হাদিসে বর্ণিত “" ثَلاَثَةٌ “তিন“ সংখ্যা
হাদিসে বর্ণিত
“" ثَلاَثَةٌ “তিন“ সংখ্যা
প্রথম পর্ব -
আমরা জানি রাসূল সা. এর ২৩ বছরের
নবুওয়াতী জীবনে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু হাদিসে নির্দিষ্ট সংখ্যা
উল্লেখ রয়েছে, অতপর আহকাম বর্ণিত হয়েছে।
আজকে তিন সংখ্যার বর্ণিত হাদিস
উল্লেখ করবো , ইনশা আল্লাহ
১. কথার গুরুত্ব বুঝাতে তিনবার বলা
عَنْ
أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا
تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلَاثًا حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ وَإِذَا أَتَى
عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلَاثًا . رَوَاهُ
الْبُخَارِيُّ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সা. যখন কোন কথা বলতেন (অধিকাংশ সময়) তিনবার বলতেন, যাতে মানুষ তাঁর কথাটা ভালো করে বুঝতে পারে। এভাবে যখন তিনি সা. কোনও সম্প্রদায়ের কাছে যেতেন তাদেরও সালাম করতেন তখন তাদের তিনবার করে সালাম করতেন।
( সহীহ : বুখারী ৯৫, মিশকাত হা-২০৮ )
২.আল্লাহ যাদের ক্ষমা করবেন না
عَنْ
أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " ثَلاَثَةٌ لاَ
يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ
عَذَابٌ أَلِيمٌ " . قُلْتُ مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَدْ
خَابُوا وَخَسِرُوا فَقَالَ " الْمَنَّانُ وَالْمُسْبِلُ إِزَارَهُ
وَالْمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ
আবূ যার রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিবসে তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি ক্ৰক্ষেপ করবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। আমরা প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কারা? এরা তো ব্যর্থ ও ধ্বংস হল। তিনি বললেন, ( তারা হল ) উপকার করার পর তার খোটাদানকারী, পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় পরিধানকারী এবং নিজের পণ্যদ্রব্য মিথ্যা শপথ করে বিক্রয়কারী।
( তিরমিযি হাদিস নং-১২১১, ইবনু মাজাহ হাদিস নং- ২২০৮ )
৩. যে সকল কাজ আল্লাহর পছন্দ করেন এবং অপছন্দ করেন
عن
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
إِنَّ اللَّهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثًا وَيَكْرَهُ لَكُمْ
ثَلاَثًا
فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَأَنْ
تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُوا
وَيَكْرَهُ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ
وَإِضَاعَةَ الْمَالِ
আবূ হুরাইরাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করেন, তা হলঃ ১. তোমরা তারই ইবাদাত করবে, ২. তার সঙ্গে কিছুই শারীক করবে না এবং ৩. তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। আর যে সকল বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেনঃ ১. নিরর্থক কথাবার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা।
( মুসলিম ইফাবা, হাদিস নং ৪৩৩২
)
৪. রাসূল সা.যাদের নিয়ে ভয় করেছেন
عَنْ
ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ... وَإِنَّ مِمَّا
أَتَخَوَّفُ عَلَى أُمَّتِى أَئِمَّةً مُضِلِّينَ وَسَتَعْبُدُ قَبَائِلُ مِنْ
أُمَّتِى الأَوْثَانَ وَسَتَلْحَقُ
قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى بِالْمُشْرِكِيِنَ.
