রহমানের বান্দা কারা ?



রহমানের বান্দাদের গুণাবলী

আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম হলো রহমান অর্থ দয়ালু।  তিনি অত্যান্ত দয়ালু ও মেহেরবান। তাঁর দয়ার শেষ নেই। বান্দা অনেক গোনাহ করার পর ভুল বুঝতে পেরে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। বরং তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে আরো খুশি হোন।

দয়াময় আল্লাহ সেসব ব্যক্তিদেরকে তাঁর রহমতের ছায়াতে স্থান দেন যাদের মধ্যে বিশেষ গুণ বিদ্যমান থাকবে।

আসুন আমরা জেনে নেই রহমানের বান্দাদের গুণাবলী কেমন হবে =

এক: তারা বিনয় ও নম্র প্রকৃতির হবে।

দয়াময় রহমানের বান্দাগণ জমিনে বিনয়ী হিসেবে চলাফেরা করবন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا

আর রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা যমীনে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে।

 সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 63

তারা কখনো জমিনে অহংকার বশত চলাফেরা করবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা অহংকার করতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ لَا تُصَعِّرۡ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَ لَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ

অহংকারের বশবর্তী হয়ে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না, আর পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা কর না, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

সুরা লুকমান, আয়াত নং- 18

অহংকারী ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে ন। যেমন হাদিসে এসেছে-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন,

 لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ. قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً. قَالَ : إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ

ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, লোকেরা চায় যে, তার পোষাক সুন্দর হোক, তার জুতা জোড়া সুন্দর হোক। জবাবে তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। অহংকার সত্যকে দম্ভের সাথে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা

মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮ ক্রোধ অহংকার অনুচ্ছেদ।

সুতরাং দয়াময় রহমানের বান্দাদের প্রথম গুণ হলো তারা জমিনে বিনয়ী হয়ে চলাফেরা করবে এবং তাদের মধ্যে অহংকার থাকবে না।

দুই: মূর্খদের সাথে তর্কে জড়াবে না

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا

এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, ‘সালাম

সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 63

সালাম বলার অর্থ মুখ ফিরিয়ে নেওয়া তর্ক-বিতর্ক ছেড়ে দেওয়া। অর্থাৎ, ঈমানদাররা জাহেল মুর্খ লোকদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে না। বরং তারা এমতাবস্থায় এড়িয়ে চলার পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং ফালতু বিতন্ডা বর্জন করে।

অত্র আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,

وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ

তারা যখন নিরর্থক কথাবার্তা শুনে তখন তা উপেক্ষা করে, তা থেকে বিরত থাকে আর বলে, আমাদের আমলের ফল আমরা পাব, তোমাদের আমলের ফল তোমরা পাবে, তোমাদের প্রতি সালাম, অজ্ঞ বা মূর্খদের সাথে আমাদের বিতর্কের কোনো প্রয়োজন নেই

সুরা ক্বাছাছ , আয়াত নং- 55

সুতরাং অত্র আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, মূর্খদের সাথে তর্কেলিপ্ত হওয়া যাবে না। বরং বিতর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। আর এটাই হলো রহমানের বান্দাদের গুণাবলী।

তিন: রুকু ও সিজদাহ অবস্থায় রাত অতিবাহিত করেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا 

এবং যারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে দন্ডায়মান থেকে রাত্রি অতিবাহিত করে।

সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 64

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

 تَتَجَافٰی جُنُوۡبُهُمۡ عَنِ الۡمَضَاجِعِ یَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا ۫ وَّ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ

তারা তাদের (দেহের) পার্শ্বগুলো বিছানা থেকে আলাদা করে, (জাহান্নামের) ভীতি (জান্নাতের) আশা নিয়ে তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আর আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে।

সুরা আস-সাজদাহ, আয়াত নং- 16

তিনি আরো বলেন,

کَانُوۡا قَلِیۡلًا مِّنَ الَّیۡلِ مَا یَهۡجَعُوۡنَ    وَ بِالۡاَسۡحَارِ هُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ

রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাতো।  রাত্রির শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত

