রোযার আহকাম ও মাসায়েল
সিয়াম মুসলিমের জীবনের এক বড় নেয়ামাত
vসিয়ামের ফযিলত
প্রশ্ন- সিয়াম
পালনকারীকে আল্লাহ কী কী পুরস্কার দেবেন?
সিয়াম পালনকারীকে যেসব পুরস্কার ও
প্রতিদান আল্লাহ তা‘আলা দেবেন তার অংশ বিশেষ এখানে উল্লেখ করা হল :
[১] আল্লাহ স্বয়ং নিজে সিয়ামের প্রতিদান দেবেন।
হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
كُلُّ عَمَلِ بَنِىْ آَدَمَ لَهُ
إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِئ بِهِ
মানুষের প্রতিটি ভাল কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু সিয়াম শুধুমাত্র
আমার জন্য, অতএব
আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।
(বুখারী : ১৯০৪)
[২] সিয়াম অতি উত্তম নেক আমল
আবূ হুরাইরাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র একটি হাদীসে তিনি বলেছিলেন :
يَا رَسُوْلَ اللهِ مُرْنِيْ
بِعَمَلٍ، قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لاَ عَدْلَ لَهُ
‘‘হে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে একটি অতি উত্তম নেক আমলের
নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি
সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদা সম্পন্ন কোন আমল নেই।’’
(নাসাঈ :
২২২২)
অন্যান্য ইবাদত মানুষ দেখতে পায়। কিন্তু সিয়ামের মধ্যে তা নেই। লোক দেখানোর
কোন আলামত সিয়াম পালনে থাকে না। শুধুই আল্লাহকে খুশী করার জন্য তা করা হয়। তাই এ
ইবাদতের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ ইখলাস।
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ
أَجْلِيْ
‘‘সিয়াম পালনকারী শুধুমাত্র আমাকে খুশী করার জন্যই পানাহার ও যৌন উপভোগ পরিহার করে।’
[৩] ক- জান্নাত লাভ সহজ হয়ে যাবে।
সহীহ ইবনু হিববান কিতাবে আছে আবূ উমামা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন-
يَا رَسُوْلَ اللهِ دُلُّنِيْ عَلَى
عَمَلٍ أَدْخُلُ بِهِ الْجَنَّةَ قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لاَ مِثْلَ
لَهُ
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু
আনহু বললেন, হে
আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যার কারণে আমি জান্নাতে যেতে পারি।
তিনি বললেন, তুমি
সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ইবাদাত নেই।
(নাসাঈ : ২২২১
)
খ. সিয়াম পালনকারীকে বিনা হিসেবে প্রতিদান দেয়া হয়
অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান আল্লাহ তা‘আলা তার দয়ার বদৌলতে ১০ থেকে ৭০০ গুণ
পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু সিয়ামের প্রতিদান ও তার সাওয়াব এর চেয়েও বেহিসেবী
সংখ্যা দিয়ে গুণ দিয়ে বাড়িয়ে দেয়া হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,
كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ
الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ عَزَّ
وَجَلَّ (إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِي بِهِ(
‘‘মানব
সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে
থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধুমাত্র আমার
জন্য, আমিই এর
প্রতিদান দেব।
(মুসলিম : ১১৫১)
অর্থাৎ কি পরিমাণ সংখ্যা দিয়ে গুণ করে এর প্রতিদান বাড়িয়ে দেয়া হবে এর কোন
হিসাব নেই,
শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন সিয়ামের পুণ্যের ভান্ডার কত
সুবিশাল হবে।
[৪] জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিয়াম ঢাল স্বরূপ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ يَسْتَجِنُّ بِهَا
الْعَبْدُ مِنَ النَّارِ
‘‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ। এ
দ্বারা বান্দা তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পার।’’
(আহমাদ : ১৫২৯৯)
[৫] জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য সিয়াম একটি মজবুত দূর্গ
হাদীসে আছে,
اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ وَحِصْنُ
حَصِيْنٌ مِنَ النَّارِ
‘‘সিয়াম
ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার এক মজবুত দূর্গ।’’
(আহমাদ : ৯২২৫)
[৬] আল্লাহর পথে সিয়াম পালনকারীকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখেন।
এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ا- مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُوْمُ
يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ وَجْهَهُ عَنِ
النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا
(ক) ‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন।
(বুখারী : ২৮৪০; মুসলিম : ১১৫৩)
ب-مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ بَاعَدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا
(খ) ‘‘যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার কাছ থেকে জাহান্নামকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেবেন।
(মুসলিম : ১১৫৩)
ج-عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ
اللهُ عَنْهُ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مُرْنِي بِأَمْرٍ يَنْفَعُنِي اللهُ بِهِ
قَالَ عَلَيْكَ بِالصِّيَامِ فَإِنَّهُ لاَ مِثْلَ لَهُ
(গ) আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ‘‘আমি আল্লাহর রাসূলকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন, তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমকক্ষ (মর্যাদা সম্পন্ন) কোন ইবাদত নেই।
(নাসাঈ : ২২২১)
[৭] ইফতারের সময় বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।
হাদীসে আছে :
إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ
فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلِكَ كُلّ لَيْلَةٍ
ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন
বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাযানের প্রতি
রাতেই চলতে থাকে।
(আহমাদ : ৫/২৫৬)
[৮] সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশ্কের চেয়েও উত্তম (সুগন্ধিতে
পরিণত হয়)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
وَالَّذِيْ نَفْسِ مُحَمَّدٍ
بِيَدِهِ لَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ.
যার হাতে মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জীবন সে সত্তার শপথ করে বলছি, সিয়াম পালনকারীর মুখের
গন্ধ আল্লাহ তা‘আলার কাছে মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায়।
(বুখারী : ১৯০৪; মুসলিম : ১১৫১)
[৯] সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ
عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ
সিয়াম পালনকারীর জন্য
দু’টো বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত রয়েছে : একটি হল ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হল তার রবের
সাথে সাক্ষাতের সময়।
(বুখারী : ৭৪৯২; মুসলিম : ১১৫১)
[১০] সিয়াম কিয়ামাতের দিন সুপারিশ করবে
হাদীসে আছে,
اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ
يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ
مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ
الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ
সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের
দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা
থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর।
অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে।
(আহমাদ : ২/১৭৪)
[১১] সিয়াম হল গুনাহের কাফফারা
(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ ... إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ
ٱلسَّئَِّاتِۚ ١١٤ ﴾ [هود: ١١٤]
নিশ্চয়ই নেক আমল পাপরাশি দূর করে দেয়।
(সূরা হুদ : ১১৪)
(খ) নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ
وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَجَارِهِ تُكَفِّرُهَا الصَّلَاةُ وَالصَّوْمُ
وَالصَّدَقَةُ (بخارى ومسلم(
পরিবার পরিজন, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশিদের
নিয়ে জীবন চলার পথে যেসব গুনাহ মানুষের হয়ে যায় সালাত, সিয়াম ও দান খয়রাত সেসব
গুনাহ মুছে ফেলে দেয়।
(বুখারী : ৫২৫; মুসলিম : ১৪৪)
[১২] সিয়াম পালনকারীর এক রমযান থেকে পরবর্তী রমাযানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া
ছগীরা গুনাহগুলোকে মাফ করে দেয়া হয়।
ক- আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ إِن تَجۡتَنِبُواْ كَبَآئِرَ مَا تُنۡهَوۡنَ عَنۡهُ نُكَفِّرۡ عَنكُمۡ سَئَِّاتِكُمۡ وَنُدۡخِلۡكُم مُّدۡخَلٗا كَرِيمٗا
‘‘তোমরা যদি নিষিদ্ধ
কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাক তাহলে তোমাদের ছগীরা গুনাহগুলোকে মুছে দেব এবং
(জান্নাতে) তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব।
(সূরা নিসা :
৩১)
খ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
اَلصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ
وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفَّرَاتٌ لِمَا
بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنِبَتِ الْكَبَائِرُ
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এর মধ্যবর্তী সময় ও
এক জুমুআ থেকে অপর জুমুআ এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে
হয়ে যাওয়া ছগীরা গুনাহগুলোকে (উল্লেখিত ইবাদতের) কাফ্ফারাস্বরূপ মুছে দেয়া হয় সে যদি
কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।
(মুসলিম : ২৩৩)
[১৩] সিয়াম পালনকারীর পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا
وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে
সাওয়াব হাসিলের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
(বুখারী : ৩৮; মুসলিম : ৭৬৯)
[১৪] সিয়াম যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ
اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ
وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ
لَهُ وِجَاءٌ
হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ রাখে
সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী। আর যে ব্যক্তি বিবাহের
সামর্থ রাখেনা সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার জন্য নিবৃতকারী। (অর্থাৎ সিয়াম
পালন যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত করে রাখে)
(বুখারী : ১৯০৫; মুসলিম : ১৪০০)
[১৫] সিয়াম পালনকারীরা রাইয়ান নামক মহিমান্বিত এক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ
করবে।
রআসুল সা বলেন,
إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا
يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ
يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ لاَ
يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ
مِنْهُ أَحَدٌ
জান্নাতে একটি দরজা
রয়েছে। যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন শুধু সিয়ামপালনকারীরা ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ
করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা
হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে ঐ
দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। তারা প্রবেশ করার পর ঐ দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে
তারা ব্যতীত অন্য কেউ আর সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে ঢুকতে পারবেনা।
(বুখারী : ১৮৯৬; মুসলিম : ১১৫২ )
প্রশ্ন- সিয়ামের মধ্যে মানুষের জীবনে
কী কী উপকার রয়েছে?
