ছোট পাপের বড় শাস্তি



ছোট পাপের বড় শাস্তি

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অসতর্কতাবশত এমন কিছু অপরাধ করছি যেগুলো আমাদের দৃষ্টিতে সামান্য মনে হয় ; কিন্তু এর শাস্তি অনেক বড় ৷ এমন কিছু পাপের কথা আলোচনা করবো যা আমাদের কাছে ছোট মনে হলেও তার শাস্তি অনেক বড় ৷

                                    ( 1 ) টাকনুর নিচে কাপড় পড়া 

 পুরুষদের জন্য টাকনুর নিচে প্যান্ট, লুঙ্গী পাজামা ইত্যাদি পরিধান করা মারাত্বক অপরাধ ৷ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ ও বটে ৷ অথচ আমরা একটু সতর্ক হলে এঅপরাধ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি ৷ 
 যেমন হাদিসে এসেছে -
 عن ابي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلي الله عليه وسلم قال ما اسفل من الكعبين من الازار في النار
 অর্থঃ- আবূ হুরায়রাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, রাসূল ( সাঃ )বলেছেন, যে ব্যক্তি পায়ের টাকনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়বে, সে জাহান্নামী ৷
 [ বুখারী, মিশকাত হা/4314; বাংলা 8 ম খন্ড, হা/4125 শিষ্টাচার অধ্যায়৷ ]

 عن ابي هريرة ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قال لا ينظر الله يوم القيامة الي من جر ازاره بطرا 
অর্থঃ- আবূ হুরায়রাহ রাঃ হতে বর্ণিত,রাসূল সাঃ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ঐব্যক্তির প্রতি করুণার দৃষ্টি দিবেন না, যে অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পড়ে ৷
 [ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/4311; বাংলা হা/4122 ]
 লক্ষ্য করুনঃ একটু অসাবধানতার কারণে কত বড় অপরাধ করছি ৷ আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন ৷

                                    ( 2 ) কথা বলায় অসতর্কতা 

বিনা প্রয়োজনে কথা বলা বা খুব বেশি কথা বলা থেকে বিরত থাকা ভালো কারণ কথা বেশি বললে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ৷ বন্ধুদের আড্ডায় বা চায়ের দোকানে বিনা প্রয়োজনের কথা বেশি হয় ৷ তাই কথা বলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেনো তা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ না হয় ৷ 
যেমন হাদিসে এসেছে - 
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول‏:‏ “إن العبد ليتكلم بالكلمة ما يتبين فيها يزل بها إلى النار أبعد مما بين المشرق والمغرب‏‏ ‏(‏‏(‏متفق عليه‏)‏‏)‏‏.‏ ‏ ‏ومعني‏:‏ ‏ ‏يتبين‏ ‏ يتفكر أنها خير أم لا.‏" 
অর্থঃ- আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, “মানুষ চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘ’টে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়।”
 (বুখারী, মুসলিম)
                                       ( 3) মিথ্যা বলা 

 মিথ্যাকে সকল পাপের জননী বলা হয় ৷ মিথ্যাবাদী লোক যে কোন ধরনের অন্যায় করতে দ্বিধাবোধ করে না ৷ আর মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায় ৷
 যেমন হাদিসে এসেছে - 

وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏‏ ‏ إن الصدق يهدي إلى البر، وإن البر يهدي إلى الجنة، وإن الرجل ليصدق حتى يكتب عند الله صديقًا، وإن الكذب يهدي إلى الفجور، وإن الفجور يهدي إلى النار، وإن الرجل ليكذب حتى يكتب عند الله كذابًا‏" 
অর্থঃ-ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের দিকে পথ নির্দেশনা করে। আর মানুষ সত্য কথা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তাকে ‘মহা-সত্যবাদী’ রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদিতা নির্লজ্জতা ও পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তাকে ‘মহা-মিথ্যাবাদী’ রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়।
 (বুখারী ও মুসলিম) 
                                       ( 4 ) গীবত করা 

এই পাপ থেকে খুব কমসংখ্যক লোক নিজেকে বিরত রাখতে ৷ গীবত করা ও শোনা সমান অপরাধ ৷ কোন ব্যক্তির এমন গুণ বর্ণনা করা যা শুনলে সে কষ্টা পায়, লজ্জিত হয়, অপমানবোধ করে, যা প্রকাশ হওয়াকে সে অপছন্দ করে ইত্যাদি ৷ আর এটাই হলো গীবত ৷ গীবত কথা ও ইশারার মাধ্যে হয় ৷
যেমন হাদিসে এসেছে - 

وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ “أتدرون ما الغيبة‏؟‏” قالوا‏:‏ الله ورسوله أعلم قال‏:‏ ‏‏ذكرك أخا بما يكره‏"‏ قيل‏:‏ أفرأيت إن كان في أخي ما أقول‏؟‏ قال‏:‏ ‏"‏إن كان فيه ما تقول، فقد اغتبته، وإن لم يكن فيه ما تقول فقد بهته”‏ 
অর্থঃ- আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।” বলা হল, ‘আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, “তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।
” (মুসলিম) 

وعن عائشة رضي الله عنها‏:‏ قالت قلت للنبي صلى الله عليه وسلم حسبك من صفية كذا وكذا‏.‏ قال بعض الرواة‏:‏ تعني قصيرة، فقال‏: ‏‏لقد قلت كلمة لو مُزجت بماء البحر لمزجته‏!‏‏"‏ قالت‏:‏ وحكيت له إنسانًا فقال‏:‏ “ما أحب أني حكيت إنسانًا وإن لي كذا وكذا”‏.‏ ‏(‏‏(‏رواه أبو داود والترمذي وقال حديث حسن صحيح‏.‏‏)‏‏)‏ ومعني‏:‏ ‏"‏مزجته‏"‏ خالطته مخالطة يتغير بها طعمه، أو ريحه لشدة نتنها وقبحها، وهذا الحديث من أبلغ الزواجر عن الغيبة، قال الله تعالى‏:‏ ‏{‏وما ينطق عن الهوى، إن هو إلا وحي يوحى‏}‏‏.‏" 
অর্থঃ- আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!” আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্তি হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।
” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ) 

مَزَجَته এর ভাবার্থ হল, তার সাংঘাতিক দুর্গন্ধ ও নিকৃষ্টতার কারণে সমুদ্রের পানিতে মিশে তার স্বাদ অথবা গন্ধ পরিবর্তন করে দেয়। এই উপমাটি গীবত নিষিদ্ধ হওয়া ও তা থেকে সতর্কীকরণের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও পরিণত বাক্য। 
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 

وما ينطق عن الهوى، إن هو إلا وحي يوحى ﴾ (النجم : ٣، ٤) 
অর্থাৎ (আমার নবী) মনগড়া কথা বলে না, (সে যা কিছু বলে) তা প্রত্যাদেশ-কৃত ওহী ব্যতীত আর কিছুই নয়।
 (সূরা নাজম ৩-৪ আয়াত) 

                       ( 5 ) পেশাব থেকে অসতর্ক ব্যক্তি

যেসব পাপে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে পেশাব থেকে সত্র্ক না থাকা তার অন্যতম ৷ এটার জন্য কবরে গুরুতর শাস্তি হবে ৷ দাড়িয়ে পেশাব করা সুন্নাহ বিরোধী কাজ এবং শরীরে বা পোষাকে পেশাবের ছিটা লাগার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে ৷ তাই এব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ৷ 
যেমন হাদিসে এসেছে -

 وعن ابن عباس رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مر بقبرين فقال‏:‏ “إنهما يعذابان ، وما يعذبان في كبير‏!‏ بلى إنه 
كبير‏:‏ أما أحدهما ، فكان يمشي بالنميمة، وأما الآخر فكان لا يستتر من بوله ‏(‏‏(‏متفق عليه وهذا لفظ إحدى روايات البخاري‏)‏‏)‏‏.‏ قال العلماء‏:‏ معنى ‏ ‏وما يعذبان في كبير‏" ‏ أي كبير في زعمهما وقيل‏:‏ كبير تركه عليهما‏‏ 
অর্থঃ- ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটো কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, ‘‘ঐ দুই কবর-বাসীর আযাব হচ্ছে। অবশ্য ওদেরকে কোন বড় ধরনের অপরাধ [বা কোন কঠিন কাজের] জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না।’’ [তারপর বললেন,] ‘‘হ্যাঁ, অপরাধ তো বড়ই ছিল। ওদের একজন [লোকের] চুগলী করে বেড়াত। আর অপরজন পেশাবের ছিটা থেকে বাঁচত না।
’’ (বুখারী) 

‘ওদেরকে কোন বড় ধরনের অপরাধের জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না’-এর ব্যাখ্যায় উলামাগণ বলেন, এর মানে তাদের দু’জনের ধারণা অনুপাতে তা বড় অপরাধ ছিল না। 
কারো মতে, এমন অপরাধ ছিল না, যা ত্যাগ করা তাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। 
এমন অনেক অপরাধ রয়েছে যেগুলো আমরা অপরাধ মনে করি না, বা কখনো ভেবেও দেখি না ৷ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ছোট বড় সকল প্রকার পাপ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দিন ৷
 আমীন।
written by 
H.M.Huzzatullah 

   hmhuzzatullah2019@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.