গুড আইডিয়া , লাভজনক ব্যবসা !

 কোন কাজকে ছোট মনে করতে নেই। 


মসজিদ থেকে আসরের আযান ভেসে আসছে। হাতের বইটা রেখে সালাতের প্রস্তুতি নিল ফারিহা। মাগরিবের পরই ড্রাইভার সিরাজ ভাই আসবেন। তার কাছে বইগুলো দিতে হবে কুড়িয়ার করার জন্য। আজকে মোট ২০ টা পার্সেল দেশের বিভিন্ন ঠিকানায় কুড়িয়ার করার ইচ্ছা।

সালাম ফেরাতেই সালমা হাজির। সালমা ফারিহার নতুন প্রতিবেশী। প্রণোচ্ছল একটা মেয়ে। ফারিহার সাথে বই প্যাকিংয়ে বসে গেছে। সেই সাথেটুকটাক গল্প চলছে।

কবে থেকে এই প্রজেক্ট চালু করলেন আপু ? আগ্রহভরে জানতে চাইল সালমা। এই প্রজেক্টের আদ্যোপান্ত জানার বড় শখ তার।

সে তো প্রায় চার বছর হতে চললো। তুমি কি ফাতিমাকে চেনো ? সেকেন্ড ফ্লোরে থাকে।

জি আপু, চিনি। দড়ি দিয়ে শক্ত করে তিনটা বই বাধছে সালমা। একটা ইসলামি আকিদার বই, আর দুটো মুসলিম নারীদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক বই।

আমি আর একদিন গল্প করছিলাম। -কথা সে-কথা থেকে অপচয়ের প্রসঙ্গ উঠল। হঠাৎ আবিস্কার করলাম আমরা দুজনও কম অপচয় করি না। বিশেষ করে হাত খরচের টাকাটা প্রায়ই খেয়াল খুশিতে ব্যয় করে ফেলি। হয়তো একটা ক্র্যাফট ম্যাটেরিয়াল পছন্দ হয়ে গেল, হুট করে কিনে ফেললাম। ওয়ারড্রোবে জামার অভাব নেই, তবুও চোখের খায়েশে একটা জামা কিনে ফেললাম। এমনই অবিচেকের মতো খরচ করতাম আমরা। সে রাতে দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম হুটহাট শখ পূরণে লাগাম টানবো। উম্মাহর অভাবীদের কথা ভেবে হলেও অপচয় কমিয়ে দেবো।

একনাগাড়ে কথা বলে একটু দম নিল ফারিহা।

তারপর ?

শুরু টা কি করে হলো ?

তারপর প্রতিমাসে অল্প অল্প করে টাকা জমানো শুরু। একটা মজার বিষয় কী, জানো ? প্রথম প্রথম খরচ কমিয়ে টাকা জমানো অসম্ভব মনে হতো। কিন্তু মাস শেষে দেখতাম একটু হিসেব করে চললেই টাকা জমানো সম্ভব।

প্রথম দুই মাস আমাদের জমানো টাকা একটা দাতাসংস্থায় দিয়েছিলাম। ততদিনে আমাদের এই উদ্যোগের কথা অনেকেই জেনে গেছে। ক্লাসমেট, আত্মীয়স্বজন যারাই শুনেছে, সবাই বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তৃতীয় মাসে আমাদের কাছে মোটামুটি ভালো অঙ্কের টাকা জমা পড়ে। সেই টাকা দিয়ে আকিদা সহ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর লেখা কিছু বই কিনতে শুরু করি আমরা।  তখন থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বইগুলো পাঠাচ্ছি। এখন তো প্রতিমাসে দুইশো থেকে আড়াইশো পার্সেল যাচ্ছে, আল হামদুলিল্লাহ।

মাশা আল্লাহ, কী চমৎকার আইডিয়া আপু! অপচয় রোধে করতে গিয়ে কত সুন্দর একটা প্রজেক্টের অংশ হয়ে গেলেন! সালমা বিস্ময় কাটছে না।

আল-হামদুলিল্লাহ মৃদু হাসল ফারিহা। আসলে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন বলেই এতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছি আমরা। প্রতি বছরই এই উদ্যোগকে একটু একটু করে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তারপরও বই কেনার পর বছরশেষে কিছু টাকা থেকে যায়। সেই টাকাগুলো আমরা বিশ্বাসযোগ্য কিছু দাতা সংস্থাকে দিয়ে দিই। শীতের সময় দরিদ্রের কম্বল দেওয়া, শরণার্থীদের জন্য টিউবওয়েল বসানো রকম আরও কিছু প্রজেক্টে আমাদের দেওয়া অর্থ কাজে লেগেছে।

সালমা তন্ময় হয়ে শুনে যাচ্ছিল ফারিহার কথা ঘোর ভাঙল মাগরিবের আযানে। সালাত শেষে ফারিহার হাতে কিছু গুজে দিলো সে। রিকশা ভাড়া থেকে বাচানো টাকা। কে না চায় এমন বরকতময় কাজের অংশীদার হতে!

( কাজের মাঝে রবরে খোজে , ২২ ২৩ পৃ. )

আমরাও  পারি এমন কোন আইডিয়া বের করে, সেই আলোকে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কোন কাজ করা। তবে সেটা যেন হয় শুধুমাত্র রবের সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেই সুযোগ দান করুন।

আমিন

No comments

Powered by Blogger.