সিয়ামের উপকারিতা বহুবিধ । যার অংশবিশেষ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
(ক) প্রথমতঃ মানসিক উপকারিতা
[১] সিয়াম তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহ ভীরু হতে সহায়তা করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن
قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ
ঈমানদারগণ!, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয
করা হয়েছে, যেমন
ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।
(বাকারাহ : ১৮৩)
[২] শয়তানী শক্তি ও কু-প্রবৃত্তির ক্ষমতা
দুর্বল করে দেয়। মানবদেহের শরীরের যে শিরা উপশিরা দিয়ে শয়তান চলাচল করে সিয়ামের
ফলে সেগুলো নিস্তেজ ও কর্মহীন হয়ে পড়ে।
[৩] সিয়াম হল আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পন ও ইবাদতের
প্রশিক্ষণ।
[৪] আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ ও হারাম বস্ত্ত থেকে দূরে
থাকার সহনশীলতার প্রশিক্ষণ দেয় এ সিয়াম।
[৫] ঈমান দৃঢ়করণ এবং বান্দার প্রতি আল্লাহর সার্বক্ষণিক
নজরদারীর অনুভূতি সৃষ্টি করে দেয়। এজন্য রোযাদার লোকচক্ষুর আড়ালে গোপনেও কোন কিছু
খায় না।
[৬] দুনিয়ার ভোগ বিলাসের মোহ কমিয়ে সিয়াম পালনকারীকে
আখিরাতমূখী হওয়ার দীক্ষা দেয় এবং ইবাদতের প্রতি তার ক্ষেত্র প্রসারিত করে দেয়।
[৭] সিয়াম সাধনার ফলে বান্দা সৎ গুণাবলী ও সচ্চরিত্রের
অধিকারী হয়ে থাকে।
[৮] সিয়ামে ক্ষুধার অনুভূতিতে অভাবী ও দরীদ্র জনগোষ্ঠীর
দূরাবস্থা অনুধাবন করতে শিখায়। ফলে তাকে বঞ্চিত ও অনাহারী মানুষের প্রতি দয়াদ্র ও
সহানুভুতিশীল করে তুলে।
[৯] সৃষ্ট জীবের সেবা করার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।
[১০] সিয়াম পালন আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে।
[১১] এ রমযান বান্দাকে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা
দেয়।
(খ) দ্বিতীয়তঃ দৈহিক উপকারিতা :
[১] সিয়াম মানব দেহে নতুন সূক্ষ্ম কোষ (ঈবষষ) গঠন করে থাকে।
[২] সিয়াম পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে। ফলে
এগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং তা আবার সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।
[৩] মোটা মানুষের স্থূলতা কমিয়ে আনতে সিয়াম সাহায্য করে।
[৪] মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমিয়ে এনে অনেক রোগবালাই থেকে হিফাযত
করে।
[৫] অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে ডাইবেটিস ও গ্যাস্ট্রিক রোগ নিরাময়ে সিয়াম ফলদায়ক ও এক প্রকার সহজ চিকিৎসা।
প্রশ্ন - কাদের উপর সিয়াম পালন ফরয ?
উত্তর-
(১) প্রাপ্ত বয়স্ক,
(২) সুস্থ বিবেক
বুদ্ধিসম্পন্ন,
(৩) মুকীম ও সমর্থবান-এমন সব গুণ সম্পন্ন প্রত্যেক মুসিলম
নর-নারীর উপর সিয়াম পালন করা ফরয।
প্রশ্ন
- কী অবস্থায় কাদের উপর সিয়াম ফরয নয় ?
উত্তর -
নিম্নবর্ণিত দশপ্রকার
মানুষের উপর সিয়াম পালন ফরয নয়,
তারা হল :
[১] অমুসলিম
[২] অপ্রাপ্ত বয়স্ক/ অর্থাৎ
নাবালেগ
[৩] পাগল
[৪] এমন বৃদ্ধলোক যে
ভাল-মন্দ পার্থক্য করতে পারে না ।
[৫] এমন বৃদ্ধ ব্যক্তি যে
রোযা রাখতে সমর্থ নয়। বা এমন রোগী যার রোগমুক্তির সম্ভাবনা নেই। এমন ব্যক্তিদের
উপর ফিদইয়া দেয়া ওয়াজিব।
[৬] মুসাফির
[৭] রোগাক্রান্ত ব্যক্তি
[৮] ঋতুবতী মহিলা
[৯] গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী
নারী
[১০] দুর্ঘটনায় পতিত বা
বিপদগ্রস্ত লোককে রক্ষাকারী ব্যক্তি।
v সিয়াম অবস্থায় যা অবশ্য করণীয়
প্রশ্ন
- সিয়াম
পালনের ক্ষেত্রে কী কী কাজ ও আমল অত্যাবশ্যক ?
সিয়াম অবস্থায় অত্যাবশ্যকীয়
আমলসমূহ :
[১] পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায় করা।
কোন শরয়ী উযর না থাকলে
সালাত মাসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে আদায় করা। জামাআতে সালাত আদায়কে বিজ্ঞ ওলামায়ে
কিরাম ওয়াজিব বলেছেন। যারা জামাআতের সাথে সালাত আদায় করে না তারা ২৭ গুণ সাওয়াব
থেকে বঞ্চিততো হয়ই, উপরন্তু ফজর ও ঈশার জামাআত
পরিত্যাগকারীকে হাদীসে মুনাফিকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যারা অবহেলা করে বিনা ওযরে
সালাত দেরী করে আদায় করে তার সালাত একশবার পড়লেও তা কবুল হবে না বলে উলামায়ে কিরাম
মন্তব্য করেছেন। আর মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকতে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধ ব্যক্তিকেও অনুমতি প্রদান করেন নি।
[২] মিথ্যা না বলা।
[৩] গীবত না করা- আর তা হলো অসাক্ষাতে কারো দোষত্রুটি বা
সমালোচনা করা
[৪] চোগলখোরী না করা- আর তা হলো এক জনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে কিছু বলে ক্ষেপিয়ে তোলা ও ঝগড়া লাগিয়ে দেয়া।
[৫] ক্রয় বিক্রয় ও অন্যান্য কাজে কাউকে ধোঁকা না দেয়া।
[৬] গান গাওয়া ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকা, মধুর
কণ্ঠে গাওয়া যৌন উত্তেজনামূলক গান থেকে আরো বেশি সাবধান থাকা।
[৭] সকল প্রকার হারাম কাজ-কর্ম পরিহার করা।
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
إِذَا صُمْتَ فَلْيَصُمْ سَمْعُكَ وَبَصَرُكَ وَلِسَانُكَ عِنْدَ
الْكَذِبِ وَالْمَحَارِمِ وَدَعْ عَنْكَ أَذَى الْجَارِ وَلْيَكُنْ عَلَيْكَ
وَقَار وَسَكِيْنَة وَلاَ يَكُنْ يَوْمُ صَوْمِكَ وَيَوْمُ فِطْرِكَ سَوَاء
যখন তুমি রোযা রাখবে তখন
যেন তোমার কর্ণ, চক্ষু
এবং জিহবাও মিথ্যা ও হারাম কাজ থেকে রোযা রাখে। তুমি প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া থেকে
বিরত থাকো। আত্মমর্যাদা ও প্রশান্তভাব যেন তোমার উপর বজায় থাকে এমন হলে তোমার রোযা
রাখা ও না রাখা সমান হবে না।
(ইবন আবী শাইবা : ৮৮৮০)
[৮] ইসলামকে জীবনের সকলক্ষেত্রে অনুসরণ করা।
মসজিদে যেমনভাবে ইসলাম
তেমনি পরিবার, সমাজ, ব্যবসা
এবং রাষ্ট্রীয় জীবনেও ইসলামকে একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে বাস্তবায়ন করা।
আল্লাহ বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ
ءَامَنُواْ ٱدۡخُلُواْ فِي ٱلسِّلۡمِ كَآفَّةٗ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা
ইসলামে দাখিল হও পরিপূর্ণভাবে (অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে)।
(বাকারাহ ২০৮)
[৯] সিয়াম আবস্থায় পাপাচার ত্যাগ করা এবং
অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
كَمْ مِنْ صَائِمِ لَيْسَ لَهُ مِنْ
صِيَامِهِ إِلاَّ الظَّمْأَ وَكَمْ مِنْ قَائِمِ لَيْسَ لَهُ مِنْ قِيَامِهِ
إِلاَّ السَّهْر
(ক) কত সিয়াম পালনকারী আছে যাদের রোযা হবে শুধু উপোস থাকা। আর কতলোক রাতের ইবাদতকারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া ইবাদতের কিছুই হবে না। (অর্থাৎ পাপকাজ থেকে বিরত না হওয়ার কারণে তার রোযা যেন রোযা নয়, তার রাতের সালাতও যেন ইবাদত নয়)।
(আহমাদ : ৯৬৮৩; দারেমী : ২৭৬২)
فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ يَوْمَئِذٍ
وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ
صَائِمٌ
(খ) তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তাকে গালাগালি ও তার সাথে মারামারি করতে আসে, সে যেন বলে ‘‘আমি রোযাদার’’।
(মুসলিম: ১১৫১)
لَيْسَ الصِّيَامُ مِنَ الأَكْلِ وَالشُّرْبِ إِنَّمَا الصِّيَامُ
مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ
(গ)
শুধুমাত্র পানাহার ত্যাগের নাম রোযা নয়,
প্রকৃত রোযা হল (সিয়াম
অবস্থায়) বেহুদা ও অশ্লীল কথা এবং কাজ থেকে বিরত থাকা।
(ইবনু খুযাইমা : ১৯৯৬)
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ وَالْجَهْلَ
فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
(ঘ) যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি সে ব্যক্তির শুধুমাত্র পানাহার বর্জনের (এ সিয়ামে) আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।
(বুখারী : ৬০৫৭)
[৯] রোযা রাখা (ও অন্যান্য ইবাদত) একমাত্র
আল্লাহকে খুশী করার জন্য করা।
আল্লাহ বলেন,
وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا
لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ ...
