ইসলামী সংক্ষীপ্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব-০১ বিষয়ঃ তাওহীদ
১: তাওহীদ অর্থ কি ?
এক করা, একক ও অদ্বিতীয়
সাব্যস্ত করা, একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা।
২. তাওহীদ কয়
প্রকার ও কি কি?
তাওহিদ তিনপ্রকার
যথা
১
তাওহিদুর রুবুবিয়াত
২
তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ
৩
তাওহীদুল আসমা ওয়াস সীফাত
১. তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ অর্থ কি ?
তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ এর অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এমর্মে অকাট্য বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই এককভাবে ইবাদত পাওয়ার যোগ্য, এতে তাঁর কোনো অংশীদার নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا
لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ
“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সহিত এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্র ইবাদত করবে।
( বাইয়্যেনাহ ৫ )
২. তাওহিদুল
রুবুবিয়াত অর্থ কি ?
রুবুবিয়াত তথা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্র
একত্ববাদ অর্থাৎ আমাদেরকে এই অকাট্য বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা এবং পরিচালক; এক্ষেত্রে তার কোনো অংশীদার নেই এবং নেই কোনো সহযোগীও।
মহান আল্লাহ বলেন,
هَلۡ مِنۡ خَٰلِقٍ غَيۡرُ ٱللَّهِ يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ
وَٱلۡأَرۡضِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ
“আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক্ব দান করে? তিনি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কিভাবে (তাঁর তাওহীদ থেকে) ফিরে যাচ্ছ ?
( সুরা ফাতির ৩ )
তিনি আরো বলেন,
إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ
ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ
“নিশ্চয় মহান আল্লাহই একমাত্র রিযিক্বদাতা, মহাশক্তিমান এবং পরাক্রান্ত।
(যারিয়াত ৫৮)
তিনি আরো বলেন,
يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ مِنَ
ٱلسَّمَآءِ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ
“তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সবকিছু পরিচালনা করেন।
( সাজদাহ ৫ )
৩. তাওহীদুল আসমা ওয়াস সীফাত অর্থ কি ?
তাওহীদুল আসমা ওয়াস সীফাত তথা আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহ এবং
গুণাবলীর ক্ষেত্রে একত্ববাদ অর্থাৎ এই বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ্র সুন্দরতম নামসমূহ এবং পরিপূর্ণ গুণাবলী
রয়েছে, যেগুলি কুরআনুল কারীম ও
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
মহান
আল্লাহ বলেন,
وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ
ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ
“আর আল্লাহ্র রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। অতএব, সেগুলির মাধ্যমেই তাঁকে ডাকো।
( আ'রাফ ১৮০ )
এই নামসমূহ এবং গুণাবলীতে কোনোরূপ
পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এগুলির কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে
না, তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে সেগুলির কোনোরূপ
সাদৃশ্য বিধানও করা চলবে না। আমাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ্র মত আর কেউ নেই।
আল্লাহ বলেন,
لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ
“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা ।
( শূরা ১১ )
৪. নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং
এতদুভয়ের মধ্যবর্তী বস্তুসমূহ কে পরিচালনা করেন ?
নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সকল বস্তু একমাত্র আল্লাহই পরিচালনা করেন; এসব পরিচালনার ক্ষেত্রে তার কোনো অংশীদার নেই এবং নেই কোনো সহযোগী।
এরশাদ হচ্ছে,
وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن
ظَهِيرٖ
এতে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহ্র সহযোগীও নয়।
(সাবা ২২)
৫: আপনার রব কে ?
আমার রব হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা
৬: রব অর্থ কি?
রব দ্বারা উদ্দেশ্য, মালিক,
সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা,
নিয়ন্ত্রণকারী, আকৃতিদানকারী ও প্রতিপালনকারী। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কিছুই হয়
না এবং তাঁর অনুমতি ও ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছু সামান্যতম নড়াচড়াও করে না।
৭: আল্লাহ অর্থ কি ?
যাবতীয় ইবাদত এবং উপাসনা
পাওয়ার যোগ্য একমাত্র সত্ত্বা-ই হচ্ছেন আল্লাহ।
৮: আল্লাহ কোথায় ?
