ইসলামী অর্থনীতি : সরকারি আয়ের উৎসসমূহ
ইসলামী অর্থনীতি : সরকারি আয়ের উৎসসমূহ
ইসলামী রাষ্ট্রের আয়-ব্যয় আলোচনা ইসলামের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইসলামী সরকারকে সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, বেসরকারি প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ ও সড়ক নির্মাণ কার্যক্রম, সাধারণ স্বাস্থ্য প্রভৃতি খাতে বিরাট ব্যয়ভারের সম্মুখীন হতে হয় এবং তা রীতিমতো বহন করতে হয়। এ দায়িত্বসমূহ যথাযথ পালনের জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ রাষ্ট্রের নিকট মওজুদ একান্ত আবশ্যক।
ইসলামী রাষ্ট্রের আয়ের উৎস :
১. যাকাত : ইসলামী সরকারের আয়ের একটি বিরাট উৎস যাকাত। যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যাকাত ইসলামী রাজস্ব ব্যবস্থার মধ্যমণি। যাবতীয় গৃহপালিত পশু, গরু, উট, ছাগল, মহিষ, নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য ও ফসলাদি থেকে যাকাত সংগৃহীত হয়।
২. খারাজ : ইসলামী সরকারের আয়ের অন্যতম উৎস খারাজ বা ভূমি রাজস্ব।
ইসলামী রাষ্ট্র যে জমি কোনঅমুসলিমকে বন্দোবস্ত দিয়েছে, এমন জমিকে খারাজি জমি বলে। আর এই জমিহতে যে রাজস্ব আদায়করা হয় তাকে খারাজ বলে।
জমির উৎপাদন ক্ষমতা, ফসলের বিভিন্নতা ও সেচ ব্যবস্থা প্রভৃতি উপাদনের ওপর ভিত্তি করে খারাজ নির্ধারিত হয়।
৩. সাদকাতুল ফিতর : এটি ইসলামী সরকারের আয়ের অন্যতম উৎস। খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগে তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আদায় হতো। ঈদুল ফিতরের দিন। ঈদের নামাযের পূর্বেই প্রত্যেক পরিবারের মাথাপিছু ফিতরা আদায় করতে হয়।
ইবন ওমর রা.
বলেন, রাসুলুল্লাহ সা.
সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বাএক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব।
( সহীহ বুখারি হাদিস ১৫১২)
৪. বনজ, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের আয় : ইসলামী রাষ্ট্র দেশে অবস্থিত খনিজ, বনজ ও পানি সম্পদের অধিকারী। এ থেকে যে আয় হবে তা ইসলামী সরকারের সাধারণ উন্নয়ন তহবিলে যাবে।
৫. জিযয়া : ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম জিম্মিদের হতে তাদের জীবন ও সম্পদ এবং মান-ইজ্জত নিরাপত্তার জন্যে যে নির্দিষ্ট কর গ্রহণ করা হয়, তাই জিযয়া। তবে যেসব অমুসলিম দেশরক্ষার কাজে যোগদান করে তাদের জিযয়া দিতে হয় না।
৬. আলফাই : ইসলামী সরকারের আয়ের অন্যতম উৎস হলো আলফাই বা প্রত্যাবৃত সম্পদ। মুসলিম সেনাবাহিনীর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যদি অমুসলিমরা নিজেদের জমিজমা, বাড়িঘর, ধনসম্পদ ফেলে যায় এবং তা কার্যত মুসলমানদের দখলে এসে যায়, এরূপ পদ্ধতিতে লব্ধ সম্পদকে ‘আলফাই’ বলে।
৭. মালে গনীমত : গনীমত শব্দের আভিধানিক অর্থ ধন বা মাল। কিন্তু ব্যবহারিক অর্থে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাপ্ত মালকে (স্থাবর সম্পত্তি) গনীমত বলা হয়। মহানবী সা.-এর সময়ে এটি ছিল ইসলামী সরকারের রাজস্বের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস।
৮. রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প : ইসলামী সরকারের মালিকানাধীন রেলওয়ে, ডাক, তার বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য যে কোনো বৃহদায়ত বা ক্ষুদ্র শিল্প থাকবে, তা থেকে আয়ও এ সরকারের আয়ের এক বিরাট উৎস হিসেবে গণ্য হবে।
৯. দান ও সাহায্য : ইসলামী সরকার সচ্ছল জনগণ এবং বিদেশ থেকে দান বা সাহায্য পেতে পারে। আয়ের এক উল্লেখযোগ্য অংশ এ উৎস থেকে আসতে পারে। তবে এ দান বা সাহায্য ইসলামী মূ্ল্যবোধ বহির্ভূত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শর্ত থেকে মুক্ত হতে হবে।
১০. প্রশাসনিক আয় : ইসলামী সরকার রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার ফি, জরিমানা ইত্যাদি পাবে। এগুলোও ইসলামী সরকারের আয় হিসেবে গণ্য হবে।
১১. কর : কর ইসলামী সরকারের একটি নিয়মিত উৎস। প্রয়োজনমতো ইসলামী সরকার কর আরোপ করতে পারে, কিন্তু জনগণের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
১২. বিবিধ আয়: ব্যবসায়-বাণিজ্য, মুদ্রা প্রচলন, বীমা, কৃষিক্ষেত্রে অংশিদারিত্ব, স্থল, নৌ ও আকাশপথ যানবাহন ব্যবস্থা, ডাকব্যবস্থা, টেলিফোন, টেলিগ্রাম ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমেও ইসলামী সরকার প্রচুর আয় করতে পারে
No comments
Post a Comment