‘‘মানুষকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাদের ইবাদত যেন শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য হয়।’’
(বাইয়্যেনাহ : ৫)
[১০] সকল হুকুম আহকাম পালনে নাবীজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নাত তরীকা অনুসরণ করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
‘‘যে ব্যক্তি এমন (তরীকায়) কোন আমল করল, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্দেশিত নয়, সেই কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য তো হবেই না রবং তা হবে প্রত্যাখ্যাত’।
(মুসলিম : ১৭১৮)
[১১] সিয়াম ভঙ্গের সহায়ক কাজ-কর্ম পরিহার করা , স্বামী-স্ত্রীর আলিঙ্গন, চুম্বন
বা একত্রে শয়ন জায়েয হলেও তা যেন রোযা ভঙ্গের পর্যায়ে নিয়ে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক
থাকা।
[১২]
অন্তরে ভয় ও আশা পোষণ করা।
কোন অজানা ভুলের জন্য রোযাটি ভেঙ্গে যায় কিনা এ ধরনের ভয় থাকা এবং আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান পাবো এ আশাও পোষণ করা। অন্তরকে এ দু’য়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করে রাখতে হবে।
প্রশ্ন
- যারা বিনা
উযরে সিয়াম ভঙ্গ করে তাদের শাস্তি কী হবে?
তারা ভীষণ শাস্তির
সম্মুখীন হবে। এ বিষয়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকটি
হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল :
[১]
আবু উমামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম
যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গালটি ফাড়া। তা থেকে
রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা?
বলা হল, এরা
ঐসব ব্যক্তি যারা বিনা উযরে রমযান মাসের সিয়াম ভঙ্গ করেছিল। (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ)
[২]
যে ব্যক্তি (রমাযানের) এ মুবারক মাসেও আল্লাহকে রাজী করাতে পারল না, সে
বড়ই দুর্ভাগা। (ইবনে হিববান)
[৩] যে ব্যক্তি শরীয়তী উযর ছাড়া এ (রমযান) মাসে একটি রোযাও ছেড়ে দেবে, সে যদি এর বদলে সারা জীবনও সিয়াম পালন করে তবু তার পাপের খেসারত হবে না।
(বুখারী)
প্রশ্ন
- ফরয রোযার
নিয়ত কখন করতে হয় ?
ফজর উদয় হওয়ার আগেই অর্থাৎ
রাতের মধ্যেই নিয়ত করে ফেলতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
مَنْ لَمْ يُجْمِعْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلاَ صِيَامَ
لَهُ
১. যে ব্যক্তি ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই সিয়াম পালনের নিয়ত করল না তার সিয়াম শুদ্ধ হল না।
(আবূ দাঊদ : ২৪৫৪)
مَنْ لَمْ يَبِيْتِ الصِّيَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَلاَ صِيَامَ لَهُ
২. যে ব্যক্তি রাতের মধ্যেই সিয়ামের নিয়ত করল না তার সিয়াম শুদ্ধ হল না। (এ নির্দেশ শুধুমাত্র ফরয রোযার ক্ষেত্রে)
(নাসাঈ : ৪/১৯৬)
প্রশ্ন - নিয়ত কাকে বলে ? এটা কীভাবে করব?
নিয়ত হল মনের ইচ্ছা, সঙ্কল্প
বা প্রতিজ্ঞা করা। এটা অন্তরের কাজ,
মুখে উচ্চারণ করার বিষয়
নয়। জিহবার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোন কাজের
প্রারম্ভে মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পোষণ করা হয় এটাকেই নিয়ত বলা হয়।
প্রশ্ন
- কেউ কেউ নিয়ত করার বদলে
নিয়ত পড়েন এবং আরবীতে نَوَيْتُ أَنْ أَصُوْمَ غَدًا ‘‘নাওয়াইতু আন’’ বলে আরবীতে নিয়ত শুরু করেন
এমন করলে কি সওয়াব বেশি হবে ?
নিয়ত কখনই পড়তে বলা হয় নি।
করতে বলা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরাম এবং চার
মাযহাবের ইমামগণ কেউই মুখে মুখে নিয়ত পড়েননি। কাজেই যারা নিয়ত পড়েন, মুখে
মুখে বলেন এটা শুদ্ধ নয়। আর সওয়াব বেশি হওয়ারতো প্রশ্নই আসে না। করতে নির্দেশ
দিয়েছেন পড়তে নয়। কাজেই মুখে মুখে আরবীতে নিয়ত পড়লে এজন্য কোন সওয়াব হবে না।
বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম বরং
এটাকে বিদ’আত বলেছেন।
বিশুদ্ধ পদ্ধতি হল মনে মনে কল্পনা করে নিয়ত করা।
প্রশ্ন
- ‘‘নাওয়াইতু আন’’ বলে নিয়ত শুরু করার প্রচলনটা কীভাবে হল ?
কারো কারো ধারণা কায়েদা
বাগদাদীর লেখক নিজে থেকে বানিয়ে এটা শুরু করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অন্যান্য
বইয়ের লেখকেরা কোন যাচাই বাছাই ছাড়াই তাদের বইগুলোতেও এগুলো নকল করেছেন। এগুলোর
কোন অস্তিত্ব বা দলীল কুরআন-হাদীসে কোথাও নেই।
প্রশ্ন
- রাতের সাহরী খাওয়া নিয়তের
জন্য যথেষ্ট হবে কি ?
রোযার জন্য নিয়ত করা ফরয।
যে ব্যক্তি সিয়াম পালনের জন্য সাহরী খেল- এ সাহরী প্রমাণ করে যে এটা তার শুধুমাত্র
সিয়াম পালনের জন্যই খাওয়া হয়েছে। কাজেই এ সাহরী নিয়তের স্থলাভিষিক্ত বলে ধরে নেয়া
যায়।
প্রশ্ন - পুরো রমাযানের জন্য শুরুর দিন একবার নিয়ত
করে নিলে কি তা যথেষ্ট হবে?
হাঁ, তা
হবে। তবে প্রতিদিনই নিয়ত করা মুস্তাহাব বা সুন্নাত। উল্লেখ্য যে, সাহরী
খাওয়া সুন্নাত, কিন্তু নিয়ত করা ফরয।
প্রশ্ন
- সিয়ামের
কাযা ও কাফফারা কী জিনিস ? এগুলো কীভাবে আদায় করতে হয়?
