মৃত ব্যক্তি কেন্দ্রিক বিদয়াত ও তার ভয়াবহ পরিণতি
ইসলাম আল্লাহর নিকট মনোনীত এক জীবন ব্যবস্থা। যা নাবী মুহাম্মাদ সা. এর ২৩ বছরের নবুওয়াতী জীবনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করেছেন। মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান ও যাবতীয় করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। ইবাদতের সকল পথ ও পদ্ধতি নাবী সা. বাস্তবে করে শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং সোয়াবের নামে নতুন কোন পদ্ধতি আবিস্কার করার সুযোগ নেই। যাকে বিদয়াত বলা হয়। সোয়াবের নামে আমরা মৃত ব্যক্তি কেন্দ্রীক এমন সব কাজ করছি যার নমুনা ইসলামে নেই; ফলে সোয়াবের পরিবর্তে গোনাহ অর্জন করছি।
তাই আজকে বিদয়াতের পরিচয় ও তার ভয়াবহতা এবং মৃতদের জন্য জীবিতদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ইনশা আল্লাহ
বিদয়াতের পরিচয় -
শাব্দিক:
বিদআ’ত ( بدعة) একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ নতুনত্ব, নবতর সৃষ্ট বা উদ্ভাবন। এটি আরবী সুন্নাহর বিপরীত। বিদআতের সংজ্ঞায় ইবনু ফারিস বলেন-
পূর্ব নমুনা ব্যতিরেকে কোনো কিছু সৃষ্টি করা, শুরু করা বা প্রচলন করা। ( ইবনু ফারিস, মু‘জামু মাক্বায়িসিল লুগাহ, মাদ্দাহ ‘ بدع ’, ১/২০৭ )
বিদআ’হ কে বিদআ’হ বলার কারণ হলো, এটা নতুন জিনিস – যা রাসূলুল্লাহ ও সাহাবী ও তাবেয়ীদের যুগে ছিল না।
শরীয়াতের পরিভাষায় বিদ্আত হলো:–
দ্বীনের ভিতর সোয়াবের আশায় এমন সব নব আবিষ্কৃত বিষয় যার দলীল শরীয়াতে নেই। ( মূলত দ্বীন হিসেবে নতুন কিছুর নাম বিদআত; দ্বীনের সহযোগী বা অনুসঙ্গের নাম নয়। যেমন- কুরআনকে মাসহাফে একত্র করা, কুরআনে হরকত বা বিভিন্ন প্রতীক সংযোজন ইত্যাদি )
হাদীসের দৃষ্টিতে বিদআত:
عن عائشة ا؛ قالت: قال رسول الله : “من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু উদ্ভাবন করল—যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
( বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, আবূ দাউদ ৪৬০৬ )
- عن جابر بن عبد الله ؛ عن النبي أنه قال: “أما بعد, فإن خير الحديث كتاب الله, وخير الهدى هدى محمد, وشر الأمور محدثاتها, وكل بدعة ضلالة
যে ব্যক্তি আমাদের ( এই দ্বিনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে) নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৯৭
রাসূলুল্লাহসা.এর সুন্নাহ ও সাহাবীদের কর্মপদ্ধতি থেকে জানা যায়, দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত ইবাদত বা ইবাদতের পদ্ধতি সবই প্রত্যাখ্যাত হবে, যার ভিত্তি শরীয়াতে নেই, যার কোনো দলীল নেই।
বিদয়াতের পরিণতি
1. ১. দ্বীনের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকারক বিষয় হলো বিদআত-
যেহেতু বিদআতকে পূণ্য ও ছাওয়াবের কাজ মনে করা হয়, সেহেতু বিদআতী ব্যক্তি তা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারেনা। অথচ অন্যান্য পাপসমূহে বোধশক্তি থাকে। তাই আশা করা যায় যে, পাপী কোন না কোন দিন আপন পাপে লজ্জিত হয়ে নিশ্চয় তওবা-ইস্তেগফার করবে।
এ জন্যই ছুফিয়ান ছাওরী রহ. বলেন, “শয়তান পাপের পরিবর্তে বিদআতকেই খুবই ভালোবাসে।”
বিদআতী কাজ যেহেতু সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয় সেহেতু বিদআত থেকে তাওবা করার চিন্তা ও করা হয় না। তাই বিদআতীর মৌলিক আকীদা সংশোধন হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “আল্লাহ তায়ালা বিদআতীর তওবা গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ না বিদআত ছেড়ে দেয়।
( তাবারানী )
২. কিয়ামতের দিন বিদআতী হাওযে কাউছারের পানি থেকে বঞ্চিত হবে-
কিয়ামতের দিন যখন রাসূল আকরাম সা.হাউযে কাওসারে আসবেন যাদেরকে রাসূল সা. তার উম্মত মনে করবেন কিন্তু ফেরেশ্তাগণ বলবেন, এরা হলো সে সকল ব্যক্তি যারা আপনার পরে বিদআত শরু করে দিয়েছিল।
রাসূল সা. তখন বলবেন, “সুহকান, সুহকান” “দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও সে সকল লোক যারা আমার পরে দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ।
বুখারী ও মুসলিম
কিয়ামতের দিন কিছু লোক এমন হবে যারা আমল করে ক্লান্ত হয়ে গেছে কিন্তু জলন্ত আগুনে তাদেরকে নিক্ষেপ করা হবে।
( সূরা গাশিয়াহ আয়াত ৩-৪ )
2. ৩. বিদয়াত করার কারণে আল্লাহ ও কুরআনকে অস্বীকার করা হয়-
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন ,
اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ
عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন পরিপূর্ণ করে দিলাম...।
( সুরা : মায়িদা, আয়াত :৩ )
হাদিসে এসেছে-
عَن الْمُطَّلِبِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ مَا تَرَكْتُ شَيْئًا مِمَّا أَمَرَكُمُ اللهُ بِهِ إِلاَّ وَقَدْ أَمَرْتُكُمْ بِهِ وَلاَ