আমার প্রভু আল্লাহ উর্ধ্বে, আরশের উপরে আছেন। মহান আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেন,
ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ
“পরম দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন”
( ত্বা-হা ৫ )
(এছাড়া সুরাআরাফ-৫৪,উইনুস-৩,রাদ-২,তহা-৫,ফুরকান-৫৯,হাদীদ-৪ ও সাজদাহ-৪ আয়াতে বর্ণনা রয়েছে। )
সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ্র সত্ত্বার সাথে
সামঞ্জস্যপূর্ণ এমনভাবে তিনি আরশের উপর উঠেছেন; তাঁর আরশের উপর উঠার বিষয়টিকে কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন
করা যাবে না এবং এটির কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে না, তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে এর কোনোরূপ সাদৃশ্য বিধানও করা
চলবে না।
অতএব, আপনি কোনো অবস্থাতেই বলতে পারেন না যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। কেননা সর্বোচ্চে অবস্থান মহান
আল্লাহ্র একটি প্রশংসনীয় বিশেষণ। আর সে কারণেই তো আমরা সেজদাতে বলে থাকি, ‘আমার প্রভু সর্বোচ্চ’। ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, মহান আল্লাহ যমীনে অবতরণ করেন না। যে ব্যক্তি এই আক্বীদা
পোষণ করে যে, আল্লাহ তাঁর কোনো সৃষ্টির
মধ্যে প্রবিষ্ট হন, সে ব্যক্তির কুফরীতে
নিপতিত হওয়ার ব্যাপারেও তাঁরা একমত পোষণ করেছেন। বরং মহান আল্লাহ দুনিয়ার নিকটতম
শেষ আসমানে এমনভাবে অবতরণ করেন,
যেমন
অবতরণ করা তাঁর মহত্ত্বের সাথে মানানসই। রাতের শেষাংশে আল্লাহ শেষ আসমানে অবতরণ
এবং অবস্থানের ধরণ সম্পর্কে কেউ কিছুই জানে না। এই সময় তিনি বলেন,
هَلْ مِنْ دَاعٍ فَأَسْتَجِيبَ لَهُ
কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি ? আমি তার প্রার্থনা মঞ্জুর করব।
( বুখারী ও মুসলিম )
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটির অর্থ কি?
وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ
بَصِيرٞ
“তিনি তোমাদের সাথে আছেন,
তোমরা
যেখানেই থাক”
( হাদীদ- ৪ )
তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। জবাবে বলব, এখানে সবার সঙ্গে থাকার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্র ইলম এবং শক্তি। কারণ তাঁর পবিত্র সত্ত্বা
সর্বোচ্চ আরশে আছে; কিন্তু তাঁর জ্ঞান এবং
শক্তি সবার সাথে আছে। কোনো কিছুই তাঁর শক্তি এবং জানার বাইরে নেই।
কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়াকে অস্বীকার করে বা
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান এই বিশাস করে তাহলে, সে মুসলিম থাকতে পারবে না । ইমাম আবু
হানিফা রহ ও অনুরূপমত প্রকাশ করেছেন। তিনি রহ বলেন
قَالَ ابو حنيفَة من قَالَ لَا اعرف رَبِّي فِي السَّمَاء اَوْ فِي
الأَرْض فقد كفر وَكَذَا من قَالَ إِنَّه على الْعَرْش وَلَا ادري الْعَرْش أَفِي
السَّمَاء اَوْ فِي الأَرْض وَالله تَعَالَى يدعى من اعلى لَا من أَسْفَل لَيْسَ
من وصف الربوبية والألوهية فِي شَيْء وَعَلِيهِ مَا روى فِي الحَدِيث ان رجلا اتى
إِلَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بِأمة سَوْدَاء فَقَالَ وَجب عَليّ عتق
رَقَبَة أفتجزىء هَذِه فَقَالَ لَهَا النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أمؤمنة
أَنْت فَقَالَت نعم فَقَالَ أَيْن الله فَأَشَارَتْ إِلَى السَّمَاء فَقَالَ
اعتقها فَإِنَّهَا مُؤمنَة
الفقه الأبسط (ص: 135)
৯: আপনি কিভাবে আপনার প্রভুকে
চিনেন ?