অনিচ্ছাকৃত বা উযরবশত ছুটে
যাওয়া সাওমের বদলে কাযা, আর উযর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে
ছেড়ে দেয়া সাওমের বদলে দিতে হয় কাফফারা। কাযা হলে সম পরিমাণ সাওম আদায় করতে হয়। আর কাফ্ফারা হলে, সাওম না রাখার কারণে সুনির্দিষ্ট কিছু কর্তব্য পালন করতে
হয়।
কাফফারা তিন ধরনের।
(১) গোলাম আযাদ করা, আর
তা সম্ভব না হলে
(২) একাধারে ৬০টি রোযা রাখা, আর
সেটিও সম্ভব না হলে
(৩) ৬০ জন মিসকীনকে এক বেলা
খানা খাওয়ানো।
v যে সকল কারণে সিয়াম মাকরুহ হয়
প্রশ্ন
- সওম
মাকরূহ হওয়ার অর্থ কি?
মাকরূহ শব্দের অর্থ
অপছন্দনীয়। আর সওমের মাকরূহ হল সিয়াম পালন অবস্থায় যেসব কাজ করা অপছন্দনীয়। এ
জাতীয় কাজ সিয়াম ভঙ্গ করে না কিন্তু এসব চর্চা করা কখনো কখনো সিয়াম বিনষ্টের
কাছাকাছি নিয়ে যায়। এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
প্রশ্ন
- কী কী
কারণে সিয়াম মাকরূহ হয়?
সিয়াম অবস্থায় নিম্ন
বর্ণিত যে কোন কাজ করলে সিয়াম মাকরূহ হয়ে যায় :
(১) অযুর সময় গড়গড়া করে কুলি
করা, জোড় দিয়ে নাকে পানি টানা। এতে গলা বা নাক দিয়ে ভিতরে পানি
প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
(২) বিনা প্রয়োজনে খাদ্যের
স্বাদ দেখা। তবে প্রয়োজন হলে দেখতে পারে।
(৩) থুথু কফ মুখে জমিয়ে গিলে
ফেলা। অল্প অল্প থুথু গিলে ফেললে কোন অসুবিধা নেই।
(৪) যৌন অনুভূতি নিয়ে
স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করা, বারবার তার দিকে তাকানো, বারবার
সহবাসের কল্পনা করা। কারণ এসব কার্যক্রমে বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা থেকে যায়।
প্রশ্ন
- বিনা প্রয়োজনে যদি কোন মহিলা স্বীয় বাচ্চাকে
রোযা অবস্থায় খাদ্য চিবিয়ে দেয় তবে তার হুকুম কী?
রোযা মাকরূহ হবে অর্থাৎ
অন্য লোকে যদি খাদ্য চিবিয়ে দেয়ার মতো থাকে বা অন্য কোন উপায়ে যদি শিশুকে খাদ্য
চিবিয়ে দেয়া যায়, তাহলে রোযাদার মহিলার জন্য
চিবিয়ে দেয়া মাকরূহ হবে।
বি:
দ্র:- প্রয়োজনবশত: চিবিয়ে দিলে তা মাকরূহ হবে না
বরং চিবিয়ে দেয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে পেটে খাদ্যের কিছু অংশ চলে না যায়।
v সিয়াম ভঙ্গ হওয়ার কারণ সমূহ
প্রশ্ন
- কী
কী কারণে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যায়?
নিম্নোক্ত যে কোন কারণ
দেখা গেলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে :
১.
ইচ্ছা পূর্বক পানাহার ও ধুমপান করা।
২.
স্বেচ্ছায় বমি করা
৩.
স্বামী-স্ত্রীর
মিলন
৪.
বৈধ অবৈধ যে কোন প্রকার যৌনক্রিয়া।
৫.
পানাহারের বিকল্প কিছু গ্রহণ করা।
যেমন- ইনজেকশান বা রক্ত গ্রহণ করা। আর তা এমন
ইনজেকশান যার মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা হয়।
৬.
মাসিক স্রাব ও প্রসবোত্তর স্রাব
প্রশ্ন
- কেউ যদি ভুলক্রমে কিছু খেয়ে ফেলে তবে কি তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে
যাবে ?
না, ভাঙ্গবে না।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا نَسِيَ فَأَكَلَ وَشَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا
أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ
১. যদি কেউ ভুলক্রমে
পানাহার করে তবে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে নেয়, কেননা
আল্লাহ তা‘আলাই তাকে এ পানাহার করিয়েছেন (অর্থাৎ এতে তার রোযা ভাঙ্গেনি)।
(বুখারী: ১৯৩৩; মুসলিম:
১১৫৫)
مَنْ أَفْطَرَ فِيْ رَمَضَانَ نَاسِيًا فَلاَ قَضَاءَ عَلَيْهِ
وَلاَ كَفَّارَةَ
২. যে ব্যক্তি ভুল বশতঃ
রমাযানের দিনে বেলায় কিছু খেয়ে ফেলল : সেজন্য কোন কাযা ও কাফফারা দিতে হবে না।
(দারাকুতনী: ২৪; বায়হাকী:
৭৮৬৩)
প্রশ্ন- অযু গোসলের সময় অসাবধানতা বশতঃ হঠাৎ করে কিছু পানি গলায়
ঢুকে গেলে বা জোরপূর্বক খাওয়ানো হলে সিয়াম কি ভঙ্গ হয়ে যাবে ?
না, ভঙ্গ
হবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إِنَّ اللهَ وَضعَ عَنْ أُمَّتِى الْخَطَأ وَالنِّسْيَانَ وَمَا
اسْتَكْرَهُوْا عَلَيْهِ
‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের ভুল-ভ্রান্তি ও বাধ্য হয়ে ঘটে যাওয়া পাপরাশি মাফ করে দিবেন।
(ইবন মাজা : ২০৪৫)
প্রশ্ন- সিয়াম অবস্থায় কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বমি করে, তাহলে তাকে কী করতে হবে ?
এ সিয়াম আবার কাযা করতে
হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
مَنْ ذرعه قىء فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءً وإن استقاء فليقض
যে ব্যক্তি অনিচ্ছা বমি করল তাকে উক্ত সিয়াম কাযা করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করল তাকে উক্ত সিয়াম অবশ্যই কাযা করতে হবে।
(আবূ
দাঊদ : ২৩৮০)
প্রশ্ন- রমযান মাসে দিনের বেলায় স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে স্বামী-স্ত্রীর
মিলন হলে এর হুকুম কি?
এতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
এর ফলে কাযাও করতে হবে এবং কাফফারাও দিতে হবে।
আর তা হল
(ক)
একদিনের রোযার জন্য একাধারে দু’মাস রোযা রাখতে হবে। মাঝখানে একদিন বাদ গেলে এর
পরের দিন থেকে আবার একাধারে পূর্ণ দু’ মাস রোযা রাখতে হবে। অথবা
(খ)
ষাটজন মিসকিনকে এক বেলা আহার করাতে হবে।
প্রশ্ন - উপরোক্ত ঘটনায় কারণে কে কাযা করবে ? স্বামী নাকি স্ত্রী ?
উভয়েই কাযা করবে এবং
কাফফারা দিবে। তবে স্ত্রীকে যদি জোরপূর্বক সঙ্গম করে থাকে তাহলে কাযা ও কাফফারা
দিবে শুধু স্বামী, স্ত্রী নয়।
উল্লেখ্য যে, বৈধ
ও অবৈধ যে কোন উপায়ে বীর্যপাত ঘটানো হলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন - রমযান মাসে রাতের বেলায় কি স্ত্রী সহবাস
করা যাবে ?
হা, তা জায়েয আছে।
প্রশ্ন - কোন প্রকার ইনজেকশানে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
(ক) রক্তশূন্যতা পূরণ জনিত ইনজেকশান
(খ) শক্তি বর্ধক ইনজেকশান
(গ) স্যালাইন ও পানাহারের
স্থলাভিষিক্ত ইনজেকশান। এর কোন একটা পুশ করলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
তবে শুধুমাত্র ঔষধজনিত হলে
সিয়াম ভঙ্গ হবে না।
প্রশ্ন
- দিবসের কোন অংশে রক্তস্রাব
শুরু হলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
দিবসের শুরু বা শেষ যে কোন
অংশে স্রাব শুরু হলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন - মাসিক স্রাব শুরু হওয়া অনুভব করছে কিন্তু
হয় নি। এ অবস্থায় কি সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
শুরু না হওয়া পর্যন্ত ভঙ্গ
হবে না।
প্রশ্ন - ঋতুবতী মহিলারা কি কাযা করবে?
শুধুমাত্র সিয়াম কাযা
করবে। সালাত কাযা করতে হবে না।
আয়িশাহ বলেন :
كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ
نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ
আমাদেরও এটা ঘটত (অর্থাৎ মাসিক হতো)। তখন আমরা শুধু সিয়াম কাযা করতে আদিষ্ট হতাম। কিন্তু সালাত কাযা করতে আদিষ্ট হতাম না।
(মুসলিম: ৩৩৫)
প্রশ্ন - ফজরের ওয়াক্ত হয়নি মনে করে
ফজর শুরু হওয়ার পর পানাহার করল,
এমনিভাবে
সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে অস্ত যাওয়ার আগেই ইফতার করে ফেলল- এ সিয়াম কি শুদ্ধ
হবে?