রাসূল সা. এর দাস ছাওবান রা. বলেন, নবী কারীম সা. বলেছেন, আমি সবচেয়ে যাদের বেশী ভয় করি, তারা হচ্ছে
১,তারা ভ্রান্ত আলেম সমাজ ২,
আর অচিরেই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে ৩, আর অতি শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক হিন্দু বা বিজাতীদের সাথে মিশে যাবে ।
( ইবনু মাজাহ হা/৩৯৫২ )
৫.জান্নাত থেকে বঞ্চিত
রাসূল সা. বলেন
ثلاثة لا يدخلون الجنة: مدمن الخمر،
وقاطع الرحم، ومصدق بالسحر
তিন শ্রেনীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবেন না:
মাদকাসক্ত ব্যক্তি, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং যাদুকে বিশ্বাসকারী।
(
সহীহ ইবনু হিব্বান, হাদীস নং-৫৩৪৬ )
অন্য এক জায়গায় রাসুল সা. বলেন
ثلاثة لا يدخلون الجنة العاقّ بوالديه
والديوث ورَجُلَةُ النساء
তিন ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না; তারা হলো পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি; দাইয়ুস এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী।
(হাকিম, মুস্তাদরাক, হাদীস নং-২৪৪)
৬.যাদের সাথে আল্লাহ কথা বলবে না
আবু যর গিফারী রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,
ثلاثةٌ لا يُكلِّمُهمْ اللهُ يومَ
القِيامةِ: المَنَّانُ الذي لا يُعطِي شيئًا إلا مِنَّةً، والمُنفِقُ سِلْعَتَهُ
بِالحَلِفِ الفاجرِوالمُسبِلُ إزارَهُ.
তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবে না-
(১) যে ব্যক্তি কাউকে দান করার পর খোটা দেয়।
(২) যারা পাপ কাজে অর্থ ব্যয় করে।
(৩) যে সকল পুরুষ টাকনুর নিচে কাপড় পরিধান করে।
(
সহীহ মুসলিম
)
৭.যাদের পাশে ফেরেশতা গমন করে না
আম্মার ইবনু ইয়াসির রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন:
ثَلَاثَةٌ لَا تَقْرَبُهُمُ
الْمَلَائِكَةُ : جِيفَةُ الْكَافِرِ ، وَالْمُتَضَمِّخُ بِالْخَلُوقِ ،
وَالْجُنُبُ ، إِلَّا أَنْ يَتَوَضَّأَ
তিন শ্রেণীর মানুষের পাশে রহমতের ফেরেশতা গমন করে না-
(১) কাফের বেঈমান ব্যক্তির মৃত লাশের নিকট।
(২) ঐ সকল পুরুষ যারা দৃশ্যমান প্রসাধনী ব্যবহার করে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি লাল হলুদ ইত্যাদি দৃশ্যমান রঙ জাতীয় প্রসাধনী দিয়ে সাজগোজ করে।
(৩) জুনুবী তথা অপবিত্র শরীর যার উপর গোসল জরুরী, গোসল সম্পন্ন না করা পর্যন্ত। অর্থাৎ অলসতা ও অবহেলা করে ফরয গোসল ত্যাগকারীদের পাশ দিয়ে ফেরেশতা গমন করে না।
(
সুনানে আবু দাউদ )
৮.যাদের সালাত কবুল হয় না
ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,
ثلاثة لا ترتفع صلاتهم فوق رؤوسهم شبرا
: رجل أم قوما وهم له كارهون ، وأمرأة باتت وزوجها عليها ساخط ، وأخوان متصارمان .
তিন ব্যক্তির সালাত তার মাথার উপর এক বিগতও উঠবে না। (অর্থাৎ, কবুল হবে না)
(১) ঐ ব্যক্তি যিনি মানুষের ইমামতি করেন, কিন্তু জনগন তার প্রতি অসন্তুষ্ট।
(২) যে মহিলা রাত্রিযাপন করে, কিন্তু স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট।
(৩) দুই ভাই যারা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী।
(
সুনানে ইবনু মাজাহ )
৯.যাদের কোন ইবাদত কবুল হবে না:
আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,
ثلاثة
لا يقبل الله منهم يوم القيامة صرفا ولا عدلا عاق ومنان ومكذب بالقدر
তিন শ্রেণী মানুষের কোন ইবাদত (ফরয-নফল) আল্লাহ কবূল করবে না-
(১) পিতা-মাতার অবাধ্যসন্তান।
(২) দান করে খোঁটা প্রদানকারী।
(৩) তাক্বদীর বা ভাগ্যকে অস্বীকারকারী।
(
তাবরানী, আল- মুজামুল কাবীর )
No comments
Post a Comment