বিদয়াতে হাসানাহ ও বিদয়াতে সাইয়েয়াহ , এসব ইসলামী পরিভাষা নয় !
বিদয়াতে হাসানাহ
ও বিদয়াতে সাইয়েয়াহ , এসব ইসলামী পরিভাষা নয় !
রাসূল সা. এর উক্তি – كل بدعة
ضلالة তথা
সকল বিদয়াত ভ্রষ্টতা। দ্বীনের মধ্যে যদি এমন নতুন কিছু সংযোজন করা হয়, যা রাসূল সা.
এর উপস্থাপিত জীবনাদর্শে পাওয়া যায় না, এমনকি কোনো উঙ্গিতও পাওয়া যায় না, তবে তা বিদয়াত
বলে গণ্য হবে।
এ ধরনের বিদয়াতকে রাসূল সা.
ضلالة তথা ভ্রষ্টতা বলেছেন। এক্ষেত্রে
নিয়ত যতই ভালো হোক, কাজ যতই সুন্দর হোক, ব্যক্তি যতই উপযুক্ত হোক, বিদয়াত রচনা করলে
তার রক্ষা নেই। সে অবশ্যই বিদয়াতি বলে গণ্য হবে। কারণ সে বিদয়াত রচনার মাধ্যমে মানুষের
স্বচ্ছ ইমান হরণ করে থাকে। এতে জনসমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই রাসূল সা. এটাকে –
ضلالة
তথা
ভ্রষ্টতা আখ্যা দিয়ে বলেছেন – كل
بدعة ضلالة
তথাপি দ্বীনের একান্ত প্রয়োজনের
খাতিরে কতিপয় আলেম
বিদয়াতকে দু’শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন।
যথা- ১, বিদয়াতে হাসানা ও ২,
বিদয়াতে সাইয়েয়াহ
Ø বিদয়াতে হাসানাহ – بدعة
للدين -
তথা দ্বীনের জন্য নব আবিষ্কৃত বিষয়টি যদি কুরআন সুন্নাহ বিরোধী না হয়; বরং এর দ্বারা
মুসলিম উম্মাহ তথা গোটা মানবজাতির উপকার সাধিত হয়, তবে তাকে বিদয়াতে হাসানাহ বলে।
যেমন:
ফ্যান তৈরী করা, কুরআন সংকলন, হাদিসগ্রন্থবদ্ধকরণ, মাদরাসাহ নির্মাণ করা, আযানের জন্য
মাইক ব্যবহার করা ইত্যাদি।
এপ্রকার
বিদয়াতের ব্যাপারে রাসূল সা. বলেছেন-
من
سن في الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجرمن عمل بها
Ø বিদয়াতে সাইয়েয়াহ - بدعة في الدين - - তথা দ্বীনের
মধ্যে নব আবিষ্কৃত বিষয়টি যদি কুরআন সুন্নাহ বিরোধী হয়, তাহলে তাকে বিদয়াতে সাইয়েয়াহ
বলে।
যেমন:
মিলাদ-কিয়াম করা, সোয়াবের আশায় বিভিন্ন স্থানে গমন করা, ওরস করা ইত্যাদি।
এপ্রকার
বিদয়াতের ব্যাপারে রাসূল সা. বলেছেন -
من احدث في امرنا هذا
ماليس منه فهورد
كل بدعة ضلالة اي كل
بدعة سيئة ضلالة
রাসূল
সা. এর উক্তি كل بدعة ضلالة ( প্রত্যেক বিদয়াতই ভ্রষ্টতা ) বলা সত্ত্বেও বিদয়াতকে এরুপ দু’শ্রেণীতে বিভক্তকরণ
কিভাবে শুদ্ধ হয় ? – জবাব
যারা
বিদয়াতকে ভালোমন্দের বিচারে حسنة
ও سيئة এ দু’শ্রেণীতে বিভক্ত করেন তারা মূলত বিদয়াতের
সংজ্ঞা ভালো করে খতিয়ে দেখেননি।
কারণ
তারা কুরআন সংকলন, মাদরাসা নির্মাণ, নাহু সরফ শিক্ষা এগুলোকে বিদয়াতে হাসানাহ বলেছেন।
বস্তুত এগুলোর কোনটিই বিদ‘আত নয়। বরং এসব রাসূল সা. এর
যুগে পরোক্ষভাবে ছিল। পরবর্তীতে এসব কিছুর কেবল উন্নতি সাধিত হয়েছে।
মূলতঃ এগুলোকে বিদ‘আতে হাসানাহ প্রমাণ করে এরই ছিদ্রপথে আসল
বিদ‘আতগুলোকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে এরা তৎপর।
আর যেগুলোকে তারা বিদয়াতে সাইয়্যাহ বলছেন যেমন মিলাদ-কিয়াম করা, সোয়াবের আশায়
বিভিন্ন স্থানে গমন করা, ওরস করা ইত্যাদির কোনো
অস্তিত্ব দ্বীনের মধ্যে ছিল না।
হাদিসে
এসেছে, তিনটি স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে সোয়াবের উদ্দেশ্যে গমন জায়েজ নেই। তা হলো-
বায়তুল্লাহ, বায়তুল মুকাদ্দাস ও মসজিদে নববীতে সোয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা যায়।
কাজেই
আমরা বলবো, যারা বিদয়াতকে এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন তারা হাদীসের মর্ম উদ্ধারে দক্ষতার
পরিচয় দেননি। মূলত যা শরীয়ত সমর্থন করে তা বিদয়াত বা বিদয়াতে হাসানাহ নয়; বরং সুন্নাতে
হাসানাহ। অতএব সকল বিদয়াতই ভ্রষ্টতা, এটাকে ( বিদয়াতে হাসানাহ ও বিদয়াতে সাইয়েয়াহ
) এভাবে ভাগ করার যৌক্তিকতা নেই।
সুতরাং
প্রমাণিত হলো যে, বিদয়াতে হাসানাহ ও বিদয়াতে সাইয়্যাহ এভাবে ভাগ করা শরিয়ত সমর্থিত
নয়।
রাসূল
সা. বলেছেন, كل
بدعة ضلالة و كل ضلالة في النار তথা - প্রত্যেক বিদয়াতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নাী।
বিদয়াতযুক্ত
কোন আমল আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। সেটা যত ভালো আমলই হোক না কেনো।
রাসূল
সা.বলেন :
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا
فَهُوَ رَدٌّ.
(مسلم)
অর্থঃ
যে ব্যক্তি আমাদের পক্ষ থেকে স্বীকৃত নয় এমন কোন আমল করল, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
সবচেয়ে
ভয়ংকর বিষয় হলো - বিদয়াতকারীর তাওবা করার সম্ভবনা খুবই কম থাকে। কারণ বিদয়াতকারী
যখন কোন আমল করে তখন সে ঐআমলকে সুন্নাত মনে করে। তাই সে নিজের ভুল স্বীকার করে ন।
আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের মধ্যে বিদয়াত তৈরী করা থেকে হেফাযত করুন।
আমিন
No comments
Post a Comment