হা, শুদ্ধ
হবে এ জন্য যে, এটি তার অজানা ও
অজ্ঞতাবশতঃ হয়ে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
:
وَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ
جُنَاحٞ فِيمَآ أَخۡطَأۡتُم بِهِۦ وَلَٰكِن مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوبُكُمۡۚ
وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٥
‘ভুলক্রমে কোনকিছু করে ফেললে এতে কোন গুনাহ হবে না। তবে জেনে শুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন অপরাধ করলে অবশ্যই এতে গুনাহ হবে। আল্লাহ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমাশীল ও মেহেরবান’।
(আহযাব : ৫)
প্রশ্ন- সিয়াম অবস্থায় ভুলে পানাহার শুরু করে দিল। এমন সময় হঠাৎ
স্মরণ হল। এ ব্যক্তি কি করবে ?
মনে হওয়ামাত্র মুখের
বাকীখানা বা পানীয় ফেলে দেবে আর যতটুকু ভুলে খাওয়া হয়ে গেছে সেজন্য সিয়াম ভঙ্গ হবে
না। তবে এ দৃশ্য যে দেখবে তার উপর ফরয হল সিয়াম পালনকারীকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।
প্রশ্ন
- কেউ যদি কোন সিয়ামকারীকে
জবরদস্তি করে কোন কিছু খাওয়ায় তাহলে কি হবে ?
এতে সিয়াম ভঙ্গ হবে না।
অনুরূপভাবে জোর করে কোন মুমিনকে কাফির বানাতে চাইলে সে কাফির হবে না।
অনুরূপভাবে স্ত্রীর সম্মতি
ব্যতিরেকে স্ত্রীকে জোর করে সঙ্গম করলে স্ত্রীর সিয়াম ভাঙ্গবে না কিন্তু স্বামীর
সিয়াম অবশ্যই ভেঙ্গে যাবে।
প্রশ্ন - বিনা উযরে যে ইচ্ছা করে অতীতের সিয়াম ভঙ্গ
করেছে তার কি করতে হবে?
এটি একটি মহাপাপ। তাকে
তাওবা করতে হবে এবং এসব রোযা কাযা করতে হবে।
প্রশ্ন - দিনের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ
হয়ে যায় তাহলে কি হবে?
এতে রোযা ভাঙ্গবে না। কারণ
স্বপ্নদোষ নিজের ইচ্ছাকৃত কোন ঘটনা নয়।
প্রশ্ন
- সিয়াম অবস্থায় থুথু কাশি
গিলে ফেলা কেমন ?
মুখে থাকা থুথু গিলে ফেললে
অসুবিধা নেই। তবে কাশি গিলে ফেলা জায়েয নয়। কেননা কাশি থুথুর মত নয়।
প্রশ্ন
- নাক দিয়ে রক্ত পড়লে কিংবা
দাঁত উঠলে অথবা আহত হয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে কি সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে ?
না, এতে
সিয়াম ভাঙ্গবে না। কোন ক্ষতিও হবে না।
প্রশ্ন - কোন রোযাদার ব্যক্তি তার সিয়াম ভঙ্গ করার
নিয়ত করল কিন্তু সে তখনো কোন খানাপিনা খায়নি- তার সিয়াম কি ঠিক আছে, নাকি ভেঙ্গে গেছে ?
তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে গেছে। কারণ সিয়ামের জন্য নিয়ত ফরয। আর এ ফরয তার তরক হয়ে গেছে। কাজেই রোযা তার ভেঙ্গে গেছে খাবার বা পানীয় গ্রহণ ছাড়াই।
সিয়াম অবস্থায় যে সকল কাজ বৈধ
প্রশ্ন
- কী কী কাজ
করলে সিয়াম ভঙ্গ হয় না ?
অথবা, সিয়াম অবস্থায় কী কী কাজ বৈধ ?
সিয়াম অবস্থায় নিম্নোক্ত
কাজ করলে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না :
[১] শুধুমাত্র রোগ আরোগ্যের
জন্য যে ইনজেকশান দেয়া হয়।
[২] কুলি করা, নাকে
পানি দেয়া। তবে গড়গড়া করবে না। নাকের খুব ভিতরে পানি টান দিয়ে নেবে না।
[৩] মিসওয়াক করা, মাজন
ও টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারবে। তবে গলার ভিতর যাতে না ঢুকে সে জন্য সতর্ক থাকতে
হবে।
[৪] গরম থেকে বাঁচার জন্য
মাথায় শীতল পানি দেয়া, গোসল করা, ভিজা
কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাখা।
[৫] জিহবা দিয়ে খাদ্য বা
তরী-তরকারীর স্বাদ দেখা।
[৬] সুরমা ব্যবহার, চোখে
বা কানে ঔষধ ব্যবহার।
[৭] স্ত্রীকে স্পর্শ করা।
[৮] রাত্রিবেলায় স্ত্রী সহবাস
করা।
[৯] কোন কিছুর ঘ্রাণ নেয়া।
তবে ধুমপান, আগরবাতি ও চন্দন কাঠের
ধোঁয়া বা ধুপ গ্রহণ করবে না।
[১০] সিংগা লাগানো।
উপরোক্ত কয়েকটি বিষয়ে দলীল
নিম্নে দেয়া হল :
بَالِغْ فِي الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا
(ক)
সিয়াম অবস্থায় না থাকলে অযুর সময় নাকের ভিতর উত্তমরূপে পানি টেনে নেবে। (তিরমিযী :
৭৮৮)
لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ
عِنْدَ كُلِّ وُضُوءٍ
(খ) আমার উম্মতের কষ্টবোধ হবে এ আশঙ্কা না থাকলে প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
(বুখারী : ৭২৪০)
كان رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يَصُبُّ الْمَاءَ عَلَى
رَأْسِهِ وَهُوَ صَائِمٌ مِنْ الْعَطَشِ أَوْ مِنْ الْحَرِّ
(গ) সিয়াম অবস্থায় তাপ বা পিপাসার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথায় পানি ঢালতেন।
(আবূ দাঊদ : ২৩৬৫)
لاَ بَأْسَ أَن يَّذُوْقَ الْخَلَّ أَوِ الشَّيْءَ مَالَمْ
يَدْخُلْ حَلْقِهِ وَهُوَ صَائِمٌ
(ঘ) গলার ভিতর প্রবেশ না করলে সিয়াম অবস্থায় তরকারী বা খাদ্যের স্বাদ দেখতে কোন অসুবিধা নেই।
( ইবনে আবী শাইবা- ৩/৪৭ )
لَمْ يَرَ أَنَسٌ وَالْحَسَنُ وَإِبْرَاهِيْمُ بِالْكُحْلِ
لِلصَّائِمِ بَأْسًا
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, হাসান ও ইবরাহীম (রহ.) সিয়াম পালনকারীদের জন্য সুরমা ব্যবহার কোনরূপ অসুবিধা মনে করতেন না।
(বুখারী : ১৯২৯)
كَانَ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ
وَهُوَ صَائِمٌ وَلكِنْ كَانَ أَمْلَكَكُمْ لِإِرْبِهِ
(ঙ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় (স্ত্রী) চুম্বন করতেন, শরীরে শরীর স্পর্শ করতেন। কেননা, তিনি তার প্রবৃত্তির (যৌন চাহিদা) উপর তোমাদের চেয়ে অধিক নিয়ন্ত্রক ছিলেন।
(বুখারী : ১৯২৭)
أَنَّ النَّبِيَّ -صلى الله عليه وسلم- احْتَجَمَ وَهُوَ صَائِمٌ
(চ)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় নিজের শরীরে শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
(বুখারী : ১৯৩৮)
أَنَّ النَّبِيَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يُدْرِكُهُ الْفَجْرُ
وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ أَهْلِهِ ثُمَّ يَغْتَسِلُ وَيَصُومُ
(ছ)
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সহবাস করে ফজর পর্যন্ত কাটিয়েছেন।
অতঃপর গোসল করে ফজরের সালাত আদায় করছেন।
(বুখারী : ১৯২৬; মুসলিম
: ১১০৯)
কিডনী পরিষ্কার করলে, চোখে
বা কানে ড্রপ দিলে, দাঁত উঠলে, ক্ষতস্থানে
ব্যান্ডেজ লাগালে, রক্ত পরীক্ষা করার জন্য
রক্ত নিলে রোযা কি ভেঙ্গে যাবে বা ক্ষতি হবে?
না, এতে
রোযা ভাঙ্গবেও না ক্ষতিও হবে না।
যদি সুবহে সাদেক হয়ে যায়
বা ফজরের আযান শুরু হয়ে যায় আর মুখে খাবার বা পানীয় থাকে তাহলে কি করবে?
