সিয়াম বিষয়ক আধুনিক কিছু মাসআলা

 সহজ কর , কঠিন করিও না। আল-হাদিস



v সাওম বিষয়ক আধুনিক কিছু মাসআলা

 

(01)= সাওম পালনকারীর শ্বাসকষ্ট উপশমকারী স্প্রে (Inhaler/ইনহেলার বা Puffer/পাফার) ব্যবহারের বিধান

বিবরণ: অনেক মানুষ এ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভোগে এবং তাদের অনেকেই স্প্রে ব্যবহার করে। এই স্প্রের বোতলের মধ্যে থাকে তরল ঔষধ, রাসায়নিক পদার্থ, ঔষধি অন্যান্য উপাদান এবং অক্সিজেন। স্প্রে চেপে ধরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে এই ঔষধ গ্রহণ করতে হয়। মুখ দিয়ে এটি গলনালীতে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে শ্বাসনালী হয়ে যকৃতে চলে যায়। এর কিছু অংশ গলনালীতে থেকে যায়। আবার এর খুব সামান্য পরিমাণ পেটের ভেতরেও প্রবেশ করে। এক্ষণে রামাযানের দিবসে সাওম পালনকারীর জন্য এই স্প্রে ব্যবহারের বিধান কী?

পর্যালোচনা: আধুনিক যুগের ওলামায়ে কেরাম এই মাসআলায় দুই ধরণের মতামত পেশ করেছেন:

প্রথম মত: রমযানের দিনের বেলায় সাওম পালনকারীর এই স্প্রে ব্যবহারে কোনো দোষ নেই। এটি সাওম ভঙ্গকারী হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা স্প্রের যে অংশ পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে, তা খুবই সামান্য। ফলে কুলি করলে ও নাকে পানি দিলে যেমন খুব সামান্য পরিমাণ পানি ভেতরে গেলেও সাওম ভেঙ্গে যায় না, ঠিক তেমনি স্প্রের এই সামান্য অংশও সাওম ভঙ্গকারী গণ্য হবে না।

আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক, শ্বাসকষ্ট উপশমকারী একটি স্প্রের বোতলে সব মিলিয়ে ১০ মি. লি. তরল থাকে, যা দিয়ে ২০০ বার স্প্রে করা যায়। দেখা যায়, প্রত্যেক বার স্প্রেতে এক ফোটারও কম তরল পদার্থ থাকে। এই এক ফোটারও কম তরল পদার্থ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় ভাগটি প্রবেশ করে শ্বাসনালীতে, ছোট ভাগটি থেকে যায় গলনালীতে এবং খুব সামান্য পরিমাণ পেটে প্রবেশ করতে পারে। এই অতি সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থ কোনো ব্যাপার না, যেমনিভাবে কুলি ও নাকের সামান্য অংশ পানি ব্যাপার না, বরং কুলি করলে ও নাকি পানি দিলে যে পরিমাণ পানি ভেতরে প্রবেশ করে, তা স্প্রের ভেতরে প্রবেশকারী অংশের চেয়ে বেশি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, স্প্রের কিছু অংশ যে পাকস্থলীতে প্রবেশ করবেই তা কিন্তু নিশ্চিত নয়; প্রবেশ করতেও পারে, নাও পারে। নিয়ম হচ্ছে, নিশ্চিত কোনো বিষয় সন্দেহপূর্ণ কোনো বিষয়ের দ্বারা বিদূরিত হবে না (اليقين لا يزول بالشك)আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ডাক্তারগণ বলে থাকেন, আরাক গাছের মিসওয়াকে আট প্রকার রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা দাঁত ও মাঢ়িকে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করে। পদার্থগুলো লালার সাথে মিশে গলনালীতে প্রবেশ করে। আমের ইবন রবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «يَسْتَاكُ وَهُوَ صَائِمٌ» مَا لاَ أُحْصِي أَوْ أَعُدُّ»

আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম পালন অবস্থায় অসংখ্য বার মিসওয়াক করতে দেখেছি”[1] মিসওয়াকের ঐ পদার্থ খুব সামান্য পরিমাণ হওয়ার কারণে এবং উদ্দিষ্ট না হওয়ার কারণে পাকস্থলীতে পৌঁছা সত্ত্বেও তা সাওমের কোনো ক্ষতি করে না। অনুরূপভাবে ঠিক একই কারণে স্প্রের যে সামান্য অংশ ভেতরে প্রবেশ করে, তাও সাওমের কোনো ক্ষতি করবে না।

সঊদী আরবের ফাতওয়া বোর্ডের স্থায়ী কমিটি এই মত গ্রহণ করেছেন।

দ্বিতীয় মত: শ্বাসকষ্ট উপশমকারী স্প্রে (ইনহেইলার) গ্রহণে সাওম ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং যরূরী প্রয়োজনে যদি সাওম অবস্থায় রোগীকে এই স্প্রে গ্রহণ করতে হয়, তাহলে তাকে ঐ দিনের সাওম কাযা আদায় করতে হবে। মুহাম্মাদ তাক্বীউদ্দীন উসমানী এবং ড. ওয়াহবা যুহায়লী এই মতের পক্ষাবলম্বন করেছেন।তাদের দলীল হচ্ছে, যেহেতু এই স্প্রের উপাদান পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে, সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে। তাদের মতে, যারা বলছেন যে, এটি পাকস্থলীতে যায় না; বরং শ্বাসনালীতে সীমাবদ্ধ থাকে, তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। ফলে, এর সামান্য অংশ হলেও যেহেতু পাকস্থলীতে যায়, সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে।

 

[1] তিরমিযী, হাদীস নং ৭২৫। তিনি হাদীসটিকে ‘হাসান সহীহ বলেছেন।

 

 (02) সাওম পালনকারীর অক্সিজেন নেওয়ার বিধান

বিবরণ: শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যার কারণে সহজভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু কিছু রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। অক্সিজেন এক ধরণের বায়ূ, যাতে খাদ্য জাতীয় কোনো পদার্থ থাকে না। এর বেশিরভাগই যায় শ্বাসনালীতে। এক্ষণে, রামাযানের দিবসে সাওম পালনকারীর জন্য এই অক্সিজেন ব্যবহারের হুকুম কী?

হুকুম: অক্সিজেন সাওম ভঙ্গকারী বিষয় হিসাবে গণ্য হবে না। অক্সিজেন নিঃশ্বাসের সাথে স্বাভাবিক বায়ূ গ্রহণের মতোই।

 

 

 (03) সাওমপালনকারীর জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহারের বিধান

 

বিবরণ: কোনো কোনো সময় মানুষ এমন অসুখে আক্রান্ত হয় যে, তার জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহার করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। যেমন, কেউ দীর্ঘস্থায়ী সর্দিতে আক্রান্ত হলে বা নাকে এলার্জির সমস্যা থাকলে ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। এক্ষণে, রামাযানের দিবসে সাওম পালনকারীর জন্য নাকের এই ড্রপ ব্যবহারের হুকুম কী ?

হুকুম: আধুনিক যুগের ফকীহগণ এই মাসআলায় ৩ ধরণের অভিমত ব্যক্ত করেছেন:

প্রথম অভিমত: নাকের ড্রপ মোটেও সাওম ভঙ্গ করবে না। কেননা

প্রথমত: ড্রপের মাধ্যমে যে উপাদানটুকু পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে, তা খুবই অল্প। ছোট্ট একটি চামচের তরল পদার্থকে ৭৫ ভাগে ভাগ করলে এর মাত্র ১ ভাগ পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে। কুলি করলে যতটুকু পানি পাকস্থলীতে যায়, তার চেয়ে এর পরিমাণ আরো কম। সুতরাং কুলি করলে যেমন সাওম ভঙ্গ হয় না, নাকের ড্রপ ব্যবহার করলেও তেমনি সাওম ভঙ্গ হবে না।

