের আমলনামা ডান হাতে আসবে। যাদের মীযানে সওয়াবের পাল্লা ভারী হবে। যাদের রমজান, কুরআন, সাওম কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী হবে।

মহান আল্লাহ যেন কুরআনকে আমাদের পক্ষে সাক্ষ্যদাতা বানান, এই কুরআন যেন আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদাতা না হয়। প্রতিটি রমজান যেন আমাদের আগের রমজান হতে উত্তম হতে থাকে, যতক্ষণ না আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছাই। মহান আল্লাহ যেন আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোকে, শ্রেষ্ঠ রমজানকে আমাদের জীবনের শেষ সময় করেন। আর যখন আমাদের জীবনের শেষ সময় উপনীত হবে, তখন যেন আমরা সাক্ষ্য দিতে পারি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।'

 

|| রমজানের আগে ও পরে ||

মূল  ড. ইয়াসির ক্বাদি


No comments

Powered by Blogger.