মুখে যেটুকু খাবার বা পানি
আছে তা ফেলে দেবে। ফলে তার রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে। এটা ফকীহদের ঐক্যমতের রায়।
রোযাদার যদি আহত হয় বা নাক
দিয়ে রক্ত ঝরে কিংবা কোন কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় পানি বা তেল ঢুকে যায় তাহলে
রোযার কি হবে?
এতে রোযা নষ্ট হবে না।
চোখের অশ্রু যদি গলায়
প্রবেশ করে তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
না, এতে
রোযা ভাঙ্গবে না।
রোযাদার ব্যক্তি যদি আতরের
গন্ধ, চন্দন কাঠ বা আগরবাতির ঘ্রাণ শুঁকে তাহলে কি হবে?
এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে
না। তবে ধোঁয়া যাতে গলায় প্রবেশ না করে সে ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
আরো যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ
হয়না তা হল :
১। ভুলক্রমে কোন কিছু
পানাহার করলে
২। ভুলক্রমে যৌনসম্ভোগ
করলে
৩। স্বপ্নদোষ হলে
৪। স্ত্রীর দিকে
দৃষ্টিপাতের দরুন বীর্যপাত হলে
৫। তেল মালিশ করলে
৬। শিঙ্গা লাগালে
৭। সুরমা লাগালে
৮। স্ত্রীকে চুম্বন করলে
৯। আপনা আপনি বমি হলে
১০। মূত্রণালীতে ঔষধ দিলে
১১। কানে পানি গেলে
১২। ধূলা প্রবেশ করলে।
সিয়ামের কাযা ও কাফফারা
প্রশ্ন- সিয়ামের কাযা ও কাফফারা কী
জিনিস? এগুলো কীভাবে আদায় করতে হয়?
অনিচ্ছাকৃত বা উযরবশত ছুটে
যাওয়া সাওমের বদলে কাযা, আর উযরছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে
ছেড়ে দেয়া সাওমের বদলে দিতে হয় কাফফারা। কাযা হলে সম পরিমাণ সাওম আদায় করতে হয়। আর কাফ্ফারা হলে, সাওম
না রাখার কারণে সুনির্দিষ্ট কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়।
কাফফারা তিন ধরনের।
(১) গোলাম আযাদ করা, আর
তা সম্ভব না হলে
(২) একাধারে ৬০টি রোযা রাখা, আর
সেটিও সম্ভব না হলে
(৩) ৬০ জন মিসকীনকে এক বেলা
খানা খাওয়ানো।
প্রশ্ন- যে ব্যক্তি বিনা উযরে বিনা করণে অতীতে সিয়াম
ভঙ্গ করেছে সে কীভাবে কাযা ও কাফফারা আদায় করবে?
এক রমযানের সাওম তাকে
পরবর্তী রমযানের আগে আদায় করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে সারা জীবনে যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব তা কাযা করে নিতে হবে। এবং প্রতি রোযার বদলে একটি রোযা পালন করতে
হবে। আর তা রাখতে শারীরিকভাবে অক্ষম হলে একজন মিসকীনকে এক বেলা খানা খাওয়াতে হবে।
দিনের বেলায় সহবাসের কারণে
সিয়াম ভঙ্গ হলে তার কি করতে হবে।
এজন্য তাকে কাযাও করতে হবে
এবং কাফফারাও দিতে হবে। এ দু’টিই তার জন্য ফরয?
সহবাসের কারণে যে রোযা
ভঙ্গ হয় ঐ একটা রোযার বদলে একাধারে ষাট দিন রোযা রাখতে হবে। এবং এর মাঝখানে সঙ্গত
কারণ ছাড়া কোন বিরতি দেয়া যাবে না।
যদি মাঝখানে বিরতি দেয়া হয়
তাহলে এরপর থেকে আবার নতূন করে ষাট দিন বিরতীহীনভাবে সিয়াম পালন করতে হবে।
প্রশ্ন- একটি রোযা ভাঙ্গার কারণে ষাটটি রোযা রাখা, তাও আবার বিরতীহীনভাবে এভাবে আদায় করতে যদি কেউ অক্ষম বা
অপারগ হয় তাহলে কি করবে?
৬০ জন অভাবী মানুষকে
একবেলা খানা খাওয়াবে। প্রতিজনের খাবারের পরিমাণ হবে কমপেক্ষ ৫১০ গ্রাম।
কাউকে চুমু দেয়ার কারণে বা
স্ত্রী বা কোন মেয়ের গা স্পর্শ হওয়ার কারণে অনচ্ছিকৃতভাবে বীর্যপাত হয়ে গেলে ঐ
দিনের সিয়াম কীভাবে কাযা করবে?
সাধারণ নিয়মেই এক সাওমের বিপরীতে
এক সাওম হিসেবে কাযা করবে
প্রশ্ন- কোন কারণে রোযা ভঙ্গ হলে কাযা ও কাফ্ফারা
উভয়ই ওয়াজিব হয় ?
রোযাবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে
সহবাস করলে কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ১টি রোযা কাযা করবে, অতঃপর
৬০টি রোযা কাফফারা হিসেবে আদায় করবে। অর্থাৎ ১ রোযার বদলে বিরতিহীনভাবে মোট ৬১টি
রোযা পালন করবে।
প্রশ্ন- ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কী করবে, কাযা না কাফফারা?
অধিকাংশ আলেমদের মতে শুধু
কাযা করবে। অর্থাৎ এক রোযার বদলে একটি রোযা পালন করবে। তবে কোন কোন আলেমের মতে
কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়ে যাবে। অর্থাৎ ১ রোযার বদলে বিরতিহীনভাবে মোট ৬১টি
রোযা পালন করবে।
প্রশ্ন- কোন কোন কারণে রোযা ভঙ্গ হলে শুধু কাযা
ওয়াজিব হয় ?
১।
স্ত্রীকে চুম্বন/স্পর্শ করার কারণে বীর্যপাত ঘটলে।
২।
ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে
৩।
পাথর, লোহার, টুকরা, ফলের
আঁটি ইত্যাদি গিলে ফেললে
৪।
ভুলক্রমে কিছু খেতে আরম্ভ করে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে পুনরায় আহার করলে।
৫।
কুলি করার করার সময় পেটে পানি চলে গেলে
৬।
মুখে বমি এলে পুনরায় তা পেটে প্রবেশ করালে
৭।
দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্য কণা খেয়ে ফেললে
৮।
রোযার নিয়ত না করে ভুল করে রোযা ভঙ্গ হয়ে গেছে মনে করে পানাহার করলে।
প্রশ্ন- রমযানের রোযা কাযা করার হুকুম কি? কেউ যদি একাধিক রোযা ভঙ্গ করে তবে সে কি এগুলো একাধারে কাযা
করবে?
ধারাবাহিকভাবে কাযা করা
মুস্তাহাব। তবে পৃথক পৃথকভাবে কাযা করা জায়েয আছে। কাযাকারী পরবর্তী রমজান আসার
পূর্বে করা উত্তম। তবে যে কোন সময়ে তা করতে পারবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ
‘‘অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে।
(বাকারা : ১৮৪)
প্রশ্ন- এক রমযানের কাযা আদায়ের
পূর্বে অন্য রমযান আগমন করলে কী করবে?
এমতাবস্থায় চলতি রমযানের
রোযা আদায় করার পর পূর্বের রোযাগুলোর কাযা পালন করবে।
অসুস্থ ব্যক্তির সিয়াম
vঅসুস্থ ব্যক্তির সিয়াম
প্রশ্ন- কী পরিমাণ অসুস্থ হলে
সিয়াম ভঙ্গ করতে হবে ?
রোগের কারণে যদি স্বাভাবিক
সুস্থতা হারিয়ে ফেলে, ডাক্তার যদি বলে যে, এ
সিয়ামের কারণে রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে,
বা রোগীর ক্ষতি হতে পারে
বা সুস্থতা বিলম্বিত হতে পারে তবেই রোযা ভাঙ্গবে। কিন্তু সামান্য অসুখ যেমন মাথা
ব্যাথা, শর্দি, কাশি অনুরূপ কোন সাধারণ
রোগ বালাইয়ের কারণে সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েয হবে না। মনে রাখতে হবে যে, রোগের
কারণে যেসব সিয়াম ভঙ্গ হবে ঠিক অনুরূপ সংখ্যক সিয়াম পরে কাযা করতে হবে।
প্রশ্ন- অসুস্থ হলেও সিয়াম পালনে খুব কষ্ট হচ্ছে না
এবং কোনরূপ ক্ষতির আশঙ্কাও নেই এমতাবস্থায় কি করব?
সিয়াম পালন করবে। এমন হলে
ভঙ্গ করা জায়েয হবে না।
প্রশ্ন- সিয়াম পালনে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু রোগীর কোন
ক্ষতির আশঙ্কা নেই- কি করবে?