দ্বিতীয়ত: নাকের এই ড্রপ এক দিকে যেমন খুবই অল্প, অন্য দিকে তেমনি তা খাদ্যের কাজও দেয় না; বরং কোনো অবস্থাতেই একে খাদ্য বা পানীয় কোনোটাই গণ্য করা হয় না। আর আল্লাহ সাওম ভঙ্গকারী হওয়ার জন্য খাদ্য ও শক্তি সঞ্চারকারী হওয়ার শর্তারোপ করেছেন।

দ্বিতীয় অভিমত: নাকের ড্রপ সাওম ভঙ্গ করবে। বর্তমান যুগের ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যাঁরা এই মত ব্যক্ত করেছেন, শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায এবং শাইখ মুহাম্মাদ ইবন উসাইমীন রহ. তাদের অন্যতম। লাক্বীত ইবন সবিরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«بَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ، إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا»

নাকের ভেতর অতি উত্তমরূপে পানি দিবে, তবে যখন তুমি সাওম অবস্থায় থাকবে, তখন নয়”।[1]

উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, পাকস্থলীতে পৌঁছতে পারে এমন কোনো ড্রপ নাকে ব্যবহার করা সাওম পালনকারীর জন্য জায়েয নেই। আর হাদীস, বাস্তবতা ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে একথা সবারই জানা যে, নাক কণ্ঠনালীর প্রবেশ পথ।

উক্ত হাদীস প্রমাণ করে, নাক প্রথমে কণ্ঠনালী, অতঃপর পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম রাস্তা। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও এটি প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে ‘অঙ্গব্যবচ্ছেদ বিদ্যা’ (এ্যানাটমি/Anatomy) সন্দেহের এতটুকু সুযোগ রাখে নি যে, নাকের সাথে কণ্ঠনালীর গভীর যোগসূত্র রয়েছে।

তৃতীয় অভিমত: বর্তমান যুগের কোনো কোনো আলেমের মতে, নাকের ড্রপ ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। যদি এর কোনো অংশ কণ্ঠনালী পর্যন্ত না পৌঁছে, তাহলে তা সাওম ভঙ্গ করবে না। যেমন, কেউ তা নাকের এক প্রান্তে ব্যবহার করল। পক্ষান্তরে, যদি এর কোনো অংশ কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে, তাহলে তা সাওম ভঙ্গ করবে।

তাঁরা মূলতঃ উল্লিখিত উভয় পক্ষের দলীলসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করার প্রয়াস পেয়েছেন। তবে তাদের মতেও, ভেতরে যতটুকু যায়, তার পরিমাণ খুবই সামান্য; কুলি করার পরে যতটুকু লাবণ্য মুখের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে, ঠিক তার মতই। আর এই সামান্য অংশ সাওমের কোনো ক্ষতি করবে না মর্মে ইজমা‘ রয়েছে।

[1] সুনান আবু দাঊদ, হাদীস নং ১৪২।

 

 (04) সাওম পালনকারীর জন্য কানের ড্রপ ব্যবহারের বিধান

বিবরণ: কেউ কেউ কানে নানা সমস্যা অনুভব করে। ফলে তাদেরকে কখনও কখনও এমন ঔষধ দেওয়া হয়, যা কানে প্রয়োগ করা হয়। এক্ষণে, রামাযানের দিবসে সাওম পালনকারীর জন্য কানের এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহারের হুকুম কি ?

হুকুম: ওলামায়ে কেরাম এই মাসআলায় ২ ধরণের বক্তব্য পেশ করেছেন:

প্রথম মত: হানাফী, মালেকী এবং শাফে‘ঈদের বিশুদ্ধতর মতানুযায়ী, কানে তেল দিলে বা পানি দিলে সাওম ভেঙ্গে যাবে, তবে হাম্বলীদের মতানুযায়ী, তা যদি মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে, তাহলে সাওম ভঙ্গ হবে।

তাদের মতে, কানে যা প্রয়োগ করা হয়, তা যেহেতু কণ্ঠনালী বা মস্তিষ্কে যায়, সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে।