সুরা আয-যারিয়াত, আয়াত নং- 17-18

এখানে রাতে দন্ডায়মান থাকা বলতে তাহাজ্জুতের স্বালাতকে বোঝানো হয়েছে। হাদিসে তাহাজ্জুতের স্বালাতের অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় কর, কেননা, এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সকল নেককারদের অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে আল্লাহ্ তা'আলার নৈকট্য দানকারী, মন্দ কাজের কাফফারা এবং গোনাহ থেকে নিবৃত্তকারী।

 সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হা: নং-1135

রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি এশার সালাত জামাআতে আদায় করে, সে যেন অর্ধারাত্রি ইবাদাতে অতিবাহিত করে এবং যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করে, তাকে অবশিষ্ট অর্ধারাত্ৰিও ইবাদাতে অতিবাহিত্যকারী হিসেবে গণ্য করা হবে।

 মুসলিম, হা: নং-656

প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারিম সা. এরশাদ করেছেন,


أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ

বান্দা সিজদারত থাকাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার অধিক নিকটবর্তী হয়, অতএব, তোমরা তখন অধিক দু‘আ করতে থাক’।

সহিহ মুসলিম, হা/৪৮২; মিশকাত, হা/৮৯৪

সুতরাং বোঝা গেলো যে, রহমানের বান্দাগণ অধিক সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন।

চার: জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا اصۡرِفۡ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ٭ۖ اِنَّ عَذَابَهَا کَانَ غَرَامًا

আর তারা বলে : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি দূর কর, তার শাস্তি তো ভয়াবহ বিপদ।

সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 65

রহমানের বান্দাগণ আল্লাহর ইবাদত তথা আদেশ-নিষেধ পালন করা সত্ত্বেও আল্লাহর আযাব ও তাঁর পাকড়াও হতে নির্ভয় হওয়া ও নিজ ইবাদতের উপর গর্ব করা উচিত নয়। এই অর্থ অন্য জায়গায় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে,

 وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ

অর্থাৎ, আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে।

 সূরা মু’মিনূন ৬০ আয়াত

ভয় শুধু এই কারণে নয় যে, তাদেরকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে; বরং তাদের ভয় হয় যে, তাদের দান খয়রাত গ্রহণ হচ্ছে কি না ? হাদীসে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে,

আয়েশা রা.  রাসূলুল্লাহ সা.-কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘এই আয়াতে কি ঐ সব লোকেদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা মদ পান ও চুরি করে?’ তিনি বললেন, ‘‘না, হে আবূ বাকরের বেটী! বরং তারা ঐ সব লোক, যারা রোযা রাখে, নামায পড়ে, দান করে। তা সত্ত্বেও তারা ভয় করে যে, তাদের এইসব সৎকর্মগুলো যেন আল্লাহর দরবারে অগ্রহণীয় না হয়ে যায়।

 তিরমিযী, কিতাবুততাফসীর সূরাতুল মু’মিনূন

            জাহান্নাম থেকে বাঁচার ও জান্নাত লাভের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া:

প্রথম দোআ:

 اللَّهُمَّ أَجِرْنِى مِنَ النَّارِ

অর্থ:“হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও”

ফজিলত: যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের নামাজ শেষে ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’ সাতবার পাঠ করবে সে যদি ওই রাতে বা দিনে মারা যায় তাহলে অবশ্যই জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে।

 (-সুনানে আবু দাউদ: ২/৭৪১)

দ্বিতীয় দোআ:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।

ফজিলত: রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”।

 তিরমিযিঃ ২৫৭২, ইবনে মাজাহ ৪৩৪০

তৃতীয় দোআ:      

কবর ও জাহান্নামের আযাব এবং জীবন, মৃত্যু ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোআ…

اللَّهُــمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে।

 বুখারী ২/১০২, নং ১৩৭৭; মুসলিম ১/৪১২, নং ৫৮৮

পাঁচ: ব্যয় করার সময় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 وَ الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَنۡفَقُوۡا لَمۡ یُسۡرِفُوۡا وَ لَمۡ یَقۡتُرُوۡا وَ کَانَ بَیۡنَ ذٰلِکَ قَوَامًا 

এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কৃপনতাও করে না, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।

সুরা  ফুরক্বান, আয়াত নং- 67

রহমানের বান্দাগণ খরচ করার সময় কৃপণতা করবে না এবং অপব্যয়ও করবে না। অপব্যয় করা শয়তানের কাজ। আল্লাহ তায়ালা অপব্যয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি বলেন,

 اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّهٖ کَفُوۡرًا

নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।

সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত নং- 27

 یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ 

হে আদাম সন্তান! প্রত্যেক সলাতের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর, আর খাও, পান কর কিন্তু অপচয় করো না, অবশ্যই তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।

সুরা আরাফ, আয়াত নং- 31

ছয়: আল্লাহর সাথে কাউকে ডাকে না।

রহমানের বান্দাগণ কখনো কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করেন না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 وَ الَّذِیۡنَ لَا یَدۡعُوۡنَ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ

এবং তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না

সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 68

শিরক করা সবচেয়ে বড় জুলুম।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ اِذۡ قَالَ لُقۡمٰنُ لِابۡنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشۡرِکۡ بِاللّٰهِ ؕؔ اِنَّ الشِّرۡکَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ 

আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলম'

সুরা লুকমান, আয়াত নং- 13

শিরকী গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন না।

তিনি বলেন,

اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করবেন না। এটা ছাড়া অন্য সব যাকে ইচ্ছে মাফ করবেন এবং যে আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে এক মহা অপবাদ আরোপ করল। 

সুরা নিসা, আয়াত নং- 48

শিরক মুমিনের ইমান ধ্বংস করে দেয়।

আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা ৭টি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে বেঁচে থাকো। তারা জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন-
আল্লাহর সঙ্গে শিরক তথা অংশীদার স্থাপন করা, জাদু করা, কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা, আল্লাহ যা হারাম করেছেন, সুদ খাওয়া, ইয়াতিমের মাল খাওয়া, জেহাদ থেকে পলায়ন করা, সতি নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া।

বুখারি

শিরককারীর জন্য জান্নাত হারাম।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 اِنَّهٗ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ الۡجَنَّۃَ وَ مَاۡوٰىهُ النَّارُ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ

যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীস্থাপন করে তার জন্য আল্লাহ অবশ্যই জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন আর তার আবাস হল জাহান্নাম। যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। 

সুরা মায়েদা, আয়াত নং- 72

সাত: অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবে না এবং যিনা করবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ لَا یَقۡتُلُوۡنَ النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰهُ اِلَّا بِالۡحَقِّ وَ لَا یَزۡنُوۡنَ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ یَلۡقَ اَثَامًا

আর আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর তারা ব্যভিচার করে না; যে এগুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে।

সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 68

আল্লাহর প্রিয় বান্দারা কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ “একজন মুমিন ঐ পর্যন্ত পরিত্রাণের আশা করতে পারে যতক্ষণ সে কোন হারামকৃত রক্ত প্রবাহিত না করে’৷

 বুখারী: ৬৮৬২

রহমানের বান্দারা কোন ব্যভিচার করে না। ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয় না। একবার রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সবচেয়ে বড় গুণাহ কি? তিনি বললেনঃ “তুমি যদি কাউকে (প্ৰভুত্ব, নাম-গুণে এবং ইবাদতে) আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করাও”। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর? তিনি বললেনঃ “তুমি যদি তোমার সন্তানকে হত্যা কর এই ভয়ে যে, সে তোমার সাথে আহারে অংশ নেবে”। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর? তিনি বললেনঃ “তুমি যদি তোমার পড়াশীর স্ত্রীর সাথে যিনা কর”।

বুখারীঃ ৬৮৬১, মুসলিমঃ ৮৬

আট: মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না।

কারো বিরুদ্ধ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া মারাত্মক অপরাধ যা রহমানের বান্দাগণ করেন না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 وَ الَّذِیۡنَ لَا یَشۡهَدُوۡنَ الزُّوۡرَ ۙ وَ اِذَا مَرُّوۡا بِاللَّغۡوِ مَرُّوۡا کِرَامًا 

আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না এবং অসার কার্যকলাপের সম্মুখীন হলে আপন মর্যাদা রক্ষার্থে তা পরিহার করে চলে।

সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 72

অত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন

وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَّكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ،

আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে ব্যক্তি তা গোপন করে, তার হৃদয় পাপিষ্ঠ। বস্ত্ততঃ তোমরা যা কিছু কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।

সুরা বাকারা, আয়াত নং- 283

 আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন,

 شَهَادَةُ الزُّوْرِ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ، وَكِتْمَانُهَا كَذَلِكَ،

মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও সাক্ষ্য গোপন করা সবচেয়ে বড় গুনাহ’।

তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ২/২৮৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্র:।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

 إِنَّ بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ تَسْلِيمَ الْخَاصَّةِ وَفُشُوَّ التِّجَارَةِ حَتَّى تُعِيْنَ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا عَلِى التِّجَارَةِ وَقَطْعَ الأَرْحَامِ وَشَهَادَةَ الزُّوْرِ وَكِتْمَانَ شَهَادَةِ الْحَقِّ وَظُهُوْرَ الْقَلَمِ

 ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ব্যক্তি বিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেয়ার প্রচলন ঘটবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা করবে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে। মিথ্যা সাক্ষ্যদানের প্রচলন হবে এবং সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবে, লেখনীর প্রসার ঘটবে’।

আহমাদ হা/৩৮৭০; ছহীহাহ হা/৬৪৭; ছহীহ আদাবুল মুফরাদ হা/৮০১।

নবম: আল্লাহ আয়াত শ্রবণে তদানুযায়ী আমল করেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন.

وَ الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِّرُوۡا بِاٰیٰتِ رَبِّهِمۡ لَمۡ یَخِرُّوۡا عَلَیۡهَا صُمًّا وَّ عُمۡیَانًا

আর তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে যারা তার প্রতি বধির ও অন্ধের ন্যায় আচরণ করে না (শুনেও শুনে না, দেখেও দেখে না- এমন করে না)। 

সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 73

রহমানের বান্দাগণকে যখন আল্লাহর আয়াত ও আখেরাতের কথা স্মরণ করানো হয়, তখন তারা এসব আয়াতের প্রতি অন্ধ ও বধিরদের ন্যায় মনোযোগ দেয় না; বরং শ্রবণশক্তি ও অন্তদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের ন্যায় এগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে ও তদনুযায়ী আমল করে।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰهُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ اِذَا تُلِیَتۡ عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتُهٗ زَادَتۡهُمۡ اِیۡمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمۡ یَتَوَکَّلُوۡنَ ۚ

মু’মিন তো তারাই আল্লাহর কথা আলোচিত হলেই যাদের অন্তর কেঁপে উঠে, আর তাদের কাছে যখন তাঁর আয়াত পঠিত হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে আর তারা তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে।

সুরা আরফাল, আয়াত নং- 03

দশম: সৎ সন্তান ও স্ত্রী প্রাপ্তীর জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন।

আল্লাহর তায়ালা বলেন,

 وَ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا

আর যারা প্রার্থনা করে : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান কর যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দাও।

সুরা ফুরক্বান, আয়াত নং- 74

সন্তানাদি পিতামাতার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিক্ষা স্বরুপ। নেক সন্তান পিতামাতার আশীর্বাদ। মৃত্যুর পর নেক সন্তানের দোয়াতে পিতামাতা সোয়াব পাবে কবরে। তাই রহমানের বান্দাগণ কল্যাণের ধারা অব্যহত রাখার জন্য আল্লাহর নিকট নেক সন্তান প্রাপ্তীর জন্য প্রার্থনা করেন।

সুতরাং আল্লাহ তায়ালার নিকট আমাদের প্রার্থনা তিনি যেনো আমাদেরকে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করার তাওফীক দান করেন এবং তাঁর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করেন।

আমিন


No comments

Powered by Blogger.