সবার আগে ইমান

 


                         সবার আগে ইমান

حَدَّثَنِي عَامِرُ بْنُ سَعْدٍ، قَالَ كَانَ سَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ فِي إِبِلِهِ فَجَاءَهُ ابْنُهُ عُمَرُ فَلَمَّا رَآهُ سَعْدٌ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ هَذَا الرَّاكِبِ فَنَزَلَ فَقَالَ لَهُ أَنَزَلْتَ فِي إِبِلِكَ وَغَنَمِكَ وَتَرَكْتَ النَّاسَ يَتَنَازَعُونَ الْمُلْكَ بَيْنَهُمْ فَضَرَبَ سَعْدٌ فِي صَدْرِهِ فَقَالَ اسْكُتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيَّ الْغَنِيَّ الْخَفِيَّ ‏"‏ ‏.

আমির ইবনু সা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা ইবনু ওয়াক্কাস (রাযিঃ) একদা তার উটের পালের মাঝে উপবিষ্ট ছিলেন, এমতাবস্থায় তার পুত্র উমার এসে পৌছলেন। সা (রাযিঃ) তাকে দেখামাত্রই পাঠ করলেন, “আউযু বিল্লা-হি মিন্শাররি হা-যার -কিব" অর্থাৎ- আমি আরোহীর অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তারপর সে তার আরোহী হতে নেমে বলল, আপনি লোকেদেরকে ছেড়ে দিয়ে উষ্ট্র এবং বকরীর মাঝে এসে বসে আছেন। আর এদিকে কর্তৃত্ব নিয়ে লোকেরা পরস্পর একে অপরের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত। কথা শুনে সা (রাযিঃ) তার বুকে আঘাত করে বললেন, চুপ থাকে। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুত্তাকী, আত্মনির্ভরশীল লোকালয় হতে নির্জনে বাসকারী বান্দাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।

(মুসলিম শরিফ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৬৩, ইসলামিক সেন্টার ৭২১৬)

 হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) মানব সমাজের সাথে জীবনযাপন করা অপরিহার্য এবং প্রয়োজনীয় বিষয়; তাই সকল মানুষের উচিত যে, তারা যেন সামাজিকভাবে সমাজের সদস্যদের সাথেই জীবনযাপন করে।

(২) মানব সমাজের সাথে জীবনযাপন করা অপরিহার্য এবং প্রয়োজনীয় বিষয়, কিন্তু এই মানব সমাজের সাথে জীবনযাপন করার কারণে যদি আল্লাহর অবাধ্যতা, অমান্যতা অথবা নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করা হয়, তাহলে সামাজিকভাবে সমাজের সদস্যদের সাথে জীবনযাপন ত্যাগ করে সকলকে ছেড়ে দিয়ে একাকী বা একক ভাবে জীবনযাপন করাই হলো উত্তম পন্থা। বিশেষ করে তাদের জন্য এই বিধানটি বেশি উপযোগী বা প্রযোজ্য যারা নিজেকে আল্লাহর অবাধ্যতা কিংবা পাপের কাজ থেকে এবং সন্দেহযুক্ত বিষয় ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে সক্ষম নয়।

(৩) প্রকৃত ইসলাম ধর্মে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা অপরিহার্য কিন্তু এই বন্ধন রক্ষা করার কারণে যদি আল্লাহর অবাধ্যতা, অমান্যতা অথবা আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করা হয় তাহলে; এই ক্ষেত্রে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা না করাই উত্তম পন্থা; কেননা ইসলাম ধর্মের একটি বিধান রয়েছে:

قاعدة: "درء المفاسد مقدم على جلب المنافع".

 অর্থ:  “মঙ্গল আনয়নের চেয়ে অমঙ্গল দূরীকরণেরই বেশি দরকার

(সুতরাং যে জিনিসে মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গল বেশি আছে, সে জিনিসটি বর্জনীয়। এবং যে জিনিসে অমঙ্গলের চেয়ে মঙ্গল বেশি আছে, সে জিনিসটি গ্রহণীয়।) 

(৪) এই হাদীসটির ভাবার্থঃ আল্লাহ সেই প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঠিক ভক্ত। আল্লাহর সঠিক আত্তাকী বা ভক্ত ব্যক্তি বলা হয় সেই ব্যক্তিকেযে ব্যক্তি প্রকৃত ইসলাম ধর্মের অপরিহার্য বা করণীয় কাজগুলি সম্পাদন করে এবং বর্জনীয় অবৈধ বস্তুগুলি পরিত্যাগ করে। আর আলগাণী বা সৃষ্টিজগতের অমুখাপেক্ষী ব্যক্তি বলা হয় সেই ব্যক্তিকেযে ব্যক্তির আত্মা প্রকৃতপক্ষে তৃপ্ত, সেই তৃপ্ত আত্মার মানুষই আল্লাহর কাছে  প্রিয়; কেননা সে তো শুধু মাত্র আল্লাহরই মুখাপেক্ষী ব্যক্তি আর অন্য কোনো সৃষ্টি বস্তুর মুখাপেক্ষী নয়। এবং আলখাফী বা আত্মগোপনকারী বলা হয় সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি অনুপস্থিত থাকলে তার বিষয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করে না এবং উপস্থিত থাকলে তাকে কেউ চিনতে পারে না। অথচ সে আল্লাহর কাছে মহামর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি এবং সে প্রকৃতপক্ষে জান্নাতুল ফেরদাউসের উচ্চ স্থানের অধিকারী ব্যক্তি

আল্লাহ তায়ালা আমাদের মেনে চলার তাওফীক দিন। 

আমিন

No comments

Powered by Blogger.