দ্বিতীয় মত: ইবন হাযমের মত ও শাফে‘ঈদের ভিন্ন আরেকটি মতানুযায়ী, কানে প্রয়োগকৃত ঔষধ সাওম ভঙ্গ করবে না। তাদের যুক্তি হচ্ছে, কানে প্রয়োগকৃত ঔষধ মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে না, তবে তা শিরা-উপশিরা ও লোমকূপের মাধ্যমে পৌঁছে।

মূলতঃ উভয় মতের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কেননা কানে প্রয়োগকৃত ঔষধ পেটে প্রবেশ করে কিনা সেটিই এখানে মূল বিষয়। আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে যে, কান এবং পেট ও মস্তিষ্কের মধ্যে এমন কোনো নালা নেই, যেখান দিয়ে তরল পদার্থ প্রবেশ করতে পারে। তবে কানের পর্দায় ছিদ্র থাকলে সেটা ভিন্ন কথা।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই তথ্যানুযায়ী প্রত্যেকের মতামতের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে যে, কানের ড্রপ সাওম ভঙ্গ করে না।

তবে যদি কানের পর্দা না থাকে, তাহলে ‘ইউস্টেশন টিউব’ (Eustachian tube) নামক নালার মাধ্যমে গলবিলের সাথে কানের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় এবং এক্ষেত্রে কান নাকের মতো হয়ে যায়। অতএব, নাকের ড্রপ ব্যবহারের যে বক্তব্য গত হয়ে গেছে, এখানেও সেই একই বক্তব্য প্রযোজ্য হবে।

(05)  সাওম পালনকারীর জন্য চোখের ড্রপ ব্যবহারের বিধান

বিবরণ: কেউ কেউ চোখের নানা রোগে ভোগে। ফলে তাদেরকে কখনও কখনও এমন ঔষধ দেওয়া হয়, যা চোখে প্রয়োগ করা হয়। এক্ষণে, রমযানের দিবসে সাওম পালনকারীর জন্য চোখের এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহারের হুকুম কী ?

হুকুম: সুরমা বা এ জাতীয় অন্য কিছু চোখে দিলে সাওম ভাঙ্গবে কিনা সে বিষয়ে ফকীহগণ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাদের ভিন্ন মত প্রকাশের কারণ হচ্ছে এই যে, চোখ কি মুখের মতো পেটে কোনো কিছু প্রবেশের পথ হিসেবে গণ্য হবে নাকি চোখ ও পেটের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই? নাকি চোখে প্রয়োগকৃত ঔষধ পেটে প্রবেশ করে শিরা-উপশিরার মাধ্যমে?

* হানাফী ও শাফে‘ঈদের নিকট চোখ ও পেট বা চোখ ও মস্তিষ্কের মধ্যে কোনো প্রবেশ পথ নেই। ফলে তাদের মতে, চোখে ঔষধ দিলে সাওম ভাঙ্গবে না।

* পক্ষান্তরে মালেকী ও হাম্বলীদের নিকট, মুখ ও নাকের মত চোখও কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার পথ। অতএব, সাওম পালনকারী যদি চোখে সুরমা ব্যবহার করে এবং গলনালীতে তার স্বাদ পায়, তাহলে তার সাওম ভেঙ্গে যাবে।

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. সুরমা ব্যবহারের ব্যাপারে ফকীহগণের মতভেদ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং তাঁর কাছে সুরমা সাওম ভঙ্গ করবে না বলে প্রমাণিত হয়েছে। সাওম পালনকারীর জন্য সুরমা ব্যবহারের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না”।[1]

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, চোখ, কান, অতঃপর গলনালী পর্যন্ত পৌঁছে দিতে একটি বিশেষ নালা রয়েছে।

চোখের ড্রপের ব্যাপারে আগের যুগের ওলামায়ে কেরামের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। তবে কানের ড্রপ ও চোখের সুরমার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তাদের নিকট মূলনীতি হচ্ছে, চোখ পেটে কোনো কিছু পৌঁছার প্রবেশ পথ কিনা। সুতরাং আমরা যদি আগেকার ফকীহগণের নিকট চোখের ড্রপ ব্যবহারের হুকুম জানতে চাই, তাহলে সুরমার ব্যাপারে তাদের মতভেদ জানলেই চলবে।

