Thirty First Night : অপসংস্কৃতির আগ্রাসণ ও আমাদের করণীয়
থার্টি ফার্স্ট নাইট :
অপসংস্কৃতির আগ্রাসণ ও
আমাদের করণীয়
এইচ.এম.হুজ্জাতুল্লাহ
ভুমিকা:
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান।মানব জাতীর সকল প্রয়োজনের ব্যাপারে ইসলাম সঠিক ও বৈধ পথ-পদ্ধতি বর্ণনা দিয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা,
اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ
عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا ؕ
আজ আমি
তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত
সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
সূরা আল মায়িদা-৩.
মূলত মানবজীবনের এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান ইসলাম দেয়নি। ইসলাম মানবজীবনের সকল কিছুকেই সংবিধিবদ্ধ করে দিয়েছে। তাই মানুষের পক্ষে স্বেচ্ছাচারী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ, আল্লাহতা’য়ালা মানুষকে শুধুমাত্র তার আনুগত্য করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।
তিনি বলেন,
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا
لِیَعۡبُدُوۡنِ
আমি জিন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।
সূরা জারিয়াত-৫৬.
তাই মানুষের পক্ষে আল্লাহর নির্ধারিত সীমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আল্লাহ যেমন কারো মুখাপেক্ষী নন ঠিক তেমনিভাবে তিনি তার দ্বীনকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই ইসলামী তাহজীব-তমদ্দুন, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বোধ-বিশ্বাস, আদর্শ-মূল্যবোধে নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে, যা অপরাপর ধর্ম ও জাতির কৃষ্টি-সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
দিন যায়, রাত আসে। সপ্তাহ যায়, মাস আসে। মাস যায়, নতুন বছর শুরু হয়। এভাবে ঘোরাফেরার দিনাতিপাতে আমাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। এই যে, দিনরাতের পর সপ্তাহ, সপ্তাহের পর মাস, মাসের পর বছর, এগুলো কার ঈশারায় হয়? নিশ্চয়ই এর একজন কারিগর আছেন!
কে তিনি? তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, লালনকর্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
یُوۡلِجُ الَّیۡلَ فِی النَّهَارِ وَ یُوۡلِجُ
النَّهَارَ فِی الَّیۡلِ ؕ وَ هُوَ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ
তিনিই রাতকে প্রবেশ করান দিনে আর দিনকে প্ৰবেশ করান রাতে এবং তিনি অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত।
সুরা আল-হাদিদ, আয়াত নং-০৬.
পরিচয়:
থার্টি ফার্স্ট নাইট হল খ্রিষ্টীয় বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত অর্থাত পহেলা জানুয়ারী প্রথম প্রহর।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ইংরেজী শব্দ এর থার্টি অর্থ ত্রিশ ফার্স্ট অর্থ প্রথম আর নাইট অর্থ রাত ।
নামকরণ: এটা বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন – থার্টি ওয়ান ফার্স্ট নাইট, থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর বা মাদকের হাতে খড়ি ।
ইতিহাস:
মূলত নাবী ইসা আ.-এর জন্মের ৪৬ বছর আগে রোমানরা Janus নামে এক ঈশ্বরের পূজা শুরু করে। যাকে তারা God of beginnings বা শুরুর স্রষ্টারূপে বিশ্বাস করতো। তারা বহু স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিল। তার মধ্যে Janus ছিল অন্যতম। তাদের বিশ্বাস ছিল Janus অতীত-ভবিষ্যতের সবকিছুই জানেন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখেন। এই Janus-এর নাম অনুসারে বছরের প্রথম মাসের নাম দেয়া হয় January. এই মাসে ঘটা করে তাদের এই ঈশ্বরকে খুশি করে যেন Janus তাদেরকে পুরো বছর মঙ্গলের মধ্যে রাখেন। মূলত এই Janus পূজা থেকে ইংরেজি বর্ষবরণের সূচনা।
সে ধারাবাহিকতায় একই সময়ে তথা খ্রিষ্টপূর্ব ’৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন।
