আল্লাহ বান্দার তিনটা কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটা কাজ অপছন্দ করেন !


                                         

 দারসুল হাদিস 


আল্লাহ বান্দার তিনটা কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটা কাজ অপছন্দ করেন !

  

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثًا وَيَكْرَهُ لَكُمْ 

ثَلاَثًا فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُوا

 وَيَكْرَهُ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ

 

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করেন, তা হলঃ ১. তোমরা তারই ইবাদাত করবে, ২. তার সঙ্গে কিছুই শারীক করবে না এবং ৩. তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। আর যে সকল বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেনঃ ১. নিরর্থক কথাবার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা। 

( মুসলিম ইফাবা, হাদিস নং ৪৩৩২, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৩৩ )

আলোচ্য হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম যে , আমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত করবো , তাঁর সাথে কোন কিছু শরিক করবো না এবং সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধরবো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবো না এটাই তিনি  পছন্দ করেন। আর সৃষ্টিজীব হিসেবে আমাদের সে সব কাজ করাই উচিত যা স্রষ্টা পছন্দ করেন।

আর অপ্রয়োজনীয় কথা বলা ও প্রশ্ন করা এবং সম্পদ ব্যয় করাকে তিনি অপছন্দ করেন। 

অতিরিক্ত কথা বলা -  এতে ভুল হওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি থাকে। আর যে ব্যক্তি অতিরিক্ত কথা বলে মানুষেরা তাকে অপছন্দ করে এবং তাকে বাচাল বলে সম্বোধন করে।

হাদিসে এই অভ্যাসকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে-

وَعَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ أنَّه سَمِعَ النَّبيَّ ﷺ يَقُوْلُ إنَّ العَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ فِيهَا يَزِلُّ بِهَا إِلَى النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ المَشْرِقِ وَالمَغْرِبِ  متفق عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবী সা. কে বলতে শুনেছেন যে, মানুষ চিন্তা-ভাবনা না রে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘটে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়।

( বুখারী ৬৪৭৭, মুসলিম ৭৬৭২, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ )

অনর্থক প্রশ্ন করা – বর্তমানে এই বদঅভ্যাসটা সমাজে খুব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় ক্ষেত্রে । অপ্রাসঙ্গিক বা অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করার মাধ্যমে অনেক সময় সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশ্নকারী ও উত্তরদাতা উভয়কে খেয়াল করতে হবে যে, বিষয়টির গুরুত্ব কতটুকু।   অথচ প্রয়োজনীয় প্রশ্ন পূর্ববর্তী উম্মতের ধ্বংসের কারণ ছিল – 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ صَخْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم

 يَقُولُ: "مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَاجْتَنِبُوهُ، وَمَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، فَإِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ مِنْ

 قَبْلِكُمْ كَثْرَةُ مَسَائِلِهِمْ وَاخْتِلَافُهُمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ ".

[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ]

[وَمُسْلِمٌ]

আবূ হুরায়রা আব্দুর রহমান ইবনু সাখর রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ সা.কে বলতে শুনেছি: আমি তোমাদেরকে যেসব বিষয় নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক। আর যেসব বিষয়ে আদেশ করেছি, যথাসম্ভব তা পালন কর। বেশী বেশী প্রশ্ন করা আর নবীদের সথে মতবিরোধ করা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে।

[ বুখারীঃ ৭২৮৮, মুসলিম: ১৩৩৭ ]

সম্পদ বিনষ্ট করা - বলতে অপ্রয়োজনীয় বা অন্যায় পথে সম্পদ ব্যয় করাকে বুঝায়। আল্লাহ তায়ালা কাউকে সম্পদ দিয়ে পরিক্ষা করেন আবার কাউকে সম্পদ না দিয়েও পরিক্ষা করেন । সম্পদশালীকে কিয়ামতের দিন তার সম্পদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে যে, সে কোন পন্থায় সম্পদ অর্জন করেছে এবং কোন পথে ব্যয় করেছে ! –

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ ‏"

ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সা. বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন প্রভুর নিকট থেকে আদম সন্তানের পা সরবে নাঃ জিজ্ঞাসা করা হবে তার বয়স সম্পর্কে, কি কাজে সে তা অতিবাহিত করেছে, তার যৌবন সম্পর্কে কি কাজে সে তা বিনাশ করেছে; তার সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে সে তা অর্জন করেছে আর কি কাজে সে তা ব্যয় করেছে এবং সে যা শিখেছিল তদনুযায়ী কি আমল সে করেছে?

( তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৪১৬ )

তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য সে সকল কাজকে অপছন্দ করেন যা করলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সে সকল কাজ করার তাওফীক দিন যা করলে তিনি খুশি হন এবং সে সকর কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দিন যা তিনি অপছন্দ করেন।

আমীন  

 

 

 

No comments

Powered by Blogger.