তবে বর্তমান যুগের ওলামায়ে কেরাম চোখের ড্রপের ব্যাপারে দুই রকম মত প্রকাশ করেছেন:

প্রথম মত: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায, শাইখ মুহাম্মাদ ইবন উসাইমীন, ওয়াহবা যুহায়লীসহ বর্তমান যুগের অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের নিকট চোখের ড্রপ সাওম ভঙ্গ করবে না।

কারণ চোখের ভেতরে এক ফোটার বেশি তরল পদার্থ ধরে না। আর এই এক ফোটার পরিমাণ খুবই অল্প। কেননা ছোট্ট একটি চামমের ধারণ ক্ষমতা ৫ ঘন সেন্টিমিটার তরল পদার্থ। আর প্রত্যেক ঘন সেন্টিমিটার ১৫ ফোটা সমপরিমাণ। ফলে ছোট্ট একটি চামচে বিদ্যমান তরল পদার্থের ৭৫ ভাগের ১ ভাগ হচ্ছে ১ ফোটা। অন্যভাবে বলা যায়, ১ ফোটা তরল পদার্থের পরিমাণ ০.০৬ ঘন সেন্টিমিটার।

অতএব, যেহেতু প্রমাণিত হলো যে, ১ ফোটার পরিমাণ খুবই সামান্য, সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে না। কেননা কুলি করার পরে যতটুকু লাবণ্য মুখের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে, এর পরিমাণ তার চেয়েও কম। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, এই ১ ফোটা তরল পদার্থ ‘অশ্রু ক্ষরণকারী গ্রন্থি’ (ল্যাকরিমাল ডাকট/Lacrimal Duct) দিয়ে অতিক্রমের সময় পুরোটাই শোষিত হয়ে যায়। ফলে তা গলনালী পর্যন্ত পৌঁছে না। তবে মুখে যে স্বাদ অনুভূত হয়, তা ঐ তরল পদার্থ গলনালী পর্যন্ত পৌঁছার কারণে নয়; বরং জিহ্বার কারণে। কেননা একমাত্র জিহ্বাই হচ্ছে মানবদেহেরে স্বাদ আস্বাদন যন্ত্র। আর তরল ঐ বিন্দু যখন শোষিত হয়, তখন তা জিহ্বার স্বাদ আস্বাদনের এলাকায় চলে যায়। ফলে রোগী স্বাদ অনুভব করে।

আরো একটি বিষয় হচ্ছে, চোখের ড্রপের ব্যাপারে শরী‘আতের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। তাছাড়া চোখ পানাহারের কোনো রাস্তাও নয়। যেমন, যদি কেউ তার দুই পায়ের পাতায় কোনো কিছু মাখায় এবং মুখে তার স্বাদ অনুভব করে, তাহলে তা তার সাওম ভাঙ্গবে না। কেননা তা পানাহারের রাস্তা নয়।দ্বিতীয় মত: চোখের ড্রপ সাওম ভাঙ্গবে। এই মতাবলম্বীরা চোখের ড্রপকে সুরমার ওপর ক্বিয়াস করেছেন। সুরমা যেমন কণ্ঠনালীতে গেলে সাওম ভেঙ্গে যায়, তেমনি চোখের ড্রপও কণ্ঠনালীতে গেলে সাওম ভেঙ্গে যাবে। তাছাড়া অঙ্গব্যবচ্ছেদ বিশেষজ্ঞরা (Anatomist) প্রমাণ করেছেন যে, মহান আল্লাহ এমন নালীর সমন্বয়ে চোখ সৃষ্টি করেছেন, যার সাথে নাকের, অতঃপর গলনালীর সম্পর্ক রয়েছে।

 [1] জামে‘ তিরমিযী, হাদীস নং ৭২৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

 

