দু‘আ কবুলের স্থান, ক্ষেত্র ও সময় = পাঠ- ০১
দু‘আ কবুলের স্থান, ক্ষেত্র ও সময় = পাঠ- ০১
কুরআন ও হাদীসের আলোকে দু‘আ কবুলের স্থান, ক্ষেত্র ও সময়ের বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো।
১. কোন মুসলিমের অগোচরে অন্য মুসলিমের জন্য দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়।
عَنْ صَفْوَانَ، -
وَهُوَ ابْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ صَفْوَانَ - وَكَانَتْ تَحْتَهُ الدَّرْدَاءُ
قَالَ قَدِمْتُ الشَّامَ فَأَتَيْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ فِي مَنْزِلِهِ فَلَمْ
أَجِدْهُ وَوَجَدْتُ أُمَّ الدَّرْدَاءِ فَقَالَتْ أَتُرِيدُ الْحَجَّ الْعَامَ
فَقُلْتُ نَعَمْ . قَالَتْ فَادْعُ اللَّهَ لَنَا بِخَيْرٍ فَإِنَّ النَّبِيَّ
صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ " دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ
لأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ
كُلَّمَا دَعَا لأَخِيهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ آمِينَ
وَلَكَ بِمِثْلٍ " .
সাফওয়ান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়াতে আবু দারদা রা. এর ঘরে গেলাম। আমি তাকে ঘরে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মু দারদাকে পেলাম। তিনি বললেন, আপনি কি এ বছর হজ্জ পালন করবেন? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট আমাদের কল্যাণের জন্যে দু’আ করবেন। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ একজন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকটে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করে তখন নিয়োজিত ফেরেশতা বলে থাকে "আমীন এবং তোমার জন্যও অবিকল তাই"।
মুসলিম, হাদীসএকাডেমি -
6822, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮০, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৩৪)
২. জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুম ব্যক্তির দু'আ কবুল হয়।
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
" ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ
الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ " .
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি দু’আ মকবুলঃ মাযলুমের দু’আ, মুসাফিরের দু'আ, সন্তানের জন্য তার পিতার দু’আ।
তিরমিযি হাদীস নং- ৩৪৪৮ ইফাবা প্রকাশনী
৩. মা-বাবা তার সন্তানের জন্য দু'আ করলে দোয়া কবুল হয় ৷
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
" ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ
الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ " .
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি দু’আ মকবুলঃ মাযলুমের দু’আ, মুসাফিরের দু'আ, সন্তানের জন্য তার পিতার দু’আ।
তিরমিযি হাদীস নং- ৩৪৪৮ ইফাবা প্রকাশনী
৪. নেককার সন্তানের দু'আ কবুল হয়।
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ
أَشْيَاءَ: مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ
صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
আবূ হুরাইরাহ রা. সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করে তখন তার আমলের সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের সওয়াব বন্ধ হয় না। এক. সাদাকাহ জারিয়া। দুই. এমন জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় তিন. নেক সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।
আবু দাউদ – ২৮৮০, আল্লামা আলবানী একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত।
৫. আরাফাতের ময়দানে
দোয়া করলে তা কবুল হয়
عَنْ
عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم قَالَ " خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ
مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ
شَيْءٍ قَدِيرٌ " .
আমর ইবন শুআয়ব তৎপিতা, তৎপিতামহ থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম দু’আ হল আরাফা দিনের দু’আ। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছেন তাই সবচেয়ে মঙ্গলজনকঃ
لاَ
إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ
وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
৬. বিপদগ্রস্ত অসহায় ব্যক্তির দু'আ তাড়াতাড়ি কবুল হয়।
اَمَّنۡ
یُّجِیۡبُ الۡمُضۡطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَ یَکۡشِفُ السُّوۡٓءَ وَ یَجۡعَلُکُمۡ خُلَفَآءَ
الۡاَرۡضِ ؕ ءَ اِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَذَکَّرُوۡنَ ﴿ؕ۶۲﴾
বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহবানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে যমীনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে ? তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।
সুরা নামল ,আয়াত নং- ৬২
৭. সেজদায় দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়।
عَنِ
ابْنِ عَبَّاسٍ، قال: كَشَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ السِّتَارَةَ وَالنَّاسُ صُفُوفٌ خَلْفَ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ، فَقَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ لَمْ يَبْقَ مِنْ
مُبَشِّرَاتِ النُّبُوَّةِ إِلَّا الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ يَرَاهَا الْمُسْلِمُ
أَوْ تُرَى لَهُ، ثُمَّ قَالَ أَلَا إِنِّي نُهِيتُ أَنْ أَقْرَأَ رَاكِعًا
أَوْ سَاجِدًا فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ وَأَمَّا
السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ قَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ .
ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সা. পর্দা উন্মোচন করলেন, তখন লোকজন আবূ বাকর রা.-এর পিছনের কাতারে দাঁড়ানো ছিলেন। তিনি সা. বললেন, হে লোক সকল! নুবুওয়াতের সুসংবাদ আর অবশিষ্ট নেই, নেক স্বপ্ন ব্যতীত যা মুসলিম দেখবে অথবা তাকে তা দেখানো হবে। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা শুনে রাখ! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে রুকূ এবং সিজদা অবস্থায় কিরাআত করতে। রুকূ'তে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বর্ণনা কর। আর সিজদায় তোমরা দু'আ করতে চেষ্টা কর। তোমাদের দু'আ কবুল হওয়ার উপযুক্ত সময় এটাই।
সুনান আত-তিরমিযি ( তাহকীককৃত ) , হাদীস নং- ১০৪৫
৮. আযানের পর দু'আ কবুল হয়।
عَنْ
سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ
إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ
وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِالإِسْلاَمِ
دِينًا غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ "
সা'দ ইবনু আবু ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে, “ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুল্লাহু রাযীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল-ইসলামি দীনান ওয়া বি-মুহাম্মাদিন রাসূলান” আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
সুনান আত তিরমিযি ( তাহকীককৃত ) হাদীস নং- ২১০, ইবনু মাজাহ– ৭২১
৯. আযানের সময় দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়।
عَنْ سَهْلِ بْنِ
سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثِنْتَانِ
لَا تُرَدَّانِ، أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ، وَعِنْدَ
الْبَأْسِ حِينَ يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا
সাহল ইবনু সা‘দ রা. সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ সময়ের দু'আ প্রত্যাখ্যাত হয় না অথবা খুব কমই প্রত্যাখ্যাত হয়।
সুনান আবু দাউদ ( তাহকীককৃত ) হাদীস নং- ২৫৪০
১০. যুদ্ধের সময়
দু‘আ করলে দু‘আ কবুল হয়
عَنْ
سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: ثِنْتَانِ لَا تُرَدَّانِ، أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ الدُّعَاءُ عِنْدَ
النِّدَاءِ، وَعِنْدَ الْبَأْسِ حِينَ يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا
সাহল ইবনু সা‘দ রা. সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ সময়ের দু'আ প্রত্যাখ্যাত হয় না অথবা খুব কমই প্রত্যাখ্যাত হয়। আযানের সময়ের দু‘আ এবং যখন একে অপরের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত থাকে।
সুনান আবু দাউদ ( তাহকীককৃত ) হাদীস নং- ২৫৪০
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উপযুক্ত সময় ও ক্ষেত্র বুঝে দু‘আ করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
চলবে...........................
No comments
Post a Comment