আল্লাহর
নানা নিদর্শন এবং তাঁর সৃষ্টিসমূহ দেখে আমি তাঁকে চিনি।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ
ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ
“তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত, দিন,
সূর্য
ও চন্দ্র”
( ফুছসালাত ৩৭ )
তাঁর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে
সাত আসমান, সাত যমীন এবং এতদুভয়ের
মধ্যবর্তী সবকিছু অন্যতম।
এরশাদ হচ্ছে,
﴿ إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي
ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ
مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ
رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾ [الاعراف: ٥٤]
“নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর আরোহন করেছেন। তিনি রাতের ভেতর দিনকে প্রবেশ করান এমনভাবে যে, দিন দৌড়ে রাতের পেছনে আসে। তিনি সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন; সেগুলি তাঁর আদেশের অনুগামী। জেনে রেখো, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ বরকতময়।
( আ‘রাফ ৫৪ )
১০: আল্লাহ আপনাকে কেন সৃষ্টি
করেছেন ?
সর্ব প্রকার শির্ক বর্জন করে যাবতীয় ইবাদত কেবলমাত্র তাঁর উদ্দেশ্যে সম্পাদন এবং তাঁর আদিষ্ট বিষয়সমূহের বাস্তবায়ন ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে পরিত্যাগের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্যের জন্যই তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন
وَمَا خَلَقۡتُ
ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ
“শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।
( যারিয়াত ৫৬ )
অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে,
وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِ شَيۡٔٗاۖ
“আর তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না।
( নিসা ৩৬ )
১১: আল্লাহর
নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কোন্টি ?
যে গুনাহ দিয়ে আল্লাহ্র নাফরমানি করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে শিরক। আর যে ব্যক্তি শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে শিরক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন; তার বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই
( মায়েদাহ ৭২ )
আর শিরক হচ্ছে, আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করা, চাই তা হোক কোনো বাদশাহ, কিংবা নবী-রাসূল বা কোনো অলী। আল্লাহ ব্যতীত অথবা আল্লাহর সাথে তাকে ডাকা,
বা
তাকে ভয় করা বা তার উপর ভরসা করা বা তার কাছে কোনো কিছু চাওয়া অথবা অন্য কোনো
ইবাদত তার জন্য সম্পাদন করা।
রাসুল সা
বলেন
‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস‘ঊদ) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
قُلْتُ يَا
رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ قَالَ " أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ
نِدًّا وَهْوَ خَلَقَكَ "
আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ গুনাহ সব হতে বড়? তিনি বললেনঃ কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করা, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।
বুখারী , (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬২)
১২: ইবাদত অর্থ কি ?
আল্লাহ ভালবাসেন এবং
সন্তুষ্ট হন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এমন যাবতীয় কথা ও কাজকে ইবাদত বলে। যেমনঃ দো‘আ
করা। আল্লাহ বলেন,
وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ
لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا
“আর (এই অহিও করা হয়েছে যে,)
মসজিদসমূহ
আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য। অতএব,
তোমরা
আল্লাহ্র সাথে কাউকে ডেকো না”
(সুরা জিন ১৮ )
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য
কাউকে ডাকে সে কাফের।
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন
وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ
إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا حِسَابُهُۥ عِندَ
رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যে ডাকার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই, তার হিসাব তো তার পালনকর্তার কাছেই। নিশ্চয়ই কাফেররা সফলকাম হবে না।
( মুমিনূন ১১৭ )
১৩: দো‘আ কি ইবাদতের
অন্তর্ভুক্ত ?