(06) জিহ্বার নিচে যে ট্যাবলেট রাখা হয়, সাওম পালনকারীর জন্য তা ব্যবহারের বিধান

বিবরণ: জিহ্বার নিচে ঔষধ রাখলে, শরীর তা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে টেনে নেয়। সেজন্য হৃদরোগীদের জন্য বিশেষ ট্যাবলেট তৈরী করা হয়, যা ‘অ্যানজাইনা পেকটারিস’ (Angina pectoris) নামক হৃদরোগ এবং হার্টে রক্তের জমাটবদ্ধতা (Thrombosis/থ্রমবোসিস) প্রশমন করে। রোগী জিহ্বার নীচে এই ট্যাবলেট রাখা মাত্র খুব অল্প সময়েই দেহ তা টেনে নেয় এবং রক্তের মাধ্যমে হার্টে পৌঁছে যায়। আর এই ট্যাবলেটের কোনো অংশই পেটে প্রবেশ করে না। এক্ষণে রামাযানের দিবসে এই ট্যাবলেট ব্যবহারের হুকুম কী?

হুকুম: এই ট্যাবলেটের গলিত অংশকে কণ্ঠনালীতে পৌঁছা রোধ করলে তা সাওম ভঙ্গ করবে না। কেননা একদিকে যেমন এর কোনো অংশ পেট পর্যন্ত যায় না, তেমনি তা খাদ্য বা পানীয়ও নয়।

 

(07) খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ ইনজেকশন সাওমে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা

বিবরণ: কিছু কিছু রোগীকে ইনজেকশনের মাধ্যমে খাবার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। গ্লুকোজ, লবন ও পানির সমন্বয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়। কখনও কখনও এতে ঔষধি উপাদানও যুক্ত করা হয়। রোগীর শিরায় এই ইনজেকশন দেওয়া হয়। ফলে, তা পাকস্থলীতে না যেয়ে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে। কিন্তু তা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকে। সেজন্য, রোগী কোনো প্রকার পানাহার না করে শুধু এর ওপর নির্ভর করেই লম্বা সময় বেঁচে থাকতে পারে। এক্ষণে এসব খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ ইনজেকশন কি সাওমে কোনো প্রভাব ফেলবে?

হুকুম: এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের দুই ধরণের মত পাওয়া যায়:

প্রথম মত: এই ইনজেকশন সাওম ভঙ্গ করবে। শাইখ আব্দুর রহমান সা‘দী, শাইখ ইবন বায, শাইখ মুহাম্মাদ উসাইমীনসহ আধুনিক যুগের বেশিরভাগ আলিম এই মত অবলম্বন করেছেন। ‘আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমী’-ও এই মত সমর্থন করেছে।

তাদের দলীল হচ্ছে, যেহেতু এই ইনজেকশন খাদ্যের কাজ করে, সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে।

দ্বিতীয় মত: কতিপয় আলিমের মতে, এই ইনজেকশন সাওম ভঙ্গ করবে না।

তাদের দলীল হচ্ছে, যেহেতু এর কোনো অংশই স্বাভাবিক প্রবেশ পথ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে না, সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে না। আর ভেতরে কিছু অংশ গেলেও তা যায় মানবদেহের কূপ দিয়ে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ভেতরে যে অংশ যায়, তা পেট পর্যন্ত পৌঁছে না।

 

 (08) ঔষধি ইনজেকশন সাওমে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা

বিবরণ: খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ ইনজেকশন ছাড়া অন্যান্য যেসব ইনজেকশন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়, সেগুলোই ঔষধি ইনজেকশন। এগুলো কখনও চামড়ায় দেওয়া হয়; যেমন, ইনসুলিন। আবার কখনও মাংসপেশী বা শিরায় দেওয়া হয়। এসব ইনজেকশন পাকস্থলী পর্যন্ত যায় না। এক্ষণে সাওমে এর কী ধরণের প্রভাব রয়েছে?