এ রোগী সিয়াম ভেঙ্গে
ফেলবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি অতিশয় দয়ালু। অবশ্য পরে এটা কাযা
করে নেবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ
عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ
وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ
‘‘কাজেই
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ (রমযান) মাস পাবে,
সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন
করে আর যে পীড়িত কিংবা সফরে আছে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ
করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা
কষ্টদায়ক তা চান না যেন তোমরা মেয়াদ পূর্ণ করতে পার।
(বাকারা : ১৮৫)
প্রশ্ন- সিয়াম পালনে রোগীর কষ্ট
হচ্ছে, তবু সে সিয়াম ভঙ্গ করতে
রাজী নয়- এর হুকুম কি?
এ রোগীর রোযা পালন সঠিক নয়, বরং
মাকরূহ। কারণ সে আল্লাহর দেয়া সুবিধা গ্রহণ না করে বরং নিজেকে শাস্তি দিচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصَهُ كَمَا يَكْرِهُ أَنْ
تُؤْتَى مَعَاصِيْهِ
আল্লাহর অবাধ্য হওয়াকে মাবুদ যেমন অপছন্দ করেন, তার দেয়া সুবিধাদি গ্রহণ করাকেও তিনি তেমন পছন্দ করেন।
(আহমাদ : ২/১০৮)
প্রশ্ন- সিয়াম পালনে রোগ বৃদ্ধি পাবে
এবং ক্ষতিও হবে। তবু পরহেজগারী মনে করে সিয়াম পালন করে যাওয়া কেমন ?
অবস্থা এমন হলে সিয়াম
চালিয়ে যাওয়া কোন পরহেজগারী কাজ নয়। বরং এ অবস্থায় সিয়াম পালন করা নিষেধ এবং সওম
ভঙ্গ করা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ
رَحِيمٗا
তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু।
(সূরা নিসা :
২৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا
‘‘তোমার উপর তোমার আত্মার হক রয়েছে।’’
(আবূ দাঊদ : ১৩৬৯ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
নিজের বা অন্যের কারোরই
ক্ষতি করার কোন অধিকার মানুষের নেই।
প্রশ্ন- কোন সুস্থ ব্যক্তি দিনের কোন অংশে অসুস্থ হয়ে
পড়ল, বাকী অংশ সিয়াম পালনে কষ্ট
হচ্ছে- কী করবে?
সিয়াম ভঙ্গ করে ফেলবে এবং
পরে কাযা করে নেবে।
প্রশ্ন- কোন রোগী দিনের মধ্যভাগে সুস্থ হয়ে গেল, সেকি দিনের বাকী অংশ সিয়াম পালন করবে ?
না, কারণ
দিনের শুরুতে যেহেতু সিয়াম ছিল না কাজেই দিনের বাকী অংশে খানা-পিনা ত্যাগের দরকার
নেই।
প্রশ্ন- ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে এবং জীবন
নাশের আশঙ্কা করে তবে কী করবে ?
রোযা ভঙ্গ করবে এবং পরে
এটা কাযা করবে।
প্রশ্ন- রোযা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে গেলে কী করবে?
রোযা ভেঙ্গে ফেলবে এবং পরে
তা কাযা করবে।
প্রশ্ন- কোন রোগী সুস্থ হওয়ার পর কাযা আদায় করার আগেই
মৃত্যুবরণ করল তার জন্য কী করতে হবে ?
তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে
প্রতি একদিনের রোযার বদলে একজন মিসকিনকে একবেলা খানা খাওয়াবে। অথবা তার কোন আত্মীয়
যদি তারপক্ষ থেকে কাযা আদায় করে তবে মাইয়্যেতের জন্য তা আদায় হয়ে যাবে।
প্রশ্ন- কোন অসুস্থ ব্যক্তির কাযা
রোযা সুস্থ হওয়ার পর কাযা না করে শুধু ফিদইয়া দিলে কি চলবে ?
না, তা
জায়েয হবে না। কাযা করতে হবে।
প্রশ্ন- কঠিন শারীরিক পরিশ্রম যারা করে তারা কি
রমযানের ফরয রোযা ভাঙ্গতে পারবে?
না, পারবে না।
v অতি বিদ্ধ,অচল ও চিররোগীদের সিয়াম
প্রশ্ন- খুবই বৃদ্ধ লোক। সিয়াম
পালন তার জন্য খুবই কষ্টকর। তার সিয়াম পালনের কি হুকুম?
তার উপর সিয়াম পালন জরুরী
নয়। তবে এ ব্যক্তি অন্য কাউকে দিয়ে কাযা আদায় করাবে অথবা ফিদইয়া দিবে। প্রতি এক
রোযার জন্য একজন মিসকিনকে এক বেলা খাবার খাওয়াবে। (পরিমাণ ৫১০ গ্রাম পরিমাণ ভাল
খাবার)
وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖ
অর্থাৎ ‘‘শক্তিহীনদের উপর কর্তব্য হচ্ছে ফিদ্য়া প্রদান করা, এটা একজন মিসকীনকে অন্নদান করা।’’
(আল-বাকারা : ১৮৪)
প্রশ্ন- এমন চিররোগী যার আরোগ্য
লাভের সম্ভাবনা নেই। যেমন- ক্যান্সার বা এ ধরণের কোন রোগ। এসব লোকের সিয়াম পালনের
হুকুম কি?
এ ধরণের চির রোগীদের উপর
সিয়াম ফরয নয়। তবে তাদেরকে পূর্বের নিয়মে ফিদইয়া দিতে হবে। আর রোযার ফিদইয়া হলো
মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا
ٱسۡتَطَعۡتُمۡ
[১] তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করে চলো।
(তাগাবুন : ১৬)
لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ
نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ
[২] সাধ্যের বাইরে কোনকিছু আল্লাহ কারোর উপর চাপিয়ে দেন না।
(বাকারাহ
: ২৮৬)
প্রশ্ন- এমন বৃদ্ধলোক যে ভাল মন্দ
পার্থক্য করতে পারে না। বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। তার সিয়ামের হুকুম কি?
এমন বৃদ্ধলোকের উপর সিয়াম
ফরয নয়। তাদের কাযা ও কাফফারা কিছুই নেই।
প্রশ্ন- পূর্বোক্ত বৃদ্ধলোকের যদি কখনো কখনো হুশ ফিরে
আসে, জ্ঞান ফিরে পায় তাহলে কি
করবে?
তাহলে হুশ অবস্থায় সিয়াম
পালন করবে, সালাতও আদায় করবে,
সিয়াম সালাত তখন ফরয হয়ে
যাবে।
প্রশ্ন- পরীক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীরা অধ্যয়নের চাপের
কারণে রোযা কি ভাঙ্গতে পারবে?
না, তাও
পারবে না। অধ্যয়ন রোযা ভঙ্গের উযর হিসেবে গণ্য হবে না।
v গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের সিয়াম
প্রশ্ন- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী
নারীরা কি সিয়াম পালন করবে নাকি ভঙ্গ করবে?
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারীণী
সিয়াম পালন করলে নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকুক বা না থাকুক উভয় অবস্থায়
তাদের সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েজ আছে এবং পরে তা কাযা করে নেবে। পরে করলে তারা সিয়াম
পালনও করতে পারে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إِنَّ اللهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنْ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ
الصَّلاَةِ وَعَنْ الْحَامِلِ أَوْ الْمُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوْ الصِّيَامَ
‘‘আল্লাহ রববুল ‘আলামীন মুসাফিরদের সালাত অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের সিয়াম না রেখে পরে আদায় করার অবকাশ দিয়েছেন।
(তিরমিযী : ৭১৫)
তাদের বিষয়টি সাধারণ রোগী
ও মুসাফিরের সিয়ামের মাসআলার অনুরূপ।
তাছাড়া মহিলা শারীরিকভবে
যদি শক্তিশালী হয় এবং সন্তানের কোন ক্ষতির আশঙ্কা না করে তাহলে সিয়াম পালন করতে
পারে। আর যদি সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে সিয়াম ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব।
প্রশ্ন-গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিনী
মহিলার ভাঙ্গা রোযার বদলে কি শুধু কাযা করবে নাকি ফিদইয়া দিবে ?
শুধু কাযা করবে।
প্রশ্ন- ফিদইয়ার পরিমাণ কত?
এক মুদ (৫১০ গ্রাম) পরিমাণ
গম।
تُفْطِرُ وَتُطْعِمُ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِيْنًا مُدًّا مِنْ
حِنْطَةٍ
অর্থাৎ প্রতি একদিনের রোযার বদলে একজন মিসকীনকে এক মুদ (৫১০ গ্রাম) পরিমাণ গম (ভাল খাবার) প্রদান করবে।
(বাইহাকী : ৪/৩৮৯ )
তবে এ বিষয়ে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে সরাসরি কোন হাদীস না থাকায় এতে অনেক
মতবিরোধ রয়েছে।
প্রশ্ন- গর্ভবতী নারীর পক্ষ থেকে কে ফিদইয়া দেবে?