দো‘আ শুধু ইবাদতের
অন্তর্ভুক্তই নয়, বরং তা গুরুত্বপূর্ণ
ইবাদতসমূহের অন্যতম। মহান আল্লাহ বলেন,
وَقَالَ رَبُّكُمُ
ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي
سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
“আর তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদতের ক্ষেত্রে অহংকার করে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
( গাফির ৬০ )
তাছাড়া হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ
“দো‘আই হচ্ছে ইবাদত”
( তিরমিযী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন )
১৪: আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর
সর্বপ্রথম কোন বিষয়টি ফরয করেছেন ?
আল্লাহ কর্তৃক তাঁর
বান্দার প্রতি ফরযকৃত সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে, আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনা এবং তাগূতকে অস্বীকার করা।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي
كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَ
فَمِنۡهُم مَّنۡ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنۡهُم مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَيۡهِ ٱلضَّلَٰلَةُۚ
فَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং ত্বাগূত থেকে বেঁচে থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়াত করেছেন। পক্ষান্তরে কিছু সংখ্যকের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।
( নাহ্ল ৩৬ )
আর ত্বাগুত হচ্ছে, বান্দা যাকে নিয়ে তার সীমা অতিক্রম করেছে। চাই তা উপাসনার
মাধ্যমে হোক, বা অনুসৃত হওয়ার দিক থেকে
হোক, অথবা আনুগত্যের ক্ষেত্রেই
হোক[1]।
অথবা বলা যায়, আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয়, সে-ই হচ্ছে ত্বাগূত- যদি সে ঐ ইবাদতে রাযী-খুশী থাকে।
[1] অর্থাৎ কোনো কিছুকে তার সীমা অতিক্রম করে স্রষ্টার স্থানে
পৌঁছে দেওয়া। সেটা কয়েকভাবে হতে পারে, সে
বস্তুর ইবাদতের মাধ্যমে, অথবা সেটার অনুসরণের
ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুসরণের কাছে নিয়ে যাওয়া, অথবা সেটার আনুগত্য করার ক্ষেত্রে এমনভাবে আনুগত্য করা যে, সেটা আল্লাহর আনুগত্যের পর্যায়ে চলে যায়।
তবে সে বস্তুটি তাগুত হওয়ার জন্য শর্ত
হচ্ছে সে ঐ ইবাদতে, কিংবা আনুগত্যে অথবা
অনুসরণে রাযী-খুশী থাকা।
১৫: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম কি গৃহীত হবে?
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম গৃহীত হবে না। এর প্রমাণ
আল্লাহর বাণী,
وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ
ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ
ٱلۡخَٰسِرِينَ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে
সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”
( আলে ইমরান ৮৫ )
১৬: ‘আন্তঃধর্মীয় ঐক্য (وحدة الأديان)’ মতবাদ জায়েয
কি ?
উক্ত মতবাদ জায়েয নয়।
কেননা দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ।
মহান আল্লাহ বলেন,
ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ
نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নে'মতসমূহ সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম।
( মায়েদাহ ৩ )
অতএব,
ইসলামের
সাথে অন্য কোনো দ্বীনকে যুক্ত করার কোনোই প্রয়োজন নেই। তাছাড়া মহান আল্লাহ দ্বীন
ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন কস্মিনকালেও গ্রহণ করবেন না।
এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর
বাণী,
وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ
وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
( আলে ইমরান ৮৫ )
তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِى أَحَدٌ مِنْ
هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ
بِالَّذِى أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ
“মুহাম্মাদের জীবন যে সত্ত্বার হাতে, তার কসম করে বলছি, এই উম্মতের যে কেউ ইয়াহূদী হোক বা নাছারা হোক আমার কথা শোনে অথচ আমার রিসালাতের প্রতি ঈমান না আনা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে হবে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত।
( মুসলিম )
১৭: ঈমানের রুকন কয়টি ও কি কি ?
ঈমানের রুকন ৬টি।
সেগুলি হচ্ছে,
১-আল্লাহ্র প্রতি ঈমান,
২-তাঁর ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি ঈমান,
৩-তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান,
৪-তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান,
৫-আখেরাতের প্রতি ঈমান এবং
৬-তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি
ঈমান।
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ
وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ
“ঈমান হচ্ছে, আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
( মুসলিম )
No comments
Post a Comment