হুকুম: আধুনিক কালের প্রায় সকল আলিমের মতে, উল্লিখিত ইনজেকশন সাওম ভঙ্গ করবে না। ‘আন্তর্জাতিক ফিক্বহ একাডেমী’, সঊদী আরবের ‘আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিইয়া ওয়াল-ইফতা’ এবং ‘দারুল ইফতা আল-মিছরিইয়া’-ও এই ফাতওয়া দিয়েছে।

তারা বলেন, এসব ইনজেকশন খাদ্য, পানীয় বা এ জাতীয় কোনো কিছু নয় বলে সেগুলো সাওম ভঙ্গ করবে না।

 (09) সাওম পালনকারীর জন্য মালিশ, মলম ও প্লাস্টার ব্যবহারের বিধান

বিবরণ: চামড়ার অভ্যন্তরে রয়েছে রক্ত নালী (Blood vessel)ফলে চামড়ার উপরে যা দেওয়া হয়, তা কৈশিক নালীর (Capillary vessel) মাধ্যমে শোষিত হয়ে রক্তে গিয়ে মিশে, তবে এর শোষণ ক্ষমতা খুবই ধীর গতি সম্পন্ন। যাহোক, সাওম পালনকারী যদি চামড়ায় মালিশ, মলম ও প্লাস্টার ব্যবহার করে, তাহলে কি তার সাওমে কোনো প্রভাব ফেলবে?

হুকুম: এর হুকুম আগের মাসআলার হুকুমের মত, অর্থাৎ সুরমা এবং যেসব ঔষধ মুখ-নাক ছাড়া অন্যভাবে গ্রহণ করা হয়, সেসব সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবন তায়মিয়্যাহ রহ.-এর এক বিস্তারিত আলোচনার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, মালিশ, মলম ও প্লাস্টার সাওম ভঙ্গ করবে না। ‘ইসলামী সাহায্য সংস্থা’-ও এই মতাবলম্বন করেছে।

ইতোপূর্বে বলা হয়েছে, ঔষধি ইনজেকশন সরাসরি রক্তে দেওয়া সত্ত্বেও যেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করে না, সেহেতু আরো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব মালিশ, মলম ইত্যাদি সাওম ভঙ্গ করবে না। বর্তমান যুগের কেউ কেউ বলেছেন, সকলেই একমত যে, এসব মালিশ, মলম ইত্যাদি সাওম ভঙ্গ করবে না।

 (10) সাওম পালনকারীর জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিধান

বিবরণ: বর্তমান যুগের মত আগে এভাবে রক্তদান কর্মসূচীর বন্দোবস্ত ছিল না। বর্তমানে ব্লাড ব্যাংক নির্মিত হয়েছে, যার প্রধান উৎসই হচ্ছে, রক্তদান। কারণ, কিছু কিছু রোগীর রক্তের জরুরি প্রয়োজন পড়ে। এক্ষণে, রক্ত দিলে তা রক্তদানকারীর সাওমে কোনো প্রভাব ফেলবে কি?

হুকুম: সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা লাগানোর মাসআলার ওপর স্বেচ্ছায় রক্তদানের এই মাসআলাটি ক্বিয়াস করা যায়। মাসআলা দু’টির মধ্যে হুবহু মিল রয়েছে। কারণ দু’টিতেই শরীর থেকে রক্ত বের করার প্রসঙ্গটি রয়েছে। অবশ্য একটির উদ্দেশ্য চিকিৎসা গ্রহণ এবং অপরটির উদ্দেশ্য অন্যকে সাহায্য। উদ্দেশ্য যাই হোক, মূল বিষয় হচ্ছে, সাওম পালনকারীর দেহ থেকে রক্ত বের হওয়া। পূর্ববর্তী ফকীহগণ সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা লাগানোর মাসআলাটি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এক্ষেত্রে তাদের দুই ধরণের মত পাওয়া যায়:

প্রথম মত: হাম্বলী মাযহাব, ইসহাক, ইবনল মুনযির এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিছ ফকীহর মতে, শিঙ্গা লাগালে সাওম নষ্ট হয়ে যাবে। শায়খুল ইসলাম ইবন তায়মিয়া রহ. এই মত গ্রহণ করেছেন। সঊদী আরবের ‘আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিইয়া ওয়াল-ইফতা’ এই পক্ষ সমর্থন করেছেন।[1]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَفْطَرَ الحَاجِمُ وَالـمَحْجُومُ»