সাধারনত ঈসায়ী সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের শেষ দিনের অর্ধরাত্র অতিবাহিত হওয়ার পর রাত ১২.০১ মিনিট থেকেই থার্টি ফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান আরম্ভ হয় ।
থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের বিধান:
থার্টি ফাস্ট নাইট কোনো ইসলামিক সংস্কৃতি নয়। মুসলিম সভ্যাতা ও সংস্কৃতিতে এটি একটি অপসংস্কৃতি। সে কারণে একজন রুচিশীল ও সচেতন ঈমানদার মুসলমান কখনো থার্টি ফাস্ট নাইট সংস্কৃতি উদযাপন করতে পারে না।
থার্টি ফাস্ট নাইট খ্রিস্টিয় সংস্কৃতি হওয়ার কারণেই ইসলামিক স্কলাররা এটিকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য ধর্মের সংস্কৃতি-উৎসব মুসলমানদের জন্য উদযাপন করা বৈধ নয়। বিজাতীয় সংস্কৃতি উদযাপনে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাও এমনই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا
فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ৮৫.
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا
تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَّبِعۡ خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ
فَاِنَّهٗ یَاۡمُرُ بِالۡفَحۡشَآءِ
وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ
হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। আর কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই নির্দেশ দেয়।
সুরা আন-নুর, আয়াত নং- ২১.
হাদিসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم " مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবন উমার রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন কাওমের (সম্পদ্রয়ের) অনুসরণ-অনুকরন করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে।
আবু দাউদ.
বিজাতীয় সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণই নয় বরং মুসলিমদের কোনো কাজে মুশরিকদের সাহায্যও নাবী সা. গ্রহণ করতেন না ।
আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, এক মুশরিক রাসুলুল্লাহ সা.এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি ( তাকে ) বললেন, তুমি ফিরে যাও। আমরা মুশরিকদের সাহায্য চাই না।
আবু দাউদ.
কারণ প্রত্যেক জাতির জন্যই রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধান ও করণীয়। সে আলোকে মুসলিমদের জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنۡدَ اللّٰهِ
الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فَهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ
বিচরণকারী প্রাণীদের মধ্যে তারাই তো অল্লাহ্র কাছে নিকৃষ্ট, যারা কুফরী করেছে। সুতরাং তারা ঈমান আনবে না।
সুরা আল-আনফাল, আয়াত নং- ৫৫.
ইমাম আবু হাফস কবীর রহ. বলেন, নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে, তাহলে ঐ মুসলমানের ৫০ বছরের আমল বরবাদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ নওরোজ বা নববর্ষ পালনের কারণে তার জিন্দেগির সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাতে পারে।
বর্ষবরণে যা হয়:
থার্টি ফার্ট নাইট পালনের নামে গোটা দেশ অশ্লীলতার চাদরে ঢেকে যায় । মফস্বলের শহরের তুলনায় বড় শহরগুলোতে অশ্লীলতার মহড়া বেশি চলে । বিভাগীয় শহরগুলোর অভিজাত ক্লাবগুলোসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল এবং কিছু বাসায় রাতভর বসে অসামাজিক কর্মকান্ডের পসরা । কি থাকে না তাতে ? তরুন-তরুনীদের ধ্বংস করা জন্য যা চাই তার সবটার রসদ এ সকল অনুষ্ঠানে মওজুদ থাকে ।
আমাদের দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করার নামে আয়োজন করা হয় গান-বাজনা, নাচ-গান, ডিস্কো বা ডিজে (উলঙ্গ নৃত্য), পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া মটসাইকেল চালনা, আনন্দ শোভা যাত্রা, তরুন-তরুনীদের রাত ভর উল্লাস।, মদ-বিয়ারসহ নানা মাদকদ্রব্য সেবনে প্রলুব্ধ করতে ওপেন এয়ার কনসার্ট, লাইভ ড্যান্স, বিদেশী সংগীতানুষ্ঠান এবং এমন সব অপসংস্কৃতির আয়োজন যা তরুন-তরুনীদেরকে বিভিন্ন অপকর্ম করতে প্রলুব্ধ করে।