সন্তানের পিতা বা তার
ভরণ-পোষণের যিম্মাদার ব্যক্তি।
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী
নারীরা কাযা রোযা কখন করবে?
যখন তার জন্য সহজ হবে এবং সন্তানের ক্ষতির কোন আশঙ্কা যখন থাকবে না তখন কাযা করবে।
প্রশ্ন- ঋতুবতী মহিলা বলতে কী
বুঝায়?
বালেগ হওয়ার পর মহিলাদের
প্রতিমাসে ৬/৭ দিন বা কমবেশি মেয়াদে শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়। এটাকে বলা হয় মাসিক
ঋতুস্রাব বা হায়েয। আর সন্তান প্রসবের পর রক্ত রক্তক্ষরণ হয় প্রায় ৪০ দিন ব্যাপী।
এটাকে বলা হয় নিফাস। এ দু’ অবস্থায়ই মহিলাদেরকে ঋতুবর্তী বলা হয়। তখন তারা নাপাক
বা অপবিত্র থাকে।
প্রশ্ন- এ দু’ অবস্থায় মেয়েদের কী কী কাজ ও ইবাদত নিষিদ্ধ?
সালাত, সাওম
ও স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলন, কুরআন স্পর্শ করা, মাসজিদে
যাওয়া ও কাবা তাওয়াফ করা।
প্রশ্ন- হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর সালাত, রোযা কীভাবে কাযা করবে ?
সালাত কাযা করতে হবে না।
তবে এ কারণে যতটা রোযা ভাঙ্গা গেছে ঠিক ততটা রোযাই আবার কাযা করতে হবে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা
বলেছেন :
فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ
الصَّلاَةِ
‘‘সিয়াম কাযা করতে আমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু সালাত কাযা করতে আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় নি।’’
(মুসিলম : ৩৩৫)
প্রশ্ন-যদি কোন সিয়াম পালনকারী নারীর
সূর্যাস্তের সামান্য কিছু পূর্বে মাসিক স্রাব শুরু হয়ে যায় তাহলে কি করবে?
উক্ত সিয়াম বাতিল হয়ে যাবে
এবং পরে এটা কাযা করতে হবে।
প্রশ্ন- যদি কোন মেয়ে রমযান মাসের দিনের বেলায় কোন অংশে হায়েয বা
নিফাস থেকে পবিত্র হয় তাহলে দিবসের বাকী অংশে কি রোযা রাখবে?
না, রাখবে
না। কারণ সিয়ামের শুরু দিনের প্রথম থেকে হতে হবে। কাজেই এ সিয়াম পরে কাযা করবে।
তবে দিনের বাকী অংশে খাওয়া দাওয়া থেকে বিরত থাকবে।
প্রশ্ন- যদি ফজরের সামান্য আগে হায়েয বা নিফাস থেকে
পবিত্র হয় তাহলে কি করবে ?
তাহলে ঐ দিনে সিয়াম পালন
করা তার উপর ফরয। এমনকি গোসল করার সময় না থাকলেও।
প্রশ্ন- ফজরের পূর্বক্ষণে হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র
হল। কিন্তু গোসল করার সময় পেল না। এ অবস্থায় কি রোযা রাখার নিয়ত করবে ?
হা, এ
অবস্থায় রোযার নিয়ত করতেই হবে। ঐ দিন সিয়াম পালন করা তার ফরয। ফরয গোসল ছাড়াই রোযা
শুরু করতে পারবে। কিন্তু ফজরের সালাত পড়তে হবে গোসলের কাজ সেরে।
প্রশ্ন- অভ্যাসের কারণে যে মহিলা জানে যে, আগামী কাল থেকে তার মাসিক শুরু হবে সে রোযার নিয়ত করবে কি
করবে না?
অবশ্যই রোযার নিয়ত করবে। যতক্ষণ
পর্যন্ত রক্ত দেখতে না পাবে ততক্ষণ রোযা ভঙ্গ করবে না।
প্রশ্ন- সন্তান প্রসবের কারণে নিফাসওয়ালী মহিলা যদি ৪০ দিনের
পূর্বেই পাক হয়ে যায় তাহলে কী করবে?
গোসল করে পাক হয়ে রোযা
রাখা ও নামায পড়া শুরু করে দিবে।
প্রশ্ন- নিফাসওয়ালী নারীর যদি ৪০ দিন পার হওয়ার পরও
রক্ত বন্ধ না হয় তাহলে কি করবে?
চল্লিশতম দিন পার হলে গোসল
করে রোযা রাখা শুরু করবে। অতিরিক্ত মেয়াদের এ অবস্থাকে ধরে নেবে ইস্তেহাদা বা
রক্তপ্রদর রোগ। আর রক্তপ্রদর হলে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়।
প্রশ্ন- যদি কোন নারী মনে করে যে, টেবলেট খেয়ে হায়েয বা মাসিক বন্ধ করে ফরয রোযা চালিয়ে যাবে।
এ কাজটির হুকুম কী?
এটাকে জায়েয তবে, কৃত্রিম উপায়ে স্বাভাবিক
ঋতুস্রাবকে দেরী করানো উচিৎ নয়। এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন- হায়েয ও নিফাসওয়ালী মহিলা কীভাবে বুঝবে যে সে
ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হয়ে গেছে?
যখন দেখবে যে তার ঋতুস্রাব
সাদা রঙে পরিণত হয়ে গেছে, তখন বুঝবে সে পাক হয়ে
গেছে। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন :
لاَ تَعْجَلْنَ حَتَّى تَرَيِنَّ الْقِصَّةَ الْبَيْضَاءَ
‘‘তোমরা তাড়াহুড়া করে হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে মনে করো না। যতক্ষণ না শুভ্র পানি দেখতে পাও।’’
(বুখারী : ৩১৯)
প্রশ্ন- যে মহিলা বালেগ হওয়ার পর কোন রোযা রাখে নি। সে এখন লজ্জিত, অনুতপ্ত ও তাওবাহ করতে চায়। সে কি করবে?
এখন থেকে ভবিষ্যতে আর
সিয়াম ভঙ্গ না করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করবে। পূর্বের গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে
মাফ চাইবে, তাওবাহ করবে। ছেড়ে দেয়া প্রত্যেক রোযার জন্য একটি করে রোযা
কাযা করতে হবে।
প্রশ্ন- যে মহিলা মাসিকের সময় না রাখা রোযাগুলো কাযা
করেনি সে কি করবে?
উপরে বর্ণিত (পূর্বের
প্রশ্নে) একই কায়দায় সমপরিমাণ রোযা কাযা করবে।
প্রশ্ন- স্বামী উপস্থিত। স্ত্রী নফল বা সুন্নাত রোযা
রাখতে চায়, কি করবে?
স্বামীর অনুমতি নিতে হবে।
নতুবা জায়েয নয়।
প্রশ্ন- স্ত্রী ফরয রোযা রাখছে। এমতাবস্থায় স্বামীকে
সহবাসের অনুমতি দিল। এর হুকুম কী?
স্বামীর মতই স্ত্রীকেও এ
অপরাধে কাযা ও কাফফারা দিতে হবে। অর্থাৎ দু’জনের প্রত্যেককেই একাধারে ৬০ দিন রোযা
রাখতে হবে। মাঝখানে কোন বিরতি দেয়া যাবে না। বিরতি দিলে শুরু থেকে আবার নতুন করে
১+৬০= ৬১ রোযা রাখবে। এভাবে চালিয়ে যাবে। এতে অপারগ হলে প্রতি একটা রোযার জন্য ৬০
জন মিসকীনকে এক বেলা খানা খাওয়াতে হবে।
প্রশ্ন- স্রাবের কারণে কাযা সিয়াম কোন উযর বা
যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পরবর্তী রমযান চলে আসার আগে কাযা করতে পারল না। এ অবস্থায়
কি করবে?
এরূপ বিলম্বিত হওয়া
গোনাহের কাজ। এজন্য তাওবাহ করতে হবে এবং পূর্বে বর্ণিত নিয়মে কাযা করবে অর্থাৎ যে
কটা রোযা ভাঙ্গা হয়েছে শুধু সে ক’টিই কাযা করতে হবে। চলতি রমযানের ফরয রোযা শেষ
করার পর।
প্রশ্ন- কাযা ও কাফফারা উভয় ওয়াজিব। সেক্ষেত্রে কাযা
কোনটি ও কাফফারা কোনটি?
কাযা হল সিয়ামের বদলে
সিয়াম পালন করা। আর কাফফারা হলো মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো।
সংকলিত
No comments
Post a Comment