تَرَكْتُ شَيْئًا مِمَّا نَهَاكُمُ اللهُ عَنهُ إِلاَّ وَقَدْ نَهَيْتُكُمْ عَنهُ
মুত্ত্বালিব কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে আদেশ করিনি, অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তা আদেশ করেছেন এবং এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে নিষেধ করিনি, অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তা নিষেধ করেছেন।
(বাইহাক্বী ১৩৮২৫)
সুতরাং, সোয়াব অর্জনের সকল পথ ও পদ্ধতি ইসলামে বলা আছে, যুক্তি দিয়ে কোন পদ্ধতি তৈরী করার সুযোগ নেই।
3. ৪. রাসুল সা. কে অমান্য করা হয়
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন,
مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ ٭ وَ مَا نَهٰىکُمۡ
عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।
( সুরা হাশর-আয়াত ৭ )
আল্লামা ইবনে মাজিশুন রহ. বলেন, আমি মালিক রহ . কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে নতুন কিছু শুরু করে এবং তার মধ্যে মঙ্গল দেখে, সে মুহাম্মদ সা. এর ওপর এ ধারণা করল যে তিনি তাঁর রিসালতের দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করেননি। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।’ সুতরাং সে সময় যেসব বিষয় দ্বিনের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তা আজও দ্বিনের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
( ফাতহুল কুবিল মাতিন : ১/৮৬ )
৫. বিদয়াতকারীকে নাবী সা. লা‘নত করেছেন:
যেমন হাদিসে এসেছে-
عَلِىِّ بْنِ أَبِى طَالِبٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ لَعَن اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ وَلَعَن اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا وَلَعَن
اللهُ مَنْ لَعَن وَالِدَيْهِ وَلَعَن اللهُ مَنْ غَيَّرَ الْمَنَار
আলী বিন আবী ত্বালেব রা. বলেন, নবী সা.বলেছেন, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে।
( মুসলিম,হা-৫২৪০ )
৬. বিদয়াতকারীর তাওবা কবুল হয় না:
বিদয়াতকারী বিদয়াতী কাজ পরিত্যাগ
না করা পর্যন্ত তার তাওবা আল্লাহ কবুল করেন না।
যেমন হাদিসে এসেছে-
عَن
أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِنَّ
اللَّهَ حَجَبَ التَّوْبَةَ عَن كُلِّ صَاحِبِ بِدْعَةٍ حَتَّى يَدَع َبِدْعَتَهُ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূল সা. বলেন,
আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না), যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।
(ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৪২০২,
বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭,
সহীহ তারগীব ৫৪)
বিদয়াত এতো ঘৃণিত কেনো ? :
আমরা জানি সবচেয়ে বড় গোনাহ হল শিরক। কারন শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর একক সত্ত্বকে অস্বীকার করা হয়। অনুরুপভাবে বিদয়াতের মাধ্যমেও নাবী সা. এর রিসালাতকে অস্বীকার করা হয়।
আমল কবুলের দুই শর্ত :
আলেমগন একমত যে, কোনো আমল ও ইবাদত দুটি শর্ত ছাড়া কবুল হয় না।
তা হলো—
এক. ইখলাস তথা নিয়তের বিশুদ্ধতা।
যেমন—হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর।
( সহিহ বুখারি, হাদিস : ১ )
দুই. রাসুলুল্লাহ সা. এর অনুসরণ।
যেমন -
হাদিসে এসেছে
عن عائشة ا؛ قالت: قال رسول الله : “من أحدث في
أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু উদ্ভাবন করল—যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
( বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, আবূ দাউদ ৪৬০৬ )
মুতদের জন্য জীবিতদের করণীয় –
প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মানুষ মারা যাবে এটাই সাভাবিক। মানুষ মারা তার পক্ষে সোয়াব বা গোনাহের কাজ করা সম্ভব হয় না। তবে এমন কিছু সুযোগ রয়েছে যার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তি কবরে সোয়াব পায়, যার বর্ননা ইসলাম দিয়েছে।
সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, মানুষ মৃত্যুর পরও তার আমলনামায় দুই ধরনের আমল অব্যাহত থাকে।
১. মৃতের এমন আমল যা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হতে পারে।
২. এমন আমল যা মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতরা করে থাকে।
মৃতের এমন আমল যা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হতে পারে-
মানুষ মৃত্যুর পরও জীবিত অবস্থায় কৃত আমলের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে।
হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ
عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ : إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ ، أَوْ
عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না। ১- সদকায়ে জারিয়া,২- এমন জ্ঞান রেখে যায়, যা দিয়ে মানুষ উপকৃত হতে থাকে, ৩- এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান মা-বাবার জন্য দুয়া করবে।
[ মুসলিম, আসসাহিহ : ৩১৮৫ ]
যেমন - মসজিদ, মাদরাসা বা কোনো দীনি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে যাওয়া। অথবা জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ করে যাওয়া, যার উপকার মানুষ তার মৃত্যুর পরও ভোগ করতে পারে অথবা এমন সন্তান রেখে যাওয়া, যারা মৃত্যুর পরও তাদের বাবা-মা, আত্মীয়ের জন্য দুয়া করতে থাকে। কিংবা সে নেক আমল করতে থাকে, যার সওয়াব মৃতব্যক্তি পেতে থাকবে। অথবা এমন ছাত্র তৈরি করে যাওয়া, যারা শিক্ষাবিস্তারে রত থাকে, এতে শিক্ষক তার সওয়াব পেতে থাকে। কিংবা এমন কোনো দীনি কিতাব রচনা করে যাওয়া, যা পড়ে মানুষ উপকৃত হতে থাকে।
এমন আমল যা মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতরা করে থাকে-
যেমন -
1.মুসলমানদের দুয়া :
কুরআন ও হাদিসের একাধিক জায়গায় মা-বাবার সাথে সব মুমিনের জন্যই দুয়া করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
কুরআনে এসেছে,
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا
الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا
لِّلَّذِينَ آمَنُوا
‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ও আমাদের আগে যারা ইমান এনেছে, তাদের ক্ষমা করো। আর ইমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রেখো না।’
[সুরা হাশর, ৫৯ : ১০
رَبَّنَا اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الۡحِسَابُ
হে আমাদের রব! রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব মুমিনকে ক্ষমা করে দিন।
[ সুরা ইবরাহিম - ৪১ ]
رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا
‘হে আমার রব! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছে।’ [সুরা বনি ইসরাইল, ১৭ : ২৪]
তাছাড়া রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে মৃতদের জন্য দুয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদিসে এসেছে, উসমান ইবনু আফ্ফান রা বলেন, নাবী সা. মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তার জন্য ইমানের ওপর অবিচল ও দৃঢ় থাকার দুয়া কামনা করো, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।’
মৃত ব্যক্তির জন্য যে জানাজার নামায পড়া হয়, সেটি তার জন্য দুয়া করার উদ্দেশ্যেই পড়া হয়। তাছাড়া রাসুল সা: একাধিক হাদিসে কবর যিয়ারত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এসব কিছু প্রমাণ করে, মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের পাঠানো দুয়া ও ইস্তিগফার তার কাছে পৌঁছে এবং এর মাধ্যমে তিনি উপকৃত হন। অন্যথায় তার জন্য জানাযার নামায পড়া তার কবর যিয়ারত করার কোনো অর্থ থাকে না।
2.পিতামাতার জন্য সন্তানের
দোয়া:
এটা কবুল হওয়ার
গ্যারান্টি রয়েছে ।
যেমন হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
ﷺ: « ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَات لاَ شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ المَظْلُومِ،
وَدَعْوَةُ المُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ ». رواه أَبُو داود
والترمذي، وَقَالَ:«حديث حسن » . وليس في رواية أَبي داود: « عَلَى وَلَدِهِ » .
আবূ আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনজনের দোয়া আল্লাহর দরবারে সন্দেহাতিতভাবে কবুল হয় (১)
নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া, (২) মুসাফিরের দোয়া এবং
(৩) ছেলের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।
[আবু দাউদ ১৫৩৬, তিরমিজি ১৯০৫, ৩৪৪৮, ইবন মাজাহ ৩৮৬২, আহমদ ৭৪৫৮, ৮৩৭৫, ৯৮৪০, ১০৩৩০, ১০৩৯২]
3.মৃত ব্যক্তির জন্য দান-সাদকাহ করা:
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন।
তিনি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার
মা মারা গেছেন। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি
তাঁর কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ।
সাদ (রা.) বলেন, “আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম।
( বুখারি, হাদিস : ২৭৫৬ )
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে, আমার
পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি
তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার (গোনাহের) কাফফারা হবে ?