থার্টি ফার্স্ট নাইট’ অনুষ্ঠানের উৎসব উদযাপন করতে গিয়ে সাময়িক মোহে, মূহুর্তের ভালো-লাগায় হাজার পিতৃহীন সন্তান জন্মের উপলক্ষ তৈরি হয় । এ রাতে অবাধ মেলামেশার কারণে বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয় । প্রায় প্রতি বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকে কেন্দ্র করে ধর্ষনের মত মারত্মক ঘটনা ঘটে ।
বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ হয় থার্টি ফার্স্ট নাইটের অপকীর্তির কথা । ১৯৯৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর রাতে থার্টি ফার্স নাইট উদযাপন করতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বাঁধন নামের একটি মেয়ে ১০/১২ জন মদ্যপ যুবক কর্তৃক শালীনতা হানীর শিকার হয় । ২০১২ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর আবারও ঘটে অনূরুপ ঘটনা । ২০১৩ সালের পহেলা জানুয়ারী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় জঘন্য ঘৃনিত একটি রিপোর্ট । তারা প্রকাশ করে, বন্দর রাজধানী চট্টগ্রামের একটি হোটেলের ৬ তলায় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় অশ্লীল নৃত্যের । সে অনুষ্ঠানের অভ্যন্তরে নেশাজাতীয় দ্রব্য এবং কনডম বিক্রি করা হয় ।
২০১৩ ও ’১৪ ঈসায়ী সালের প্রায় অধিকাংশ সময়ের আলোচিত ঘটনা ছিল ইভটিজিং । সামাজিক অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ যতগুলো অপসংস্কৃতি, বিজাতীয় সংস্কৃতি আমাদের দেশে চালু আছে সেগুলো যদি বন্ধ করা যায় তবে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর দরকার হবে না । এটা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে ।
বর্ষবরণ কেন হারাম:
ইসলাম মানুষের ইহকালীন কল্যাণ, পরকালীন মুক্তি ও হেদায়াতের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই এই দ্বীনের মধ্যে বিজাতীয় কোন ঐহিত্য-সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো কোনভাবেই বৈধতা পেতে পারে না। কারণ, ইসলামই হচ্ছে অদ্বিতীয় জীবনবিধান। আর যারা ইসলামের আওতার মধ্যে নেই তারা নিঃসন্দেহে কাফির-মুশরিকদের অন্তর্গত। তাই কাফির-মুশরিকদের অনুসরণও ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
যে সকল অনৈসলামিক কাজ হয়ে থাকে। তা হলো-
অশ্লীলতা :
অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে ইসলামে গর্হিত ও নিকৃষ্টতম পাপাচার বলে মনে করা হয়।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَتُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا
আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, দু প্রকার লোক জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে দেখিনি। এক প্রকার ঐ সব লোক যাদের কাছে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি থাকবে। তারা এর দ্বারা লোকেদের পিটাবে। দ্বিতীয় প্রকার ঐ শ্রেণীর মহিলা, যারা কাপড় পরিহিতা কিন্তু উলঙ্গ প্রায়, মানুষকে আকৃষ্টকারিণী ও স্বয়ং বিচ্যুত। যাদের মাথার খোপা বুখতী উটের পিঠের উঁচু কুজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়।
( মুসমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৩০, ইসলামিক সেন্টার ৬৯৮৮ )
গান বাজনা :
অশ্লীল গান-বাজনাকে ইসলামে হারাম করা হয়েছে। এ রাতে বর্ষবরণের নামে আয়োজিত হয় বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কনসার্ট। যেখানে নারী-পুরুষের একসঙ্গে গান-বাজনা, নগ্ননৃত্য আবশ্যকীয় বিষয়। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা ও রাসূল সা. এসব নিন্দনীয় কাজকে সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। যারা এসব কাজে লিপ্ত তাদের জন্য করেছেন কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতা’য়ালা ইরশাদ করেন,
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَهۡوَ
الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَهَا
هُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ
আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।
সুরা লুকমান, আয়াত নং- ০৬.