যে শিঙ্গা লাগায় এবং যার লাগানো হয়, তাদের উভয়ের সাওম ভেঙ্গে যাবে”।[2]

দ্বিতীয় মত: অধিকাংশের মতে, শিঙ্গা লাগালে সাওম নষ্ট হবে না। কেননা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,

«احْتَجَمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ صَائِمٌ»

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”।[3]

তিরমিযীর অন্য বর্ণনায় এসেছে,

«احْتَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ صَائِمٌ»

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ইহরাম এবং সাওম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন”।[4] তারা বলছেন, নিচের হাদীস প্রথম হাদীসটিকে মানসূখ বা রহিত করে দিয়েছে। কারণ, শাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, শিঙ্গা লাগাচ্ছিলেন এমন একজন ব্যক্তির পাশ দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর রামাযানের ১৮ তারিখে হেঁটে গেলেন এবং বললেন, أَفْطَرَ الحَاجِمُ وَالـمَحْجُومُযে শিঙ্গা লাগায় এবং যার লাগানো হয়, তাদের উভয়ের সাওম ভেঙ্গে যাবে”। অপর পক্ষে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বিদায় হজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন এবং ইহরাম ও সাওম অবস্থায় তিনি তাঁকে শিঙ্গা লাগাতে দেখেছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, পরের ঘটনা আগের বর্ণনাকে রহিত করে দিচ্ছে।উপরোক্ত মতানৈক্যের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, প্রথম মতানুযায়ী স্বেচ্ছায় রক্ত দিলে তা সাওম নষ্ট করবে। তবে দ্বিতীয় মতানুযায়ী, তা সাওম ভঙ্গ করবে না।

 [1] ফাতওয়া নং ১১৯১৭

[2]
সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৭৭৪ ইমাম আহমাদ রহ. বলেছেন, এই বিষয়ে এটি বিশুদ্ধতম হাদীস।

[3]
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৯

[4]
সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ৭৭৪

 

(11)  সাওম পালনকারীর রক্ত পরীক্ষা করার বিধান

বিবরণ: রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু কিছু রোগীর রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কখনও কখনও দেখা যায় যে, রোগী সাওম রেখেছে। এক্ষণে, রক্ত পরীক্ষা করালে কি তা তার সাওমে কোনো প্রভাব ফেলবে?

হুকুম: পরীক্ষার জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণ রক্ত নিলে তা শিঙ্গা লাগানোর মত বিবেচিত হবে না। কেননা কোনো কোনো হাদীসে শিঙ্গা লাগালে কেন সাওম নষ্ট হবে, তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে, রোগীর দুর্বলতা বোধ। কিন্তু সামান্য রক্ত নিলে সেই দুর্বলতা সৃষ্টি হয় না। শাইখ মুহাম্মাদ উসাইমীন রহ. এই মতের পক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে ফাতওয়া দিয়েছেন।সাওম নষ্ট না হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, রোগীর দেহ থেকে সংগৃহীত রক্ত অবশ্যই খুব সামান্য হতে হবে। উল্লেখ্য যে, কোনো কোনো সময় এক সাথে কয়েক রকম পরীক্ষার জন্য বেশি পরিমাণ রক্ত নেওয়া হয়। আর সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ যদি বেশি হয়, তাহলে আগের মাসআলার মতভেদ এখানেও প্রযোজ্য হবে। সঊদী আরবের ‘আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিইয়া ওয়াল-ইফতা’-এর ফাতওয়ায় এসেছে, ‘সংগৃহীত রক্ত যদি সামান্য পরিমাণ হয়, তাহলে তাকে ঐ দিনের ক্বাযা আদায় করতে হবে না। পক্ষান্তরে সংগৃহীত রক্ত বেশি হলে ঐ দিনের ক্বাযা আদায় করতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন মতানৈক্যের ঊর্ধ্বে থাকা যাবে, অন্যদিকে তেমনি সাবধানতা অবলম্বন করা হবে’।[1]

 [1] ফাতওয়া নং ৫৬

 

কপি

 

 

No comments

Powered by Blogger.