তিনি বললেন, হ্যাঁ।
(মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩০)
আমাদের অবস্থা !!!
একটু ভেবে দেখুন তো !
1.মৃত
ব্যক্তির নামে আমরা যা করছি সেগুলো কি ইসলাম সম্মত ?
2.মৃত ব্যক্তি কেন্দ্রিক দোয়া অনুষ্ঠানের রীতি কি ইসলামে আছে ?
3.পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ কি এধরনের অনুষ্ঠান করেছেন বা করতে বলেছেন ?
4.আমরা কি ইবাদতের পদ্ধতি নিজেরাই তৈরী করবো ?
এসকল প্রশ্নের উত্তর কি ? , হ্যাঁ / না
যদি উত্তর না হয়ে থাকে ,
তাহলে, আপনাকেই বলছি সকল প্রকার যুক্তি-তর্ক ত্যাগ করুন , কে কি করছে বা কে কি বলছে সে দিকে কেয়াল নয় , খেয়াল করুন ইসলাম কি বলেছে সে দিকে।
ইসলাম বহির্ভূত যুক্তি দেখানো কোন মুসলিমের কাজ নয়;
এটা শয়তানের কাজ ।
আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
وَ مَا کَانَ لِمُؤۡمِنٍ وَّ لَا مُؤۡمِنَۃٍ اِذَا قَضَی
اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗۤ اَمۡرًا اَنۡ یَّکُوۡنَ لَهُمُ الۡخِیَرَۃُ مِنۡ
اَمۡرِهِمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًا
مُّبِیۡنًا
আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন বিশ্বাসী পুরুষ কিংবা বিশ্বাসী নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না।[1] কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের অবাধ্য হলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে। ( সুরা আহযাব আয়াত-36 )
সাধারণত সত্যকে আড়াল করার জন্য যুক্তি দেখানো হয়। প্রথম যুক্তি
দেখায় ইবলিশ। যুক্তিতে মুক্তি নেই। আর ইবলিশও তার যুক্তিতে মুক্তি পায়নি, বরং অভিশপ্ত
হয়েছে আজীবনের জন্য। তাই যুক্তি দেখানোর পূর্বে গভীরভাবে চিন্তা করুন আপনার যু্ক্তি
কুরআন সুন্নাহর পক্ষে না বিপক্ষে !?
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا
لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ کَانَ مِنَ الۡجِنِّ فَفَسَقَ عَنۡ
اَمۡرِ رَبِّهٖ ؕ اَفَتَتَّخِذُوۡنَهٗ وَ ذُرِّیَّتَهٗۤ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ
دُوۡنِیۡ وَ هُمۡ لَکُمۡ عَدُوٌّ ؕ بِئۡسَ لِلظّٰلِمِیۡنَ بَدَلًا
আর স্মরণ করুন, আমরা
যখন ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমের প্রতি সিজদা কর, তখন তারা সবাই সিজদা করল ইবলীস ছাড়া; সে ছিল জিন্দের
একজন, সে তার রব-এর আদেশ অমান্য করল। তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে
তাকে এবং তার বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, অথচ তারা
তোমাদের শত্রু। যালেমদের বিনিময় কত নিকৃষ্ট!
( সুরা কাহাফ, আয়াত-৫০ )
আপনার জানা না থাকলে সেটা ভিন্ন কথা, জ্ঞানীদের থেকে জেনে নিতে হবে।
আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
فَسۡـَٔلُوۡۤا اَهۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ
সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জানো।
( সুরা নাহল, আয়াত-৪৩ )
প্রচলিত নিয়মে দোয়া যেমন- মাটি দেয়ার পর সম্মিলিত ভাবে হাত উঠিয়ে দোয়া করা,মৃত্যুর 3/5/7/40 দিন পর বা মৃত ব্যক্তি কেন্দ্রিক দোয়া অনুষ্ঠান করার কোন দৃষ্টান্ত ইসলামী শরীয়তে নেই। কিছু এলাকায় স্ত্রী মারা গেলে স্বামীকে তার কাছে যেতে দেয়া হয় না বা স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে তার নিকট যেতে দেয়া হয় না, যা ইসলাম বিরোধী। এসব ভ্রান্ত আলেমদের তৈরী করা । ইসলামের সাথে এসবের কোন সম্পর্ক নেই।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝদান করুন ।
আমিন
No comments
Post a Comment