আতশবাজি ও পটকাবাজি :
এ রাতে আনন্দ-উল্লাস করার জন্য মধ্যরাত থেকে শুরু হয় আতশবাজি ও পটকাবাজি। যা জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করে। এর দ্বারা অগ্নিসংযোগেরও আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে জনসাধারণের কষ্টদায়ক ও বিরক্তিকর হয়। আল্লাহতা’য়ালা বলেন,
وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ
الۡمُؤۡمِنٰتِ بِغَیۡرِ مَا اکۡتَسَبُوۡا فَقَدِ احۡتَمَلُوۡا بُهۡتَانًا وَّ
اِثۡمًا مُّبِیۡنًا
যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।
সুরা আহযাব, আয়াত নং- ৫৮.
অর্থ অপচয় :
এ রাতকে কেন্দ্র করে অনেক অর্থ অনৈসলামিক ও হারাম কাজে ব্যয় করা হয়। যা একদিকে যেমন মারাত্মক গুনাহের কাজ অপরদিকে অপচয়। আর ইসলাম অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।
এ ব্যাপারে আল্লাহতা’য়ালা বলেন,
اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ
الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّهٖ کَفُوۡرًا
নিশ্চয় যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রাবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।
সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত নং-২৭.
যুবক-যুবতীর অবাধ মেলামেশা :
থার্টি-ফার্স্ট নাইটে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, সমুদ্র সৈকত, নাইট ক্লাবে যুবক-যুবতীরা অবাধে মেলামেশা ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। যা ইসলামের পরিভাষায় জিনা বা ব্যভিচার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।
মিশকাত শরীফ , হাদিস নং- ১৩১৮.
আমাদের করণীয়:
একজন সন্তানের সুন্দর গাইড লাইন দেয়া পিতা-মাতার উপর আবশ্যক।এজন্য সন্তানের সুশিক্ষার পাশাপাশি তার চলার সাথীদের ব্যাপারেও পিতা-মাতাকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সন্তান কাদের সাথে বন্ধুত্ব করছে । বর্ষবরণের নামে ঈমান বিধ্বংসী কর্মকান্ড থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে করনীয় হলো-
১. ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা।
২.পারিবারিকভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।
৩. সুস্থ সাংস্কুতির চর্চা করা।
৪. এদিন সন্তানদেরকে বাহিরে কোথাও যেতে না দেয়া।
৫. অশ্লীল নাটক-সিনেমা বন্ধ করা এবং প্রচারকদের বর্জন করা।
৬. প্রপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের দ্রুত বিবাহের ব্যবস্থা করা।
৭. সামাজিক জীবনে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা।
৮. যুব সমাজকে রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
উপসংহার:
মূলত থার্টি-ফার্স্ট বা বর্ষবরণের নামে উন্মত্ততার অনুমোদন ইসলামে নেই বরং এসব বিজাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। তাই মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য থার্টি-ফার্স্ট নাইট উদযাপনসহ এধরনের সকল বেহুদা কাজ থেকে বিরত থাকা। অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে মানুষকে সতর্ক করা। আল্লাহতা’য়ালা বলেন, তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত; মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।
সূরা আল ইমরান, আয়াত নং-১১০.
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সামগ্রীক জীবনে ইসলামী অনুশাসন মেনে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জনের তাওফীক দিন।
আমীন.
অধ্যয়নরত,
ইসলামী বিশ্ববিদ্য্যালয়
কুষ্টিয়া।
No comments
Post a Comment